ফ্যাসিস্টমুক্ত বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষে ব্যতিক্রমী ‘ড্রোন শোর আয়োজন করা হয়। এই ড্রোন শোর মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের নতুন এক ইতিহাস তৈরি হয়। গত সোমবার সন্ধ্যায় বাংলা নববর্ষে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ড্রোন শোতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
প্রথমবারের মতো বাংলার আকাশে ভেসে ওঠে ড্রোনচিত্র ও রঙিন লেজার রশ্মি। এ শোতে ১৯৭১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়কালকে তুলে ধরা হয় বিভিন্ন প্রতিকৃতির মাধ্যমে প্রায় ১৫ মিনিটের এই প্রদর্শনীতে জুলাই অভ্যুত্থানে শহিদ আবু সাঈদের বুক চিতিয়ে বুলেটের সামনে দাঁড়ানো, মুগ্ধর পানি বিতরণ, বিপ্লবে-সংগ্রামে নারীর ভূমিকা, ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি, বাংলাদেশ-চীনের বন্ধুত্ব ও দেশের সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়। পহেলা বৈশাখের দিন সন্ধ্যা সাতটায় শুরু হওয়া এই ড্রোন প্রদর্শনীর শুরুতেই ছিল খাঁচার ভেতর থেকে উড়াল দেয়া পাখির প্রদর্শনী। শোষণ-শাসনের খাঁচা ছেড়ে যে পাখি উড়াল দেয়, আসে নতুন বাংলাদেশ-৩৬ জুলাই নামে পরিচিতি পেয়েছে। এরপরই প্রদর্শনীতে দেখানো হয় অভ্যুত্থানের প্রথম শহিদ রংপুরের আবু সাঈদকে। দুই হাত প্রসারিত করে বুক চিতিয়ে পুলিশের গুলির সামনে দাঁড়িয়ে যাওয়া সেই দৃশ্য ড্রোনের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়। পরে প্রদর্শন করা হয় উত্তরায় বিক্ষোভকারীদের তৃষ্ণা মেটাতে পানির কেস হাতে ছোটা ‘পানি লাগবে, পানি’ বলে পানি বিলানো শহিদ মীর মুদ্ধকে। এরপরে পর্যায়ক্রমে বিপ্লবে-সংগ্রামে নারীর অংশগ্রহণ, সাধারণ মানুষের প্রতীক হয়ে ওঠা রিকশাচালক, জাতীয় ফুল শাপলা, ১৯৭১ থেকে ২০২৪, জুলাই বিপ্লব, ফিলিস্তিনের জন্য প্রার্থনা, শান্তির দূত, চীন-বাংলাদেশের ৫০ বছরের বন্ধুত্ব এবং সব শেষে সবাইকে শুভ নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানো হয়। ড্রোন প্রদর্শনীর আয়োজন করে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। কারিগরি সহায়তা করে ঢাকায় চীন দূতাবাস। ২ হাজার ৬০০ ড্রোনের মাধ্যমে প্রদর্শনীতে মোট ১২টি মোটিফ ফুটিয়ে তোলা হয়। ড্রোন প্রদর্শনীর আগে বেলা সাড়ে তিনটায় নববর্ষের কনসার্ট শুরু হয়। কনসার্ট ও ড্রোন প্রদর্শনী ঘিরে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে মানুষের ঢল ছিল।
অনুষ্ঠানের আয়োজকরা জানান, এ ড্রোন শো কেবল বিনোদনের নয়, বরং এটি বর্তমান সময়ের গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। প্রযুক্তির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে গণআন্দোলন, মানবিক বিপর্যয় এবং আশা-ভবিষ্যতের ইঙ্গিত। কনসার্ট ও ড্রোন শোতে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ড্রোন শো : ড্রোন শোর আগে ডিজাইন টিম একটি টাইমলাইন তৈরি করে, যেখানে নির্দিষ্ট কিছু ছবি ও ইফেক্ট থাকে। বিশেষ একটি সফটওয়্যার এসব ছবিতে অ্যানিমেশন যোগ করে ড্রোনগুলো অ্যানিমেশন অনুযায়ী চলতে পারে। এর সঙ্গে একটি সাউন্ডট্র্যাকও থাকে। এরপর পুরো শোয়ের তথ্য রেডিও সিগন্যালের মাধ্যমে ড্রোনগুলোতে পাঠানো হয়। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে শো শুরু হয় এবং ড্রোনগুলো আকাশে ছবি আঁকতে শুরু করে।