বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ৫ আগস্টে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা পালিয়ে গিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। এরপরই বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে স্থানীয়দের মাঝে উত্তেজনার পারদ দেখা দিয়েছে। সীমান্তবর্তী মানুষের উত্তেজনার পারদ দমাতে বাংলাদেশ সীমান্তে ‘অপস অ্যালার্ট’ জারি করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করে ভারতের উত্তর-পূর্ব এবং পশ্চিমবঙ্গের বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সীমান্তে মহড়া চালানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই’য়ের এক প্রতিবেদনে অপস অ্যালার্টের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
‘অপস অ্যালার্ট’ জারি মধ্যেই দিনাজপুর বিরল সীমান্তে থেকে বাংলাদেশি এক কৃষককে আটক করে বিএসএফ। আটকের ৬ ঘণ্টা পর কৃষক আলমিকে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ফেরত দিয়েছে বিএসএফ। গতকাল ওই কৃষককে নিয়ে যাওয়া হয়। কৃষক আলামিন উপজেলার ধর্ম্মপুর ইউপির দ্বীপনগর গ্রামের আইজ উদ্দিনের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, কৃষক আলামিন শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে বিরল এনায়েতপুর সীমান্তের দ্বীপনগর গ্রামে শূন্য রেখার ৩২৩নং পিলারের পাশে নিজ জমিতে কাজ করছিল। এ সময় বিএসএফ এসে তাকে ধরে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরে তার পরিবারের লোকজন বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবি সদস্যদের কাছে গিয়ে বিষয়টি জানায়। এ ঘটনায় বিকেল সাড়ে ৩টায় ওই সীমান্তে বিজিবির সঙ্গে বিএসএফের পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে আটক কৃষককে ছেড়ে দেয় বিএসএফ।
দিনাজপুর ৪২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আহসান-উল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টায় ওই সীমান্তে বিজিবির সঙ্গে বিএসএফের পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে আটক কৃষককে ছেড়ে দেয় বিএসএফ।
‘অপস অ্যালার্ট’ নিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের আসন্ন প্রজাতন্ত্র দিবসকে সামনে রেখে আগামী ২৩ থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ সীমান্তে এই ‘অপস অ্যালার্ট’ জারি করেছে বিএসএফ। দেশটির উত্তর-পূর্ব এবং পশ্চিমবঙ্গ মিলিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের মোট চার হাজার ৯৬ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। পূর্বাঞ্চলে কমান্ডের এডিজি তথা স্পেশাল ডিজি রবি গান্ধী বিজ্ঞপ্তি জারি করে সবকটি সীমান্তের দায়িত্বে থাকা বর্ডার আউটপোস্টগুলোকে সতর্ক করেছেন।
জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ২৩ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বিএসএফকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। এই নির্দেশনামাকে বিএসএফের পরিভাষায় নাম দেয়া হয়েছে ‘অপস অ্যালার্ট’।
এতে আরো বলা হয়েছে, সীমান্তে বারবার মহড়া চালাতে হবে। নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিদ্র করতে হবে। প্রয়োজনে রাতে বাড়তি সেনা মোতায়েন করে নজরদারি বাড়াতে হবে। বিএসএফের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, প্রজাতন্ত্র দিবস ঘিরে সীমান্তে এ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের তরফে বলা হয়েছে, এ সংক্রান্ত বিষয়ে সীমান্ত লাগোয়া গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের ভালো করে বোঝাতে হবে। আর সেই দায়িত্ব নিতে হবে বিএসএফের শীর্ষ কর্মকর্তাদের। এরই মধ্যে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের স্পেশাল ডিজি একাধিক বর্ডার আউটপোস্ট এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
নির্দেশনা বলা হয়েছে, একাধিক অংশ রয়েছে যেখানে কাঁটাতার নেই। সবচেয়ে বেশি নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে অরক্ষিত এলাকায়। আগামী সাতদিন এই এলাকাগুলোকে পাখির চোখ করে বেশি সতর্ক থাকতে হবে।