প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
সম্প্রতি সিআইডির তদন্তে বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে রপ্তানি বাণিজ্যের আড়ালে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের যে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে, তা দেশের আর্থিক খাতের জন্য এক ভয়াবহ অশনিসংকেত। পণ্য রপ্তানি করে নির্ধারিত সময়ে সেই অর্থ দেশে ফেরত না এনে বিদেশে সম্পদ গড়ার এ প্রবণতা কেবল একটি আইনি অপরাধই নয়, বরং এটি দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ডে সরাসরি আঘাত।
গত বৃহস্পতিবার এক খবরে প্রকাশ-ক্ষমতাচ্যুত সরকারপ্রধানের উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমান ২০২০-২৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে রপ্তানির আড়ালে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে না এনে বিদেশে ভোগবিলাসে ব্যয় করেছেন।
দেশের সাধারণ মানুষ যখন ডলার সংকটে বিপর্যস্ত, নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা, তখন মুষ্টিমেয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির এমন লুটপাট রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে কীভাবে দেশের সম্পদ কুক্ষিগত করা যায়, এ ঘটনা তার একটি নিকৃষ্ট উদাহরণ।
এ পরিস্থিতিতে নীতিনির্ধারক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আমাদের সুনির্দিষ্ট পরামর্শ হচ্ছে-প্রথমত, আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। সিআইডি যে ১৭টি মামলায় চার্জশিট দাখিল করেছে, তার বিচার প্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ অপরাধীরা যত প্রভাবশালীই হোক, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়- এই বার্তাটি স্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত করা জরুরি। দ্বিতীয়ত, কেবল শাস্তিই যথেষ্ট নয়, পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনাই হলো মূল চ্যালেঞ্জ। সরকারকে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তা নিয়ে এই অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বাজেয়াপ্ত করতে হবে অপরাধীদের দেশীয় সম্পদও। তৃতীয়ত, ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেজন্য মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। রপ্তানি আয় দেশে আসার ক্ষেত্রে সময়সীমা ও প্রক্রিয়াগুলোর ওপর কড়া নজরদারি প্রয়োজন। জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করতে হবে। এ কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখা জরুরি।
ব্যবসায়ীদেরও মনে রাখতে হবে, ব্যবসা কেবল মুনাফার জন্য নয়, দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্যও। অসৎ উপায়ে অর্জিত সম্পদ শেষ পর্যন্ত কারও জন্যই সুফল বয়ে আনে না। রাষ্ট্র ও নাগরিক- সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও দুর্নীতিমুক্ত আর্থিক খাত গড়ে উঠবে, এটাই প্রত্যাশা।