প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫
ইসলামে একজন মোমিনের জীবনকে সফল ও স্থির করার মূল ভিত্তি চারটি- শক্তি, চেষ্টা, ধৈর্য এবং আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা। কোরআন ও হাদিসে বারবার এই বিষয়গুলোর গুরুত্ব উল্লেখ করা হয়েছে। একজন মোমিন শুধু নিজের কল্যাণের জন্য নয়, সমাজের কল্যাণে অবদান রাখার জন্যও শক্তিশালী হওয়া উচিত।
শক্তিশালী মোমিনের মানে, শক্তিশালী মোমিন মানে শুধু শারীরিক শক্তিশালী হওয়া নয়। এটি মানসিক দৃঢ়তা, সাহস, দায়িত্ববোধ এবং ঈমানের দৃঢ়তা প্রকাশ করে। বিপদ বা প্রতিকূলতার সময় সে হাল ছাড়ে না, বরং সাহসের সঙ্গে সমস্যার মোকাবিলা করে। কোরআনে আল্লাহ বলেন : ‘অহংকার করো না; যারা দৃঢ়চিত্ত ও সাহসী, আল্লাহ তাদের সাহায্য করেন।’ (সূরা আনফাল : ৬৫)। একজন শক্তিশালী মোমিন নিজের ব্যক্তিগত জীবনের পাশাপাশি সমাজের কল্যাণেও অবদান রাখে। তার জীবন শুধু নিজের জন্য নয়, অন্যের জন্যও অনুপ্রেরণার উৎস হয়।
চেষ্টা ও পরিশ্রমের গুরুত্ব : শক্তিশালী মোমিন হওয়ার পথে চেষ্টা অপরিহার্য। এটি শুধু শুরু করা নয়, ধারাবাহিক পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং লক্ষ্য অর্জনের জন্য ধৈর্য ধারণকেও বোঝায়। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘কাজ করো। আল্লাহ তোমাদের চেষ্টা অমূল্য হিসেবে গ্রহণ করবেন।’ (সূরা আল-মুজাদালাহ: ১১)।
উদাহরণস্বরূপ, একজন শিক্ষার্থী ভালো ফলাফল পেতে চাইলে নিয়মিত অধ্যবসায় ও পরিশ্রমের পাশাপাশি আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করবে। একইভাবে, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ধারাবাহিক চেষ্টা মোমিনকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যায়।
আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা ও ধৈর্য, ধৈর্য একজন মোমিনকে বিপদে স্থির রাখে এবং সমস্যার সমাধানের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘সত্যিই, আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন।’ (সূরা বাকারাহ: ১৫৩)। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শক্তিশালী মোমিন দুর্বল মোমিনের চেয়ে উত্তম এবং আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। যা তোমার উপকারে আসে, তাতে চেষ্টা করো, আল্লাহর সাহায্য চাও, এবং দুর্বল হওও না।
বিপদ এলে বলো না ‘যদি আমি এমন করতাম, তাহলে এমন হতো’, বরং বলো ‘এটা আল্লাহর কদর, তিনিই যা ইচ্ছে করেন তাই করেন।’ (সহীহ বুখারী: ১৪২ / ৬০৩৫)। এই নির্দেশনা আমাদের শেখায় যে শক্তি, চেষ্টা ও ধৈর্য একসঙ্গে থাকলে একজন মোমিন আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে।
অতীতে আফসোস নয়, তাকদিরে বিশ্বাস : একজন মোমিনকে অতীতে আফসোস বা অনুতাপে সময় নষ্ট করা উচিত নয়।
কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘অতীতের বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ো না; আল্লাহ যা করেন তা সর্বোচ্চ সুবিচার।’ (সূরা কাহফ: ২৩-২৪)। তাকদিরে বিশ্বাস রাখলে মন শান্ত থাকে এবং বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য কার্যকর প্রচেষ্টা সম্ভব হয়। এটি হতাশা দূর করে এবং বিপদ মোকাবিলায় দৃঢ়তা যোগ করে।
মোমিনের চারটি মূলভিত্তি একসঙ্গে : শক্তি, চেষ্টা, ধৈর্য এবং আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা- এই চারটি গুণ একত্রিত হলে একজন মোমিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্থিরতা, সফলতা এবং মানসিক শান্তি অর্জন করতে পারে। শক্তিশালী হওয়া মানে শুধু শারীরিক শক্তি নয়, বরং মানসিক দৃঢ়তা, সাহস, ইচ্ছাশক্তি ও ঈমানের শক্তি প্রকাশ করা।
পরিশ্রম এবং ধৈর্য দিয়ে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করলে একজন মোমিন শুধু আল্লাহর কাছে প্রিয় নয়, সমাজের জন্যও অনন্য উদাহরণ স্থাপন করে। অতীতে আফসোস না করে তাকদিরে বিশ্বাস রাখলে মন শান্ত থাকে এবং কার্যকর প্রচেষ্টা সম্ভব হয়।
কোরআন ও হাদিসের আলোকে এগুলো অনুসরণ করলে ঈমান ও কর্মের মধ্যে সামঞ্জস্য সৃষ্টি হয় এবং আল্লাহর কৃপা অর্জন করা সহজ হয়। শক্তিশালী মোমিন হলো- সেই ব্যক্তি, যিনি নিজের কল্যাণের পাশাপাশি সমাজের কল্যাণেও অবদান রাখে এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য নিরন্তর চেষ্টা করে।
ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
ইসলামবিষয়ক প্রবন্ধকার, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি