ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

চি ঠি প ত্র

হারিয়ে যাচ্ছে হাতি

সাকী মাহবুব
হারিয়ে যাচ্ছে হাতি

প্রকৃতির বিশাল আকৃতির এক শান্ত প্রাণী হাতি। কখনও তার গর্জনে কেঁপে ওঠে বনভূমি, আবার কখনও তার করুণ চাহনিতে জেগে ওঠে সহমর্মিতা। হাজার বছরের ইতিহাসে হাতি মানুষের সঙ্গী হয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে, রাজকীয় শোভাযাত্রায়, ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় এবং চাষাবাদে। অথচ আজ সেই মহাপ্রাণী হারিয়ে যাচ্ছে নিঃশব্দে, নিঃসঙ্গভাবে। একসময় ভারত উপমহাদেশে প্রচুর হাতি দেখা যেত। বাংলাদেশেও হাতি ছিল অরণ্যের রাজা। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট অঞ্চলের বনভূমিতে ছিল হাতির অবাধ বিচরণ। অথচ এখন বাংলাদেশে বন্য হাতির সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র ২৬৮টির মতো (বিভিন্ন পরিবেশ সংগঠনের হিসাব অনুযায়ী)। এরমধ্যে অধিকাংশই রয়েছে সংকুচিত আবাসে, খাদ্য সংকটে, এবং মানুষের আক্রমণের মুখে। বন উজাড় ও পাহাড় কাটার ফলে হাতির চিরচেনা চলার পথ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক খাবারের অভাবে হাতি মানুষের খেত খামারে হানা দিচ্ছে, ফলে সংঘর্ষ বাড়ছে। প্রতিশোধ নিতে গিয়ে অনেক সময় স্থানীয়রা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করে বা গুলি করে হাতি হত্যা করছে। হাতির মূল্যবান দাঁতের জন্য হাতি হত্যা ও পাচার এখনও বন্ধ হয়নি। বিশ্বে এশিয়ান হাতির সংখ্যা এখন প্রায় ৫০,০০০ এবং আফ্রিকান হাতি রয়েছে প্রায় ৪ লাখ। জাতিসংঘের পরিবেশ সংস্থা (UNEP) এবং IUCN এই হাতিগুলোকে বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় রেখেছে। ১৯৮৯ সালে হাতির দাঁত বিক্রি নিষিদ্ধ করা হলেও অবৈধ ব্যবসা এখনও চলছে গোপনে।

বাংলাদেশ সরকার হাতি সংরক্ষণের জন্য ‘বন্য হাতি ব্যবস্থাপনা কর্মপরিকল্পনা (২০১৮-২০২৭) গ্রহণ করেছে। এছাড়াও, কয়েকটি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংগঠন হাতি নিয়ে কাজ করছে যেমন: IUCN Bangladesh,WildTeam,Forest Department তবে সাফল্য এখনো খুব সীমিত। হাতির জন্য সংরক্ষিত করিডোর (চলাচলের পথ) নির্ধারণ করতে হবে বনাঞ্চল পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ জরুরি। জনগণকে সচেতন করতে হবে যে হাতি কোনো শত্রু নয়, বরং পরিবেশের বন্ধু। আন্তর্জাতিকভাবে চোরা শিকার ও দাঁতের বাজার নির্মূল করতে হবে। হাতি শুধু এক জীব নয়, এটি শক্তি, ধৈর্য আর পরিবেশের ভারসাম্যের প্রতীক। হাতি হারিয়ে গেলে প্রকৃতির এক মহাবিভ্রাট ঘটবে। শিশুদের ছবির বইয়ে নয়, বাস্তবেও যেন তারা হাতিকে দেখতে পারে সেই চেষ্টাই হোক আমাদের।

সহকারি শিক্ষক

নাদির হোসেন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়

গ্রাম+পোস্ট : কশবামাজাইল

পাংশা, রাজবাড়ী

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত