ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মন্ত্রীরা বিভক্ত দুই দলে

মন্ত্রীরা বিভক্ত দুই দলে

আবুল কাসেম, কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল মনসুর আহমদসহ অন্যরা বাংলা ভাষার পক্ষে প্রচারণার প্রয়াস চালাতে থাকেন। বাংলার পক্ষে দেশের নামকরা ব্যক্তিদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে তারা একটি স্মারকপত্র

তৈরি করে তা সরকারের কাছে পেশ করেন। পত্রপত্রিকায়ও প্রতিলিপি পাঠানো হয়, যা দৈনিক ‘ইত্তেহাদ’ ও সাপ্তাহিক ‘ইনসাফ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এ সময় কয়েকজন মন্ত্রীও ভাষা আন্দোলনকে গোপনে সমর্থন করতে থাকেন। মন্ত্রীরা দুইটি দলে বিভক্ত হয়ে পড়েন। প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দিন ও হামিদুল হক চৌধুরীকে ঘিরে একদল বাংলা ভাষার কথা শুনতেই পারতেন না। অন্য দলে ছিলেন পূর্ববাংলার স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাবিবুলাহ বাহার, আফজল হোসেনসহ কয়েকজন যারা গোপনে সমর্থন করতেন এবং পরে প্রকাশ্যে মতপ্রকাশ করেছিলেন।

তমদ্দুন মজলিসের মুখপত্র ছিল সাপ্তাহিক ‘সৈনিক’। ভাষা আন্দোলনের অগ্রযাত্রায় ‘সৈনিকের’ ভূমিকা স্মরণীয়। শুধু ভাষার দাবি নয়, স্বাধীনতার প্রথম দিনগুলোয় ‘সৈনিক’ প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় মুসলিম লীগ সরকারের স্বাধীনতাপূর্ব প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী সব মুখোশ উন্মোচন করে তাদের গণবিরোধী ভূমিকার স্বরূপ উন্মোচিত করেছিল। ১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসে পাকিস্তান শিক্ষা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় করাচিতে। হাবিবুল্লাহ বাহার সম্মেলনে যোগদানের জন্য বিশেষভাবে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। ঢাকা থেকে করাচি রওনা হওয়ার সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এত দিন যাবত আমরা এক পরাধীন দেশের নাগরিক ছিলাম। এখন আমরা স্বাধীনতা অর্জন করিয়াছি। এখন হইতেই আমাদের শিক্ষা প্রণালীর সম্পূর্ণ পরিবর্তন করিয়া উহার সংস্কার করিতে হইবে। অবস্থাবিশেষে আমরা শুধু কেরানি ও চাকরির জন্যই শিক্ষা দিব না, বরং স্বাধীন দেশের নাগরিকরূপে গড়িয়া তোলাই আমাদের শিক্ষাদানের মুখ্য উদ্দেশ্য। দ্বিতীয়ত, এতকাল যাবত আমাদের শিক্ষা কেবলমাত্র এক বিশেষ শ্রেণির কবলে ছিল। এখন হইতে আমাদের শিক্ষার ধারায় এমন পরিবর্তন আনিতে হইবে, যাতে সম্পূর্ণ অজ্ঞান জনসাধারণের মধ্যে শিক্ষা বিতরণ করিয়া আমাদের চিন্তাধারায় আমূল পরিবর্তন সাধন সম্ভব হয়।’ শিক্ষা সম্মেলনকে কেন্দ্র করে পূর্ববাংলার ভাষার প্রশ্নে বিতর্ক ও অসন্তোষ দেখা দেয়। পূর্ববাংলার স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাবিবুল্লাহ বাহার ও পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমানের ভূমিকা সম্পর্কে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য ও বিতণ্ডা দেখা দেয় এবং পূর্ববাংলায় ছাত্র ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে বাংলার স্বার্থ এবং অধিকারের প্রশ্নে সংশয় দেখা দেয়ায় এখানে উত্তেজনা ও বিক্ষোভ দেখা দেয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত