শহরে যারা বসবাস করছেন তারা চিকিৎসা, শিক্ষাব্যবস্থা, আবাসন, যোগাযোগ ও ইন্টারনেট সংযোগসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। উল্টোদিকে গ্রামীণ জীবনে এসব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকছে মানুষ। এরপরও জীবনযাত্রা চালানোর ক্ষেত্রে গ্রামে মূল্যস্ফীতি বাড়ছেই।
গ্রামীণ জীবনে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যকর উদ্যোগের দেখা মিলছে না। একীভূত অর্থনীতিতে গ্রাম আর শহরে পার্থক্য নেই। টাকার অবনমন হয়েছে, এতে আমদানি খরচ বেড়েছে। বিভিন্ন পণ্যে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে।
গত ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ। অর্থাৎ আগের বছর একজন ভোক্তা যে পণ্য কিনেছেন ১০০ টাকায়, ২০২৪ সালে তাকে সেই পণ্য কিনতে খরচ করতে হয়েছে ১১০ টাকা ৩৪ পয়সা। প্রায় সারা বছর গ্রামের মানুষকেও পণ্য কিনতে এমন বাড়তি টাকা খরচ করতে হয়েছে। তার ওপর অর্থবছরের মাঝপথে এসে অর্থাৎ নতুন বছরের জানুয়ারিতে শতাধিক পণ্য ও সেবায় মূল্য সংযোজন কর-ভ্যাট, আবগারি ও সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য পূরণে সরকারের এই পদক্ষেপ মূল্যস্ফীতি আরো উসকে দেবে বলছেন অর্থনীতিবিদরা, তাতে গ্রামের স্বল্প ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ আরো চাপে পড়বে।
গাইবান্ধার ফুলছড়ির প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের কৃষক কাজী আশরাফ তালুকদার বাড়তি লাভের আশায় এবারের শীতে জমিতে মুলা চাষ করেছেন। চরাঞ্চলে পানির সংকট থাকায় মটরের সাহায্যে সেচ দিয়ে মুলা চাষ করেন। কিন্তু এই মৌসুমে প্রতি কেজি মুলা বিক্রি করছেন ১০ টাকায়। এই দর গত ২০ ডিসেম্বরের। একই সময়ে ভালো মানের এক কেজি মুলা ঢাকার কারওয়ান বাজারে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যায় পর্যন্ত আসতে মুলার দাম বেড়েছে তিন গুণ। গাইবান্ধার এই চিত্র প্রায় গ্রামাঞ্চলে। কৃষিপণ্যের প্রায় পুরোটাই গ্রামে উৎপাদিত হয়। এজন্য গ্রামের কৃষকরা উপযুক্ত দাম পান না। ফলে তাদের আয় কমছে। আবার তাদের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপও বেশি। যেখানে খাদ্যপণ্য উৎপাদিত হয়, সেখানে ভোগ্যপণ্য কিনতেই হিমশিম দশা। গ্রামে কর্মসংস্থানের বড় উৎস হলো কৃষি খাত। শিল্প ও সেবা খাতে যে হারে মজুরি বেড়েছে, তার চেয়ে কম হারে বেড়েছে কৃষি খাতের মজুরি, তাতে গ্রামের মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে।
শহরের চেয়ে মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি থাকার কারণে গ্রামের মানুষ দুভাবে ভুগছেন। প্রথমত, গ্রামেই উৎপাদিত পণ্য কিনতে আগের চেয়ে বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, কৃষক নিজের উৎপাদিত পণ্যের দাম পান না। মূল্যস্ফীতির জটিল হিসাব না বুঝলেও গোপালগঞ্জের মকসুদপুরের রনি ঠাকুর বলছিলেন তার দুরবস্থার কথা। ক্যান্সারে বাবার মৃত্যুর পর পড়ালেখা ছেড়ে তিনি সংসারের হাল ধরেন। মা-ছেলে দুইজনের পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস কৃষি জমি। জিনিসপত্রের উচ্চমূল্যের কারণে কুলিয়ে উঠতে না পারা বছর পঁচিশের রনি বলেন, বোনের বাড়ির মেহমান এলে ‘রীতিমতো বিপাকেই’ পড়ে যান তিনি। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে খরচের চাপ সামলাতে জমি বিক্রি করার কথা তুলে ধরে হতাশা প্রকাশ করেন রনি।
সরকারি হিসাবেই দেখা যায়, ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্তই খাদ্য বহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি শহর থেকে গ্রামে বেশি ছিল। এর সঙ্গে খাদ্য পণ্যেও এ ধারা দেখা গেছে এপ্রিল, আগস্ট ও অক্টোবরে। আন্দোলন, সংঘাত, বন্যা ও ক্ষমতার পালাবদলে সৃষ্ট অস্থিরতায় গ্রামে আগস্ট ও অক্টোবরে এ ধারা দেখা গেলেও এপ্রিলের কারণ অজানা। গ্রামে মূল্যস্ফীতি কেন বেশি, সেটি খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, বিদেশ থেকে আমদানি করা ও অন্য এলাকা থেকে যোগান দেয়া পণ্যের দাম চড়া। কৃষিপণ্যের মধ্যে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের দাম তুলনামূলক কম থাকে। তবে অন্যগুলোর দামে শহরের সঙ্গে পার্থক্য কম। বরং মূল্যস্ফীতি বাড়লে কোনো কোনো পণ্যের দাম শহরের চেয়ে বেড়ে যায়। মকসুদপুর এলাকার দোকানি নয়ন শেখ পেঁয়াজ, রসুন, মসলা পণ্যের সঙ্গে কিছু কাঁচামালও বিক্রি করেন। তিনি বলেন, সরকার বদলের সময় ও বন্যায় দাম চড়া থাকলেও এখন সবজির দাম পড়তির দিকে। সমস্যা হয় মসলা জাতীয় পণ্যে, যেগুলো অন্য জেলা থেকে আনতে হয়, সেগুলোর দাম বেশি। এগুলো তো আর আমাদের এলাকায় উৎপাদন হয় না। আমাদের কিনতে হয় মহাজন থেকে। তারা কেনে আবার বর্ডার অঞ্চল থেকে (আমদানি পণ্য)। এগুলোর দাম এখনো চড়া। রসুনের দাম ২০০ টাকার ওপর। জিরা ৬০০-৭০০ টাকা। শুকনা মরিচ ৫০০ টাকা।
একই এলাকার মাছ বিক্রেতা জলিল মাতবর বলেন, সব মাছের দাম বেশি। আমরাই কমে পাই না। চাষের ভালো মাছ কিনতেও হাজার টাকা খরচা আছে। তবে প্রাকৃতিক উৎসের মাছের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আগে কই মাছ বিক্রি করতাম ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। এখন হাজার টাকায় বিক্রি। শিং মাছের দাম ১০০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। গতবছর আগস্টের বন্যায় পুকুর তলিয়ে মাছ বেরিয়ে যাওয়া বাড়তি দামের কারণ হতে পারে বলে মনে করেন এ ব্যবসায়ী। বেকারি পণ্য যেমন কেক, বিস্কুট, শিশু খাদ্য, বিভিন্ন রকমের মিষ্টান্ন, চানাচুর, চিপস, চকোলেট, ফাস্ট ফুড ও বাসার প্রয়োজনীয় সামগ্রী গ্রাম ও শহরে প্রায় একই দামে বিক্রি হচ্ছে। এসবের কিছু পণ্যের ভ্যাট বেড়েছে চলতি বছরের বাজেটেই। তখন থেকেই দাম বেশি। অর্থবছরের মাঝপথে আবার সেসব পণ্যের কোনো কোনোটির ভ্যাট বেড়েছে।
শতাধিক পণ্য ও সেবায় শুল্ক, কর ও ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে- বিস্কুট, ওষুধ, পোশাক কেনাকাটা, মিষ্টি, বেশ কয়েক ধরনের টিস্যু, মোটর গাড়ির গ্যারেজ, এলপি গ্যাসের মতো পণ্যে ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। সিগারেটে আরেক দফা দাম ও কর বাড়ানো হয়েছে। কিচেন টাওয়াল, টয়লেট টিস্যু, ন্যাপকিন টিস্যু, ফেসিয়াল টিস্যু, হ্যান্ড টাওয়াল, সানগ্লাস, নন এসি হোটেল, মিষ্টান্ন ভান্ডার, প্রতিষ্ঠানের কেনাকাটা, নিজস্ব ব্র্যান্ড সম্বলিত তৈরি পোশাকের শো-রুম বা বিপণি বিতানে পণ্য ও সেবা বিক্রিতে থাকা বিদ্যমান ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতদিন তা সাড়ে ৭ শতাংশ ছিল। এছাড়া বৈদ্যুতিক খুঁটি, মোটর গাড়ির গ্যারেজ ও ওয়ার্কশপ, ডক ইয়ার্ড, ছাপাখানা, চলচ্চিত্র স্টুডিও, চলচিত্র প্রদর্শনী (সিনেমা হল), চলচ্চিত্র পরিবেশক, মেরামত ও সার্ভিসিং, স্বয়ংক্রিয় বা যন্ত্রচালিত করাতকল, খেলাধুলা আয়োজক, পরিবহন ঠিকাদার, বোর্ড সভায় পণ্য যোগানদাতা, টেইলারিং শপ ও টেইলার্স, ভবন রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থা, সামাজিক ও খেলাধুলাবিষয়ক ক্লাবে সেবার ক্ষেত্রে ভ্যাট ১০ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।
আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক বাড়ল যেসব পণ্যে : সুপারিতে ৩০ থেকে ৪৫ শতাংশ, পাইন বাদাম ২০ থেকে ৩০ শতাংশ, তাজা বা শুকনা সুপারি ৩০ থেকে ৪৫ শতাংশ, আম, কমলালেবু, লেবুজাতীয় ফল, আঙ্গুর, লেবু, পেঁপে, তরমুজ, আপেল ও নাশপাতি, ফলের রস, সবজির রস, তামাক, বাদাম, পেইন্টস, পলিমার, ভার্নিশ ও লেকার, সাবান ও সাবান জাতীয় পণ্য, ডিটারজেন্ট, ফ্রুট ড্রিংকস, আর্টিফিশিয়াল বা ফ্লেভার ড্রিংকস ও ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস (কার্বোনেটেড ও নন-কার্বোনেটেড), তামাকযুক্ত সিগারেট এসব পণ্যে সম্পূরক শুল্ক ৫ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এনবিআর বলছে, যেসব হোটেলে মদ বা মদ জাতীয় পানীয় সরবরাহ করা হয় সেসব হোটেল বা বারের বিলের উপর সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া রেস্তোরাঁর ক্ষেত্রেও একইভাবে মদ বা মদজাতীয় পণ্য সরবরাহ করা হলে-তার বিলের উপর সম্পূরক শুল্ক ২০ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে।
ভ্যাট বাড়ল যেসব পণ্যে : পটেটো ফ্ল্যাকস, কর্ন, মেশিন প্রস্তুত বিস্কুট, হাতে তৈরি বিস্কুট, আচার, চাটনি, টমেটো পেস্ট বা টমেটো কেচাপ বা সস, আম, আনারস, পেয়ারা ও কলার পাল্প, তেঁতুলের পেস্ট, ব্যবহারের অযোগ্য ট্রান্সফরমার অয়েল, লুবব্লেয়িং অয়েল, এলপি গ্যাস, বাল্ক ইম্পোটেড পেট্রোলিয়াম বিটুমিন, বিআরটিএ থেকে নেয়া লেমিনেটেড ড্রাইভিং লাইসেন্স, কঠিন শিলা, ফেরো-ম্যাঙ্গানিজ ও ফেরো-সিলিকো ম্যাঙ্গানিজ, ফেরো সিলিকন অ্যালয়, এইচ আর কয়েল থেকে সি আর কয়েল, সি আর কয়েল থেকে জিপি শিট, জি আই ওয়্যার, ৫ কেভিএ থেকে ২ হাজার কেভিএ বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার, চশমার প্লাস্টিক ফ্রেম, চশমার মেটাল ফ্রেম, রিডিং গ্লাস, নারিকেলের ছোবড়া হতে তৈরি ম্যাট্রেস- এসব পণ্যের ভ্যাট ৫ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি বা দাম বাড়ার বিষয়ে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। সংস্থার হিসাবেই গ্রামাঞ্চলে খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি শহরাঞ্চলকে ছাড়িয়ে যাওয়ার রেকর্ড ছিল বিদায়ী বছরের নয় মাস জুড়েই। এর মধ্যে তিন মাস কৃষি প্রধান এ দেশের গ্রাম এলাকার খাদ্য মূল্যস্ফীতিও ছাড়িয়ে গিয়েছিল শহরকে। এ তিন মাসের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এপ্রিলে গ্রামে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ, যা শহরে ছিল ১০ দশমিক ১৯ শতাংশ। আগস্টে গ্রামে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ; যেখানে শহরে ছিল ১১ দশমিক ২৪ শতাংশ। অন্যদিকে অক্টোবরে গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং শহরে ছিল ১২ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
টানা নয় মাসে খাদ্য বহির্ভূত পণ্যে গ্রামে যে উচ্চ মূল্যস্ফীতির ধারা রয়েছে, সেখানে দেখা যায়, এ সময়ে সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি ছিল আগস্টেই, ক্ষমতার পালাবদলের মাসে। সে সময়েই প্রথমবারের মতো গ্রামাঞ্চলে খাদ্য বহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতিতে দুই অঙ্কের ঘরে দেখা যায়।
বিবিএসের এ কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে আইটেম অনেক বেশি। অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তীতে নতুন একটি তালিকা করা হবে। যেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও দাম তুলনামূলক স্থির থাকে, এমন পণ্যের আলাদা তালিকা করা হবে। গত ৮ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক পরবর্তী ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বিবিএসের সাম্প্রতিক প্রকাশিত তথ্য নিয়ে নিজের সন্দেহের কথা বললেও তা ‘চোখ বন্ধ করে’ প্রকাশ করে দিতে হয় বলেছেন। বিবিএস প্রকাশিত সর্বশেষ জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যেহেতু আগের নিয়ম বলবৎ আছে কাজেই চোখ বন্ধ করে প্রকাশ করে দিতে হয় আমাকে। কিন্তু আমি ওটা দেখিও না।’ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের নতুন যেই সংশোধিত পরিসংখ্যান আইন তৈরি করতে যাচ্ছি, আশা করি করতে পারব। সেখানেও বিবিএস তাদের যতটুকু সক্ষমতা আছে এবং বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় প্রবৃদ্ধির হিসাব, মূল্যস্ফীতির হিসাব, কর্মসংস্থানের হিসাব, মজুরির হিসাব এগুলো তারা যা দেয় সেটাই পাবলিশ করতে পারবে।’
বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন মনে করেন, গ্রামীণ পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে মূল্যস্তর কম হওয়া। মূল্যস্ফীতি আর মূল্যস্তর এক জিনিস না। চাল, ডাল, মাছ এগুলোর কিন্তু মূল্য কম গ্রামে। সমস্যা হলে মূল্য কম হওয়ায় এখানে যখন মূল্যস্ফীতি হয়, তখন হার বেশি দেখায়। উদাহরণ দিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, ধরা যাক একই পণ্যের এক জায়গায় দাম ৫০ টাকা, অন্যখানে তার দাম ১০০ টাকা। এখন উভয় জায়গায় দাম পাঁচ টাকা বাড়লে নিম্নস্তরের মূল্যের ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বাড়বে ১০ শতাংশ; উচ্চ মূল্যস্তরের জায়গায় এটি হবে ৫ শতাংশ। গ্রামের ক্ষেত্রে যেহেতু কৃষি পণ্যের মূল্যস্তরই কম, ইদানীংকালে দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি তাই এ ক্ষেত্রে বেশি হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। গ্রামীণ পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি বাড়ার বড় কারণ হিসেবে সামষ্টিক অর্থনীতির চলমান সংকটকেই তুলে ধরেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, একীভূত অর্থনীতিতে এখন তো গ্রাম আর শহরে পার্থক্য নেই। গ্রামে উচ্চ মূল্যস্ফীতি না হওয়ার কোনো কারণ নেই। টাকার অবনমন হয়েছে; এতে আমদানি খরচ বেড়েছে। বিভিন্ন পণ্যে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। সুদের হার বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচও বেশি। বিনিয়োগের জন্য ব্যবসায়ীরা যে ঋণ নিয়েছেন এখন পরিশোধ করতে হচ্ছে তার লক্ষ্যের চেয়ে বেশি। এ অবস্থায় উৎপাদন বাড়িয়ে যে সরবরাহ বাড়াবেন, তা পারছেন না। তিনি বলেন, আশা করেছিলাম, সরকার জোরালোভাবে সরবরাহ চেইনে ব্যত্যয় যেন না হয় সেটি নিশ্চিত করবে। মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য যেন না হয় সেটি নিশ্চিত করবে। কিন্তু তারা সেটা পারেনি।