ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

অল্প সংস্কারে নির্বাচন চায় বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল

অল্প সংস্কারে নির্বাচন চায় বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল

বাংলাদেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল অল্প কিছু সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দাবি জানিয়েছে। তারা জানিয়েছে ভোটের পর নির্বাচিত সরকার দেশের সব বড় বড় সংস্কার করবে। এ কারণে বর্তমান সরকার দ্রুত ভোট দিবে এমন প্রত্যাশা সবার। অন্যদিকে সংস্কার করতে সরকারের প্রধান বাধা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বলে মনে করছে জাতীয় নাগরিক কমিটি।

এসব বিষয়ে লেখক ও চিন্তাবিদ অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, আমাদের দেশে বহু ধরনের রাজনৈতিক দল রয়েছে। সময়ের প্রয়োজনে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস, নিখিল ভারত মুসলিম লীগ, আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ বড় বড় রাজনৈতিক দলের সৃষ্টি হয়েছে। ২৪ সালের যারা সুসংগঠিত আন্দোলন করছে, তারা যদি রাজনৈতিক দল গঠন করতে চায় তাহলে কেউ বাধা দিতে পারবে না।

তিনি বলেন, দেশ যদি রাজনীতির ভিত্তিতে চলে তাহলে রাজনৈতিক দল অপরিহার্য। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দল ছাড়া চলে না। অথচ তরুণদের রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে বিদ্যমান দলগুলোর মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। তারা মনে করেন, তরুণরা যদি দল করে তাহলে আমাদের কী হবে? সত্যিকার অর্থে আমাদের রাজনৈতিক দল প্রয়োজন। তারা ক্ষমতাসীন দলের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে।

অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ২০২৪ সালের ৩৬ জুলাই গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিল। শুধু দেশ নয়, বিদেশি সংস্থাগুলোও ব্যর্থ হয়েছিল। দেশের জনগণ ঐকবদ্ধ হলে কী করতে পারে তা আন্দোলনের মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মানুষ যেনো নিজেদের ভোটার অধিকার প্রয়োগ করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। জণগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। মানুষে মানুষে বৈষম্য দূর করতে হবে, শোষণ নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে, সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সব ধরনের হত্যা, গুম, খুন বন্ধ করতে হবে। কারণ এগুলো বৃদ্ধির কারণে রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল।

তিনি আরো বলেন, আজ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র করা হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কেন ঘোষণাপত্র হবে না? অবশ্যই ঘোষণাপত্র হওয়া উচিত।

নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা শেখ হাসিনা ও তার দোসররা নষ্ট করে দিয়েছে। এই সেক্টরে প্রয়োজন সংস্কার। যদি সংস্কার না করা হয় তাহলে আগামীতে আরো০ খারাপের দিকে যাবে। আশা করি, সরকার এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

সংস্কার করতে উপদেষ্টারা ভয় পাচ্ছেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংস্কার না করতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সরকারকে প্রেসারে রাখছে। তারা বিভিন্ন কাজে বাধা দিচ্ছে। আমরা বলেছিলাম, রাষ্ট্রপতির অপসারণ করতে হবে। সংবিধান বাতিল করতে হবে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো বাধা দিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত এ জায়গা থেকে সরে আসবে?

এদিকে সংস্কার ও নির্বাচনের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা বারবার বলছি, সংস্কার ও নির্বাচনের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। সংস্কার চলবে, নির্বাচন হবে। নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে যে দল সরকারে আসবে তারা সংস্কারগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। অতি অল্প সময়ে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, অতি অল্প সময়ে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যাতে গণতন্ত্রে ফিরে যেতে পারি, সেই ব্যবস্থা করা হোক। আমাদের দলের পক্ষ থেকে পরিষ্কার করে বলতে পারি, প্রতিটি সংস্কারকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত চারটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে বিএনপি কোনো মন্তব্য করতে চায় না বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। রিপোর্টগুলো হাতে পাওয়ার পর সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা করবে। তারপরই সিদ্ধান্ত হবে। ঐকমত্য ছাড়া কোনোটিই গ্রহণযোগ্য হবে না।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, এখন বিতর্ক তৈরি হয়েছে আগে সংস্কার না আগে নির্বাচন। এটা একটা ফালতু বিতর্ক। মানব সভ্যতার যাত্রা যখন থেকে, তখন থেকে সংস্কার শুরু।

সরকারের উদ্দেশ্যে মান্না বলেন, আপনি প্রেসিডেন্ট বদলাতে চেয়েছেন, বিএনপি গিয়ে বলেছে সংবিধানের বাইরে গিয়ে এটা আপনি করতে পারেন না। আপনারা করতে পারেননি তো। এখন পর্যন্ত বিএনপি যে যে ব্যাপারে আপত্তি করেছে সরকার সেই ব্যাপারে কোনো কাজ করতে পেরেছে? অথচ একেকটা বাসস্ট্যান্ড দখল হয়ে গিয়েছে, একেকটা বিশ্ববিদ্যালয় দখল হয়ে গিয়েছে, সমস্ত শিক্ষাব্যবস্থা দখল হয়ে গিয়েছে; কিন্তু সরকার তো কিছুই করতে পারেনি। তার মানে কী সরকারের কোনো ক্ষমতা নেই? ড. ইউনূস বা এই সরকারের বোঝা উচিত ছিল দে আর দ্যা গভর্মেন্ট। তাদের কথা না শুনে আমাদের উপায় নেই।

তিনি বলেন, পৃথিবী থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নের কর্তৃত্ব চলে গেছে, সারা পৃথিবী এখন আমেরিকার কর্তৃত্বে। আওয়ামী লীগ চলে গেছে এখন রাজনৈতিক কর্তৃত্ব হচ্ছে বিএনপির হাতে।

ভালো লাগুক খারাপ লাগুক, আপনার হাটটা সে দখল করছে, আপনার বাসস্ট্যান্ড সে দখল করেছে। যেখানে যেখানে সম্ভব চাঁদাবাজি করেছে। এই যে সরকার আছে, তার কাছে কমপ্লেইন করতে পারছেন? কমপ্লেইন করলে সে (সরকার) শুনছে? কোনো জায়গায় আপনার রিকোয়েস্ট থাকছে না। কিন্তু ওরা (বিএনপি) যখন বলছে তখন থাকছে। আর অফিসার-পুলিশরা দেখছে; তারা ভাবছে যখন বিএনপি ভোটে জিতবে তখন তো আমাদের চাকরি থাকবে না। তাই সবাই তাদের (বিএনপি) কথা শুনছে। যদি এ রকমই হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার সামনে বড় দ্বায়িত্ব আছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত ছয়টি কমিশনের মেয়াদ আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত পৃথক ছয়টি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

কমিশনগুলো হলো নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ও সংবিধান সংস্কার কমিশন।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

এজন্য মোট গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ছয়টি কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর ৬ অক্টোবর সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছিল। ৩ অক্টোবর অন্য পাঁচটি সংস্কার কমিশন গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সবগুলো কমিশনকে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৯০ দিন সময় দেয়া হয়েছিল। সেই হিসেবে সংবিধান সংস্কার কমিশন ছাড়া সবগুলো কমিশনের মেয়াদ ২ জানুয়ারি শেষ হয়। সংবিধান সংস্কার কমিশনের মেয়াদ শেষ হয় ৪ জানুয়ারি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত