ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

জাকাত না দেয়ার ভয়াবহ পরিণতি

জাকাত না দেয়ার ভয়াবহ পরিণতি

একই গ্রামের ছেলে, তারা পরস্পর বন্ধু। তারা প্রাইমারি স্তরে স্কুলে বা মাদ্রাসায় পড়েছে। কয়েকজ্বন বেশ প্রতিভাবান, দাপিয়ে তাদের বিচরণ। কর্মজীবনে এসে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন। দেখা গেল কর্মক্ষেত্রের বাস্তবতা ভিন্ন। ক্লাসে যারা মাতব্বরি করত তারা আয়-উপার্জনে পিছিয়ে আছে, আর যাদের হাবাগোবা মনে করা হত তাদের অবস্থা রমরমা। অঢেল পয়সার মালিক।

কথা ছিল ছোটবেলা থেকে যারা প্রতিভাবান, দাপুটে, ভালো ছাত্র তারাই আয়-রোজ্বগারে এগিয়ে থাকবে, অন্যদের ছাড়িয়ে যাবে। ব-কলমদের অধীনে বড় বড় ইঞ্জিনিয়ার বা ডিগ্রিধারী চাকরি করার উদাহরণ অহরহ দেখা যায়। কারণ কী? কারণ হল, টাকা-পয়সা, সম্পদ সবসময় প্রতিভার গুণে অর্জিত হয় না। অনেক সময় ছাত্র জীবনের আদু ভাইরাও অঢেল অর্থের মালিক হয়। আসল কারণ, টাকা-পয়সা ইজ্জ্বত সম্মানের একচ্ছত্র মালিক আল্লাহ। আল্লাহ বলেন, তোমাকে আমি এত এত রিজিক দিয়েছি, তা থেকে আমার রাস্তায় খরচ করো। জাকাত দাও।

খান্দানি জ্বমিদার বাড়ি। এলাকায় তাদের সামাজিক মর্যাদার জুড়ি নেই। পাশের লোকেরা বড় লোকদের বাড়িতে কামলা খেটেছে। ছেলেমেয়ে বড় হওয়ার পর দেখা গেল, কামলাপাড়ার ছেলে মেয়েরা এগিয়ে গেছে। বিদেশ গিয়ে বিরাট পয়সার মালিক হয়ে জ্বমিজ্বমা কিনছে। এমনকি জ্বমিদার বাড়ির অথর্ব উত্তরাধিকারী সন্তানরা তাদের কাছে জ্বমি বিক্রি করে দিন গুজ্বরান করছে। এমন উদাহরণ অহরহ। এর কারণ, ইজ্জ্বত সম্মানের, অর্থ সম্পদের মালিক একমাত্র আল্লাহ। তিনি যাকে ইচ্ছা বেশি দেন, আবার যাকে ইচ্ছা কমিয়ে দেন, কেড়ে নেন।

জাকাত দেয়ার প্রশ্ন আসলে যারা ভ্রুঁ কুঁচকায়, তাদের বুঝার জ্বন্য এ দুটি উদাহরণ যথেষ্ট। অর্থ সম্পদ নিজের যোগ্যতা প্রতিভা বা খান্দানী পরিচয়ের উপর নির্ভরশীল হলে কর্মজীবনে ধনী গরীবের এমন তারতম্য হত না। আল্লাহতায়ালাই মানুষের জীবন মরণ, ইজ্জ্বত সম্মান, ধন-সম্পদ সবকিছুর একচ্ছত্র মালিক। তিনি কাউকে ফকির, কাউকে বাদশাহ বানান। এটি তার সৃষ্টিনৈপুণ্যের খেলা, এর উপরই নির্ভরশীল বিশ্বব্যবস্থা। এই ব্যবস্থার একটি বিধান যাদের আল্লাহ ধন দিয়েছেন তাদের ধনের একটি অংশ গরিবদের মাঝে বিলানো।

মানুষ সামাজিক জীব। তার মানে মানুষ সমাজ্ব ছাড়া চলতে পারে না। সমাজের যে কোনো পেশার লোক অন্য পেশার লোকদের সহযোগিতা ছাড়া চলতে পারে না। আমরা যে কাপড় পরি তা কয়েকটি স্তরে মানুষের সহযোগিতার পর আমাদের ব্যবহার উপযোগী হয়। পায়ের জুতা, চলার গাড়ি এমনকি নাপিতের শ্রমের কাছেও আমরা ঋণি। শ্রমিকমজুর না হলে শিল্পপতিদের কলখারখানা অচল। মোটকথা সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়ে আমাদের জীবন চলে। দেখা যায়, এই কর্মযজ্ঞে সবাই সমানভাবে মজুরি বা লাভবান হতে পারে না। অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার তারতম্যের কারণে কিছুলোক বিরাট পুজিপতি, অর্থশালী হয়ে যায়, অথচ বিরাট সংখ্যক মেহনতি মানুষ ভালোভাবে দিন গুজ্বরান করতে পারে না। এর প্রধান কারণ সম্পদের অসম বণ্টন ব্যবস্থা। সবার সম্মিলিত কর্মতৎপরতার পর যদি দেখা যায় সম্পদ একজ্বনের বা এক শ্রেণির হাতে গিয়ে জ্বমা হয়েছে, তাহলে বুঝতে হবে, যারা বঞ্চিত ও অভাবী তাদের আয় উপার্জনের একটি অংশ অর্থশালীদের হিসেবে গিয়ে জ্বমা হয়েছে। কাজেই ধনী লোকের সম্পদ মূলত তার নয়, বরং সমাজের বঞ্চিত শ্রেণির সেই সম্পদ, যা তার কাছে সঞ্চিত হয়েছে।

এ জ্বন্যেই হাদিস শরিফে বর্ণিত, ‘তাদের ধনীদের কাছ থেকে নেয়া হবে এবং তাদের মধ্যে যারা গরীব তাদের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।

আমাদের কষ্টার্জিত সম্পদ কোনো যুক্তিতে গরিবদের মাঝে বণ্টন করতে হবে, এই প্রশ্ন যারা করেন, আশা করি, উপরোক্ত বক্তব্যের মাঝে তাদের উত্তর পেয়ে গেছেন। মূল জাকাত দান মানে গরিবদের সম্পদ ধনীদের কাছ থেকে উসুল করে গরিবদের মাঝে বিলিয়ে দেয়া। বিধান এখন ধনীর সম্পদে কী পরিমাণ অতিরিক্ত মনে করা হবে বা কী পরিমাণ সম্পদ গরিবদের মাঝে বিলিয়ে দিলে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা হবে সে জ্ঞান, তার হিসাব একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। তিনিই নির্দেশ দিয়েছেন, তোমাদের যে সম্পদ ভোগ ব্যবহারের পর নেসাব পরিমাণ এক বছর জ্বমা থাকবে তার শতকরা আড়াই ভাগ বা ৪০ ভাগের এক ভাগ আল্লাহর নির্ধারিত ৮টি খাতে দান করতে হবে। যদি তা ব্যয় করা না হয়, তাহলে ইহকালে দুর্গতি তো আছেই পরকালে ভয়াবহ আজাব ভোগ করতে হবে।

‘আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না তাদের মর্মন্তুদ শাস্তির সংবাদ দাও।

যেদিন জাহান্নামের অগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেয়া হবে সেদিন বলা হবে, এটিই তা যা তোমরা নিজেদের জ্বন্য পুঞ্জীভূত করতে। সুতরাং তোমরা যা পুঞ্জীভূত করেছিলে তা আস্বাদন কর।’ (সূরা তাওবা, আয়াত-৩৪, ৩৫)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত