সাত দফা দাবিতে আগামী শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশ করবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মৌলিক সংস্কার নিশ্চিত করা। এ প্রসঙ্গে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, জামায়াত মনে করে, সংস্কার ছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচন হলে আবার ফ্যাসিবাদের উত্থান হবে। তাই কোনো ষড়যন্ত্র যাতে সংস্কারকে বিঘ্নিত করতে না পারে, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে মিয়া গোলাম পরওয়ার এসব কথা বলেন। ১৯ জুলাইয়ের সমাবেশ উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের সাত দফা দাবি নিয়ে কথা বলেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, জামায়াতের সাত দফা দাবির মধ্যে রয়েছে নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা, নির্বাচনের আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যার বিচার, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মৌলিক সংস্কার নিশ্চিত, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য, জুলাই আহতদের চিকিৎসা, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, তার দল জামায়াত মনে করে, সংস্কার ছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচন হলে পুনরায় ফ্যাসিবাদের উত্থান হবে। তাই কোনো ষড়যন্ত্র যাতে সংস্কারকে বিঘ্নিত করতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে সম্ভাব্য দুর্ভোগের জন্য সংবাদ সম্মেলন থেকে নগরবাসীর কাছে আগাম ক্ষমা প্রার্থনা করে দলটি। দুর্ভোগের বিষয়টিকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য তারা নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে। দুর্ভোগ কিছুটা কমাতে জামায়াত কোনো রাস্তায় সমাবেশের আয়োজন করেনি বলে উল্লেখ করেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, এই সমাবেশ হয়তো নগরজীবনে কিছুটা দুর্ভোগ ও যানজট সৃষ্টি করতে পারে। তারা জামায়াতের পক্ষ থেকে দেশবাসী, নগরবাসীর কাছে অগ্রিম বিনয়ের সঙ্গে ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ আয়োজনকে ব্যয়বহুল বলে উল্লেখ করেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, তারা মানুষের জন্য, দেশের কল্যাণে কাজ করছেন। কিন্তু গত ৫৪ বছরে দল হিসেবে জামায়াত সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। অনেক রাজনৈতিক দল রাস্তায় সমাবেশ করে। কিন্তু মানুষের কিছু দুর্ভোগ কমাতে ব্যয়বহুল হওয়া সত্ত্বেও তারা মাঠে সমাবেশের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জামায়াতের ১৯ জুলাইয়ের সমাবেশকে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় রাখতে ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক, সমাবেশস্থলে ১৫টি মেডিকেল বুথ ও বিভিন্ন জেলা থেকে আসা গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য ১৫টি স্পট নির্ধারণের কথা জানান মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, সমাবেশ বাস্তবায়নে জামায়াত আটটি উপকমিটি গঠন করেছে। উপকমিটিগুলোর তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়িত হবে এই সমাবেশ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শনিবার বেলা ২টায় মূল সমাবেশ শুরু হবে। তবে জামায়াতের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পক্ষ থেকে সকাল দশটা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হবে। মূল সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন বিভিন্ন ইসলামি দল ও রাজনৈতিক দলের নেতারা, জুলাই শহিদ পরিবারের সদস্যরা ও জুলাই আহত ব্যক্তিরা। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, রফিকুল ইসলাম খান, একেএম মাসুম, আবদুল হালিম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, জামায়াত নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, শফিকুল ইসলাম মাসুদ, দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।