ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

এ বছর হচ্ছে না ভোট

এ বছর হচ্ছে না ভোট

সংস্কারের প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে চলতি বছর ও আগামী বছরের শুরুতে সংসদ ভোট দেয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। কারণ, আইন অনুযায়ী ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ ও নির্বাচনি আইন সংস্কার করতে লাগবে দীর্ঘ সময়। তবে সেই দীর্ঘ সময় কত দিন, তা এখনই কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না। তাহলে কবে ভোট হচ্ছে এমন প্রশ্ন এখন মানুষের মুখে মুখে।

সূত্র জানায়, সংস্কারের প্রয়োজনীয় কাজ কবে সম্পন্ন হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও নির্বাচন কমিশন (ইসি) আগামী বছরের প্রথমার্ধেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ভাবছে এবং সেই লক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ওই সময়ে নির্বাচন করা কঠিন হবে বলেও জানিয়েছে সূত্রটি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা বা অন্তর্বর্তী সরকার যখন চাইবে, তখনই নির্বাচন করতে প্রস্তুত ইসি। তিনি আরো বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের যে ইনডিকেশন দিয়েছেন, সেটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আমাদের যারা স্টেকহোল্ডার, রাজনৈতিক দল, তারাও সংসদ নির্বাচনের কথা বলেছে। তারা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলেছে। কাজেই আমরা সংসদ নির্বাচনের কথা ভাবছি।

সূত্রমতে, রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাব চূড়ান্ত করতে অন্তর্বর্তী সরকার আরো সময় নিতে চায়। বুঝে নিতে চায় রাজনৈতিক দলগুলোর মনোভাবও। এছাড়া বিভিন্ন পেশাজীবীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোও বিবেচনায় নিয়ে এগোতে চায় সরকার। এ কারণেই গঠিত কমিশনগুলো রিপোর্ট দেয়ার নির্ধারিত সময় বাড়িয়ে নিলে সরকার সম্মত জানাচ্ছে।

এদিকে, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে আলোচনার মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বিষয়টি জনগণের ওপর ছেড়ে দেয়ার কথা বলেছেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশের জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা ছোট পরিসরে না কি দীর্ঘমেয়াদে সংস্কার চায়। সে অনুযায়ী নির্বাচন দেয়া হবে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে জনগণ অধিক সংস্কার চাইলে নির্বাচনে আরো বিলম্ব হতে পারে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, সংস্কার বিলম্ব হওয়ার কোনো কারণ নেই। সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার যতটুকু সময় প্রয়োজনীয় ততটুকু নেবে। আর এই প্রয়োজনীয় সময়টাকে বিলম্ব ভাবাটা উচিত নয়। তবে অন্তর্বর্তী সরকার প্রয়োজনীয় সময়ের একদিন বেশিও থাকতে চায় না।

নির্বাচন কমিশন বাড়ি বাড়ি গিয়ে সম্ভাব্য নতুন ভোটার এবং বাদ পড়াদের তথ্য সংগ্রহের সময়ও এগিয়ে এনেছে। নির্বাচন কমিশন থেকে আগে বলা হয়েছিল, ২০২৫ সালের ২ মার্চের পর থেকে ভোটার তালিকা হালনাগাদে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ এবং ২০২৬ সালের ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। গত ২ ডিসেম্বর নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের এই পরিকল্পনার কথা জানান। কিন্তু সে পরিকল্পনা পাল্টে গত ২০ জানুয়ারি থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু করেছে ইসি। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি বছরই জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাবনা থেকে নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করে রাখতে চায়।

তবে নির্বাচন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন পূর্ণাঙ্গ সংস্কার প্রস্তাব এখনো দেয়নি। সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাজের সময়ও বাড়ানো হয়েছে। নির্বাচনের আগে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়িত হবে, সেটিও অনিশ্চিত। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশনও প্রস্তুতিমূলক সব কাজ এখনই শুরু করতে পারছে না।

