ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন!

ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন!

এই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করার উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এদিকে, এক অনুষ্ঠানে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার।

গতকাল সোমবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি প্রতিনিধিদল। বৈঠক শেষে মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান উপদেষ্টাসহ সেখানে যারা ছিলেন তারা অতি দ্রুত একটি নির্বাচন দেয়ার ব্যবস্থা করছেন। প্রধান উপদেষ্টা এ-ও বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে একটি নির্বাচন দেয়ার জন্য তারা কাজ করছেন। জনগণের প্রত্যাশা এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার করে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করবে সরকার।

তিনি আরো বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি এবং জনগণও তা প্রত্যাশা করছে। মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, আমরা অতি দ্রুত প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে উদ্বেগের বিষয়গুলো তার সামনে তুলে ধরব। দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে এটা আমাদের দায়িত্ব ছিল। আমরা সেই দায়িত্বটুকু পালন করেছি। আমরা তার সামনে তুলে ধরে বলেছি, যেসব ঘটনা ঘটেছে তার দায় সরকার এড়াতে পারেন না। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং বাহিনীগুলোর সামনেই এই ঘটনাগুলো একের পর এক ঘটেছে। যা সার্বিকভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির স্থিতিশীলতাকে যথেষ্টভাবে বিপন্ন করেছে। ফ্যাসিবাদকে সুযোগ করে দিয়েছে এই সম্পর্কে কথা বলার।

তিনি বলেন, এই সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের জন্য তাগাদা দিয়েছি। ন্যূনতম যে সংস্কার সেই কাজগুলো করে, রিফর্ম কমিশনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে, একমত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত নির্বাচন দেয়ার বিষয় নিয়ে আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। এখনো প্রশাসনে যেসব ফ্যাসিবাদের দোসর রয়েছে এবং সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছেন তাদের আইনের আওতায় আনা এবং প্রশাসন থেকে সরিয়ে দেয়ার কথা বলেছি। যারা অর্থনীতির লুট করেছে, লুণ্ঠন করেছে তাদের টাকা ফিরিয়ে আনা এবং আইনের আওতায় আনার জন্য দাবি তুলেছি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিগত ১৫ বছরে মিথ্যা মামলা দিয়ে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হয়েছে। তাদের মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা বলেছি। তারা এ বিষয়ে একমত হয়েছেন। আমরা দ্রব্যমূল্যের বিষয়ে অত্যন্ত জোরালোভাবে বলেছি, এই সরকারের অন্যতম ব্যর্থতা হচ্ছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারা। এ বিষয়ে তারা বলেছেন, এটি নিয়ে তারা কাজ করছেন।

অভিযান ডেভিল হান্টের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সবশেষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে তাদের বলেছি- অতীতেও অনেক অভিযান হয়েছে। অতীতের মতো যেন ইনোসেন্ট যারা আছেন তাদের কিছু না হয়। এটা নিয়ে যেন সমস্যা না হয়।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন ইস্যুতে আমরা কোনোভাবেই একমত হবো না। খুব পরিষ্কার করে আগেও বলেছি, এখনও বলছি- জাতীয় সরকারের আগে কোনো নির্বাচন হবে না।

এসময় বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ও মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। এদিকে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের পস্তুতি নেয়ার কথা বলেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার।

তিনি বলেন, ‘কমিশনের কাছে ভালো নির্বাচন না করার কোনো বিকল্প নেই। দেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক নেতারাসহ বিভিন্ন মহলের সহায়তা দরকার। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে যাতে জাতীয় নির্বাচন হয়, সে লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন।’

গতকাল সোমবার দুপুরে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার নালী কৃষ্ণ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সবার চাহিদা অনুযায়ী সুষ্ঠু নির্বাচন করতেই হবে, পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে বিষয়গুলো আসবে, সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।’

তিনি বলেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা করার সুবাদে এবার প্রথমবারের মতো ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ছেন প্রায় ১৬ লাখ মৃত ভোটার। এতে কারো কারচুপি করার সুযোগ থাকবে না। সন্ধ্যায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ উপলক্ষে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক কক্ষে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন আনোয়ারুল ইসলাম।

সেখানে তিনি বলেন, ‘আমাদের ভালো একটা নির্বাচন এবং অতীতের গ্লানি মুছে ফেলতে কি কি করণীয় তা এক্সারসাইজ করে রেখেছি। সংস্কার প্রতিবেদন অনুযায়ী আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব এবং তা অনুযায়ী কাজ করব।’ মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক মনোয়ার হোসেন মোল্লার সভাপতিত্বে সভায় নির্বাচন কমিশনের একান্ত সচিব মো. কামরুজ্জামান, মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার মোছা. ইয়াসমিন খাতুন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আলী এবং জেলা নির্বাচন অফিসার মো. নাজিম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত