সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল দশম গ্রেডে বাস্তবায়নের দাবিতে রাজধানীর শহীদ মিনারে সমাবেশ করছেন শিক্ষকরা।
গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় এ সমাবেশ শুরু হয়। সকাল থেকেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষকরা।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশে শিক্ষকরা ‘এক দফা, এক দাবি, শিক্ষকদের ১০ গ্রেড’; ‘জেগেছে রে জেগেছে, শিক্ষক সমাজ জেগেছে’; ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। উল্লেখ্য, বর্তমানে ১৩তম গ্রেডের বেসিক বেতন ১১ হাজার টাকা। দশম গ্রেডে তা বেড়ে দাঁড়াবে ১৬ হাজার টাকায়। এর আগে, দশম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে রাজধানীর মিরপুরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সামনে মানববন্ধন করেন সরকারি প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকরা। তারা সরকারি প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমন্বয় পরিষদের ব্যানারে এ সমাবেশ করেন।
গত বছর ২৯ সেপ্টেম্বর বিকেল তিনটা থেকে এ মানববন্ধন শুরু হয়। মিরপুর থানার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিন শতাধিক সহকারী শিক্ষক এতে অংশ নেন। বিকেল ৫টা পর্যন্ত মানববন্ধন কর্মসূচি পালন শেষে শিক্ষকদের ৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. মো. আব্দুল হাকিম বরাবর স্মারকলিপি দেয়। এসময় তিনি দ্রুত গ্রেড বৈষম্য নিরসনের আশ্বাস দেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ২০১৫ সালের বেতন স্কেল ও বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে শিক্ষকদের স্বাভাবিক জীবনমান বজায় রাখতে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল দশম গ্রেডে উন্নীত করার মাধ্যমে এর কিছুটা সমাধান সম্ভব।
তারা আরও বলেন, সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা বর্তমানে ১৩তম গ্রেডে বেতন পান। অন্যদিকে সব পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একই শিক্ষাগত যোগ্যতায় ১০ম গ্রেড-এ আছেন। পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একই শিক্ষাক্রমে পাঠদান ও একই পদ্ধতিতে মূল্যায়ন কার্যক্রম করেও আমাদের চেয়ে গ্রেড ব্যবধানে এগিয়ে। আবার এইচএসসি ও ডিপ্লোমা যোগ্যতায় নার্স ১০ম গ্রেড, এসএসসি ও ৪ বছরের ডিপ্লোমা যোগ্যতায় উপ-সহকারী কৃষি অফিসার ১০ম গ্রেড, বাংলাদেশ পুলিশের এসআইতে স্নাতক যোগ্যতায় ১০ম গ্রেড, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা একই শিক্ষাগত যোগ্যতায় ১০ম গ্রেড পেলেও আমরা বৈষম্যের শিকার।
সমাবেশে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের ঝাউখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিজয় কর্মকার বলেন, ২০২১ সাল থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দশম গ্রেডের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু কেউ কোনও আশ্বাস দেয়নি। আগস্টের পর অন্তর্র্বতী সরকার কমিটি করে দিয়েছে এ বিষয় নিয়ে কাজ করার জন্য। কিন্তু আমরা জানতে পেরেছি, তারা এটি রাখেনি।
এই কমিটি মূল কাজ না করে অন্যসব কাজ করছেন দাবি করে এই শিক্ষক বলেন, তারা দশম গ্রেডের বিষয়টা বাদ দিয়ে উল্টো কাজ করছে। তারা সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করছে, সিনিয়র শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করছে। আমরা এসব চাই না, আমরা দশম গ্রেড চাই।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ড্রাইভারের বেতন গ্রেড ১২তম জানিয়ে তিনি বলেন, যেখানে ড্রাইভারের বেতন ১২তম সেখানে শিক্ষকদের বেতন ১৩তম কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। আমাদের বলা হচ্ছে গ্র্যাজুয়েট সেকেন্ড গ্রেড। সেখানে এই বেতন কাঠামো শিক্ষকদের অবমাননা।
এদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেডের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখের পদযাত্রা ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দিয়েছে পুলিশ। পরে শিক্ষকরা শাহবাগ থানার বিপরীত পাশের সড়কের উপর বসে পড়েন। এতে করে বন্ধ হয়ে যায় যানচলাচল। তৈরি হয়েছে দীর্ঘ যানজট।
ফলে তীব্র ভোগান্তিতে পড়েছেন টিএসসি থেকে শাহবাগ এবং শাহবাগ থেকে টিএসসি অভিমুখের সড়কে চলাচলকারীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শাহবাগ থানার বিপরীত পাশে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটি সার্ভিল্যান্স বক্সের সামনে ৫০ জনের মতো শিক্ষক সড়কে বসে আছেন। তার সামনে পুলিশের ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি রাখা হয়েছে একটি জলকামান ও রায়ট কার। এছাড়া শাহবাগ অভিমুখের বাম পাশের সড়ক বন্ধ থাকায় উভয় দিকের গাড়িই ডান পাশের এক সড়কে থেমে থেমে চলাচল করতে দেখা গেছে।
এদিকে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের মধ্যস্থতায় বিকেল ৫টার পর শাহবাগ থানার ভেতর থেকে একটি পুলিশ ভ্যানে যমুনায় স্মারকলিপি জমা দিতে গিয়েছিলেন শিক্ষকদের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল।
প্রতিনিধি দলে রয়েছেন মো. মাহবুবুর রহমান, মো. লুৎফর রহমান, মনিবুল হক বসুনিয়া, মো. মোয়াজ্জেম হোসেন শাহীন, আব্দুল মান্নান, জুয়েল, বিজয় কর্মকার, শামীমা নাসরিন, সিরাজুল ইসলাম এবং খায়রুন নাহার লিপি।