ভোটার তালিকা হালনাগাদ ছাড়াও জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে নির্বাচন কমিশনের যেসব প্রস্তুতিমূলক কাজ রয়েছে, সেগুলো হচ্ছে নির্বাচনি আইনের সংস্কার, সীমানা পুনর্নির্ধারণ, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল তৈরি, পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন এবং সাংবাদিক নীতিমালা হালনাগাদ করা, নির্বাচনী মালপত্র সংগ্রহ এবং নির্বাচনে ব্যবহৃত বিভিন্ন ফরম, প্যাকেট, ম্যানুয়াল, নির্দেশিকা ও পোস্টার মুদ্রণ। এর মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, সীমানা পুনর্নির্ধারণ, নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন ও টেন্ডারের মাধ্যমে নির্বাচনি মালপত্র সংগ্রহে পাঁচ থেকে সাত মাস সময় লাগতে পারে। বাকি কাজগুলো শুরুর দুই তিন মাসের মধ্যে শেষ করা সম্ভব।

সম্প্রতি বিএনপির দাবি, ২০২৫ সালের জুলাই-আগস্ট মাসেই নির্বাচন দেয়া হোক। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দ্রুত নির্বাচন না দিলে অন্যান্য শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে যে জরুরি সংস্কার দরকার, তা করেই নির্বাচন দেয়া উচিত। সেটি করলে এ বছরের মাঝামাঝিতে নির্বাচন করা সম্ভব। এছাড়া দ্রুত নির্বাচনের বিষয়ে দেশের সব দলই একমত।

নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জামায়াতের বক্তব্য- অতি জরুরি সংস্কারগুলো সাধন করে বর্তমান সরকার একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে যার যার জায়গায় চলে যান।

সম্প্রতি এক কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান এ মন্তব্য করেন। তবে পরে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান বলেন, আমরা নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় সংস্কারের কথা বলেছিলাম। কারণ প্রশাসনসহ সব জায়গায় আওয়ামী লীগের লোকজন এখানো বসানো রয়েছে। ওই সব লোক প্রশাসনে বসিয়ে রেখে কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। যে গতিতে চলছে তাতে আমাদের মনে হচ্ছে, ডিসেম্বর বা জানুয়ারির মধ্যে জরুরি এই সংস্কারগুলো সম্ভব নয়।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য নতুন কিছু নয়। আমরা আগেও বলেছি, নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। এরই মধ্যে সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে। এখন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে হলে এখনই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনি রোডম্যাপ চূড়ান্ত করতে হবে। তা নাহলে নির্বাচন পৌঁছাবে।

এদিকে ভোটের অধিকার আদায়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে গত সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেছেন, বাংলাদেশিরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের ভোটের অধিকার আদায় করবে- আমাদের নেতৃত্বে; আমরা আপনাদের সাথে আছি। তিনি বলেন, বাঙালি জানে ঐক্যবদ্ধ হতে; অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে বাঙালি ফাইট করতে জানে। সিইসি বলেন, অনিয়ম চাই না আমরা। সত্যিকারভাবে নির্বাচন বলতে যা বোঝায় তা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। নির্বাচনের নামে প্রহসন চাই না। তিনি আরো বলেন, মানুষ তো ভোটের প্রতি আগ্রহই হারিয়ে ফেলেছে।

তরুণ অনেকে আমার সাথে দেখা করতে এলে বলে, তারা ভোট দিতে পারেনি। তাদের আমি ভোটের ব্যবস্থা করে দিতে চাই। ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের শুরু হল। এ সুযোগ সদ্ব্যবহারের যাত্রা শুরু হলো; লং জার্নি। ভোটার ক্যাম্পেইন থেকে আরম্ভ করে পছন্দের ভোট দেয়া, ভোট গণনা করে প্রার্থী যে হোক, ভোট দেয়া- এ পুরো জার্নিতে আমি আপনাদের সাথে চাই। ভোটের অনিয়ম বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ারও আহ্বান জানান সিইসি নাসির।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত