ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পুতুলকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেন প্রেস সচিব
পুতুলকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অফিসের ‘বিতর্কিত’ আঞ্চলিক পরিচালক এবং ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে সংস্থাটি। চার মাস আগে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক তার বিরুদ্ধে প্রতারণা, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং জালিয়াতির অভিযোগ এনে দুটি মামলা করে। এরপরই তাকে ছুটিতে পাঠাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গত শুক্রবার থেকে এটি কার্যকর হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিচালক ডাক্তার টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস স্টাফদের একটি ছোট ইমেইল বার্তায় জানিয়েছেন, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ছুটিতে পাঠানোর পর তার জায়গায় আঞ্চলিক অফিসের দায়িত্ব পালন করবেন সংস্থার সহকারী মহাপরিচালক ডাক্তার ক্যাথরিনা বোহমি। তিনি ১৫ জুলাই নয়াদিল্লিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক অফিসের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন পুতুল। তবে তার এ নিয়োগ নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক ছিল। অভিযোগ আছে, তার মা শেখ হাসিনা তাকে এই পদে নির্বাচিত করতে অবৈধ প্রভাব খাটিয়েছেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানায় হেলথ পলিসি ওয়াচ। এদিকে দুদক পুতুলের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে। সংস্থাটির অভিযোগ, আঞ্চলিক পরিচালক হওয়ার সময় পুতুল তার শিক্ষাগত রেকর্ড নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রদান করেন।

ডব্লিউএইচওর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেন প্রেস সচিব: পুতুলকে অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। গতকাল শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে বিষয়টি নিয়ে একটি পোস্ট করেন শফিকুল আলম। ওই পোস্টে তিনি লেখেন, ‘সাইমা ওয়াজেদকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানায়। তার বিরুদ্ধে জালিয়াতি, জাল সনদ ব্যবহার ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মতো গুরুতর অভিযোগের তদন্ত চলমান। আমরা ডব্লিউএইচওর সিদ্ধান্তকে জবাবদিহিতার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখি।’

তিনি আরও লেখেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এর একটি স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন, যেখানে সায়মা ওয়াজেদকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হবে, তার সকল সুযোগ-সুবিধা বাতিল করা হবে এবং এই মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্বের সততা ও জাতিসংঘ ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধার করা হবে। বাংলাদেশের জনগণ ও বিশ্ববাসী স্বচ্ছতা, সততা ও ন্যায়বিচারের উন্মেষ দেখে সন্তুষ্ট।’ দুদকের আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র অনুযায়ী, পুতুল আঞ্চলিক পরিচালক হওয়ার প্রচারণার সময় নিজের একাডেমিক রেকর্ড সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দেন, যা বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪৬৮ (প্রতারণার উদ্দেশ্যে জালিয়াতি) এবং ৪৭১ (জাল দলিল ব্যবহার) ধারার লঙ্ঘন।

দুদকের উপপরিচালক আখতারুল ইসলাম জানান, পুতুল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে তার একটি সম্মানী পদ দেখিয়ে যোগ্যতা প্রদর্শনের চেষ্টা করেছিলেন, যা বিশ্ববিদ্যালয় অস্বীকার করেছে। এছাড়া পুতুলের বিরুদ্ধে তার নেতৃত্বাধীন সূচনা ফাউন্ডেশনের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ২.৮ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহের অভিযোগ রয়েছে, যা ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তবে এই অর্থ কীভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, তার বিস্তারিত দেয়নি দুদক। এই অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে দণ্ডবিধির ৪২০ ধারা (প্রতারণা ও অসদাচরণে সম্পত্তি গ্রহণ) এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা অনুযায়ী ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ। অভিযোগ দায়েরের পর থেকে পুতুল বাংলাদেশে গ্রেফতারের আশঙ্কায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে স্বাভাবিকভাবে সফর করতে পারছেন না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত