ঢাকা শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ৮ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মাগুরার শিশুটির অবস্থা সংকটাপন্ন সিএমএইচে ভর্তি

মাগুরার শিশুটির অবস্থা সংকটাপন্ন সিএমএইচে ভর্তি

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটির শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে। গতকাল শনিবার বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়।

ঢামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক আশরাফুল আলম বলেন, মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশক্রমে ও সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদের নির্দেশনা অনুযায়ী শিশুটিকে সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়েছে। আট বছরের শিশু গত বুধবার মাগুরা সদরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে গভীর রাতে ধর্ষণের শিকার হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে স্থানান্তর করা হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেও তার অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। পরে বৃহস্পতিবার রাতে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে গত শুক্রবার রাতে শিশুটিকে লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়। এতে শারীরিক অবস্থান অনবতি ঘটনায় সিএমএইচে ভর্তি করা হয়েছে। শিশুটির জন্য উন্নত চিকিৎসার জন্য চার সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে বলেও জানান ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, শিশুটির উন্নত চিকিৎসার জন্য পেডিয়াট্রিক, সার্জারি, অ্যানেস্থেশিয়া ও গাইনি বিভাগের চার চিকিৎসককে নিয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এদিকে শিশুটির মায়ের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্যসচিব রবিউল ইসলামের (নয়ন) মুঠোফোনে শিশুটির মায়ের সঙ্গে কথা বলেন তারেক রহমান। ফোনালাপে তারেক রহমান ওই নারীর কাছে তার শিশুসন্তানের শারীরিক অবস্থা জানতে চান। তারেক রহমান শিশুটির মাকে আরও বলেন, ‘আমি নয়নকে বলেছি, শিশুটির চিকিৎসার জন্য যেসব ব্যবস্থা নেয়া দরকার, সেগুলো যাতে নেয়া হয়। চিন্তা করবেন না, আমরা আছি, দেশের মানুষ আপনাদের পাশে আছে।’

অন্যদিকে শিশু ধর্ষণের প্রতিবাদ ও বিচার নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদী সমাবেশ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার চত্বরে জাবিতে অধ্যয়নরত মাগুরা জেলার শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘মাগুরা জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতি’র আয়োজনে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি করেন তারা। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভঙ্গুর অবস্থা আমাদের চোখে পড়ছে। আমরা চাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ধর্ষকদের প্রকাশ্য ও কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করুক। কেউ যাতে ধর্ষক হয়ে ওঠার সাহস না পায়। এসময় শিক্ষার্থীরা ধর্ষণবিরোধী নানা স্লোগান দেন। সমাবেশে বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী মৌমিতা তাবাসসুম বলেন, ‘আমরা পত্রিকা খুললেই ধর্ষণের খবর দেখতে পাই। আমাদের প্রাণপ্রিয় শহর মাগুরাতে একটি শিশু নারকীয় ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ঘটনা নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য খুব লজ্জাকর এবং ভীতিকর। আমাদের মনে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন জাগছে। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে এই নৃশংস ধর্ষকের প্রকাশ্য ফাঁসির দাবি করছি।’ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ‘মাগুরায় ধর্ষণের ঘটনা আমাদের জন্য লজ্জার। ধর্ষকের শাস্তির দীর্ঘসূত্রিতা আমাদের দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে পুনরায় প্রমাণ করছে। আমরা চাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধর্ষকের শাস্তি নিশ্চিত করবে।’ শিশুর স্বজনরা জানিয়েছেন, তার বাবা ভ্যানচালক। তাদের বাড়ি মাগুরায়। মাস চারেক আগে শিশুর বড় বোনের বিয়ে হয় মাগুরা সদরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামের রাজমিস্ত্রি হিটু শেখের ছেলে সজিব শেখের সঙ্গে। সজিবও রাজমিস্ত্রি। কিছুদিন আগে শিশুটির বোনের বাড়িতে বেড়াতে যায়। সে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী।

শিশুটির চাচা বলেন, আমার ভাতিজি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করতো। শনিবার নিজ বাড়ি শ্রীপুর থেকে সে বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার সকালে বড় বোনের শ্বশুর হিটু মিয়া তাকে একটি ঘরের মধ্যে নিয়ে ধর্ষণ করে। মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় মেয়েটিকে মাগুরা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। এরপর গুরুতর অবস্থায় ঢামেক থেকে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেয়া হয়েছে। এদিকে শিশু ‘ধর্ষণের’ ঘটনার তিন দিন পর চারজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিরাজুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় শনিবার ওই শিশুর মা বাদী হয়ে সদর থানায় চারজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলা করেছেন। তিনি বলেন, এ মামলায় শিশুটির ভগ্নিপতি সজিব হোসেন (১৮) ও বোনের শ্বশুর হিটু মিয়া (৪২), সজিব শেখের ভাই রাতুল শেখ (১৭) এবং তাদের মা জাবেদা বেগমকে (৪০) আসামি করা হয়েছে। তাদের চারজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা বলেন, এরই মধ্যে মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। স্বজনরা জানান, বিয়ের মাসখানেক পরে শিশুটির বড় বোনকেও পাশবিক নির্যাতনের চেষ্টা করেছিলেন তার শ্বশুর হিটু শেখ। কিন্তু মেয়ের বাবা দরিদ্র হওয়ায় বিষয়টি জানার পরও চুপ ছিলেন। বড় বোনও শুক্রবার ঢামেক হাসপাতালে এসেছিলেন। তবে বিকালে তাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এদিকে মাগুরা শহরে শিশু ধর্ষণের ঘটনায় থানা ঘেরাও করে প্রতিবাদ জানায় স্থানীয়রা। গত শুক্রবার বিকালে ধর্ষণের প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে তারা মিছিল নিয়ে মাগুরা সদর থানা ঘেরাও করে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। পরে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত