নব্বই দশকের শুরুতে পেশাগতভাবে বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী রবি চৌধুরীর গায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু হয়েছিল। তবে স্টেজ শোতে তার প্রথম পেশাগতভাবে যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৮ সালের বন্যার সময়। সেই সময় চট্টগ্রামে নিয়মিত গান গাইতেন তিনি। বন্যার সময়েই তিনি জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ অ্যাম্বাসিতে আয়োজিত শোতে (টিকিটের বিনিময়ে) সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন রবি চৌধুরী। তবে শোয়ের প্রথম দিন তাকে স্টেজ-এ গান গাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়নি। কিন্তু দ্বিতীয় দিন তার গান গাইবার সুযোগ এলে। প্রথমে তিনি ‘বিয়ে করতে উকিল লাগে, নৌকায় লাগে মাঝি, প্রেম করিতে দুইজন লাগে, যার লগে যে রাজি’। প্রথম গান পরিবেশন করেই দর্শকের মধ্যে সাড়া ফেলেন রবি চৌধুরী। এরপর সেই সময়ে মুজিব পরদেশীর কণ্ঠে দারুণ জনপ্রিয়তা পাওয়া গান ‘কী স্বপন দেইখা আইলাম ভবে’ দয়াল ভবের মায়ার রইলাম ডুবে’ গানটি পরিবেশন করার পর হৈচৈ পড়ে যায় সবার মধ্যে।, বিটিভিতে রবি চৌধুরী প্রথম রায়হান গফুরের উপস্থাপনায় ‘অন্তরঙ্গ’ অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এর প্রযোজক ছিলেন লুৎফর রহমান। সেই যে ১৯৮৮ সাল থেকে স্টেজ শোতে সঙ্গীত পরিবেশন করা শুরু হলো সর্বশেষ গত পহেলা বৈশাখে ঢাকার রমনার বটমূলে এবং তার কয়েকদিন পর চীন মৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্রে সঙ্গীত পরিবেশন করেন রবি চৌধুরী। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রায় সব জেলায় এবং পাশাপাশি বিভিন্ন উপজেলাতেও সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন রবি চৌধুরী। দেশের বাইরে বিশেষত যদি উল্লেখ করতে হয় তাহলে দুবাইতেই তিনি এখন পর্যন্ত ২৫ বারেরও বেশি স্টেজ শোতে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন।
এছাড়াও আমেরিকা, কানাডা, লন্ডন, প্যারিস, বেলজিয়াম, মায়ানমার, কাতার, বাহরাইন, কুয়েত, ভারত, মালয়েশিয়া, কোরিয়া, জাপানসহ বিশ্বের আরও বহুদেশে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন রবি চৌধুরী। এখন এমনও হচ্ছে যে উল্লেখিত দেশগুলোতে শো’তে তার শোয়ের রিপিটও হচ্ছে। রবি চৌধুরী বলেন, ‘আমার সঙ্গীত জীবনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিনিয়ত দেশে বিদেশে কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছি। যে কোনো পুরস্কারের চেয়ে এই ভালোবাসাটাই খাঁটি। মানুষের ভালোবাসার মাঝেই কিন্তু শিল্পী বেঁচে থাকে। আমি আমার গানের সব ভক্ত দর্শক শ্রোতাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। শ্রোতা দর্শকের জন্য এখনও নতুন নতুন গান করে যাচ্ছি, প্রতিনিয়ত স্টেজ শোতে গান করছি। সবার কাছে দোয়া চাই আল্লাহ যেন আমাকে সুস্থ রাখেন ভালো রাাখেন।’ চট্টগ্রামের কবির আহমেদ চৌধুরী (মরহুম) ও লায়লা কবির দম্পতির সন্তান রবি চৌধুরী। তার প্রথম একক গানের অ্যালবাম ‘প্রেম দাও’ প্রকাশিত হয় ১৯৯০ সালের ২৮ মার্চ। সেদিন ছিল রোজার ঈদ। প্রথম অ্যালবাম দিয়েই সারা দেশব্যাপী ব্যাপক সাড়া জাগান তিনি। এই অ্যালবামের সবগুলো গান সেই সময় শ্রোতাদের মনে সাড়া ফেলেছিল। রবি চৌধুরী প্রথম প্লে-ব্যাক (সিনেমায় গান করা) করেন নাদিম মাহমুদ পরিচালিত ‘আন্দোলন’ সিনেমায়। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের কথা ও সুরে ‘মরেছি মরেছি প্রেমে যে পড়েছি’ গানটি গেয়েছিলেন তিনি। পর্দায় গানটিতে লিপসিং করেছিলেন নায়ক বাপ্পারাজ। গানে রবি চৌধুরীর প্রথম হাতেখড়ি হয় চট্টগ্রাম বেতারের শিল্পী, দক্ষিণাঞ্চলের আঞ্চলিক গানের সম্রাট আহমেদ কবির আজাদের কাছে। এরপর কক্সবাজারে সঙ্গীতায়নে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আবু বকর সিদ্দিকের কাছে উচ্চাঙ্গী সঙ্গীতে তালিম নেন। এই প্রতিষ্ঠানেই তিনি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। এরপর ঢাকায় এসে মরহুম খন্দকার নুরুল আলমের কাছে দুই বছর গানে তালিম নেন।