পাঁচ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়া (২২)। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষের সময় ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই চট্টগ্রামে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। ২৩ জুলাই ভোরে ঢাকায় তার মৃত্যু হয়। রাতেই তার লাশ নিয়ে পটুয়াখালীর নিজ বাড়িতে যান মা-বাবা।
হৃদয় চন্দ্র পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার ঘটকের আন্দুয়া গ্রামের রতন চন্দ্র তরুয়া ও অর্চনা রানীর ছেলে। দুই ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছোট ছিলেন। পড়তেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষে। মির্জাগঞ্জে গ্রামের বাড়ি হলেও তারা দীর্ঘদিন ধরে পটুয়াখালী শহরের মুন্সেফপাড়া এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। ছেলেকে হারিয়ে শোকে কাতর রতন চন্দ্র তরুয়া বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে হৃদয় লেখাপড়া করছিল। অনেক স্বপ্ন দেখেছি তাকে নিয়ে। লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করে দরিদ্র বাবার সংসারের হাল ধরবে- কত স্বপ্ন ছিল। একটি গুলিতে সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল।’
পেশায় কাঠমিস্ত্রি রতন চন্দ্র তরুয়া প্রতিদিনই কাজের সন্ধানে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে ঘোরেন। কাঠমিস্ত্রির আয় দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে। বড় মেয়ে মিতু রানীকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে হৃদয় চন্দ্র টিউশনি করে নিজের পড়ালেখার খরচ জোগাতেন। শহরের মুন্সেফপাড়ায় হৃদয়দের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ ছোট্ট ঘরে তাদের বসবাস। মা-বাবা লাশ আনতে ঢাকায় গেছেন। বাড়িতে বোন মিতু রানীকে পাওয়া গেল। হৃদয়ের বন্ধুরা জানান, হৃদয় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগের ছাত্র ছিলেন। ছুটিতে পটুয়াখালী এলে তাদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন। লেখাপড়া শেষ করে মা-বাবার জন্য কিছু করার কথা জানাতেন। তার এমন মৃত্যু তারা মেনে নিতে পারেননি।
ছেলে গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে ২২ জুলাই রাতে মা অর্চনা রানী ঢাকায় যান। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই ভোরে তিনি ছেলের মৃত্যুর খবর পান। হৃদয়ের ভগ্নিপতি দীপক কুমার জানান, হৃদয় গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে তারা আসেন। হৃদয়কে প্রথমে ঢাকার বক্ষব্যাধি হাসপাতালে আনা হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ভোর পাঁচটার দিকে তিনি মারা যান। সহপাঠীদের বরাতে হৃদয়ের বন্ধুরা জানান, ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই বিকেলে টিউশনি করে চট্টগ্রামের শহরের দিকে আসছিলেন হৃদয়। পথে সংঘর্ষ চলছিল। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার মধ্যে পড়ে তিনি দৌড়ানোর চেষ্টা করেন। তখন গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে যান। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ঢাকায় নেওয়া হয়।