
বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) কার্যালয়ে পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান ও ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদের মধ্যে সৌজন্য সাক্ষাতে এ আগ্রহের কথা জানান জাম কামাল খান। ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, সংস্কৃতি ও জীবনাচরণের দিক থেকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মানুষের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। বাংলাদেশে পাকিস্তানের টেক্সটাইল ও জুয়েলারি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাসকীন আহমেদ দ্বিপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সইয়ের মাধ্যমে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জোরদার করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি তিনি সরাসরি বিমান ও কার্গো যোগাযোগ চালুর মাধ্যমে ব্যবসায়িক সম্পর্ক বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান উভয় দেশই তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইলের ওপর নির্ভরশীল। তাই রপ্তানির ক্ষেত্রে বহুমুখীকরণে জোর দেওয়া প্রয়োজন। ইউরোপ, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে পুনঃব্যবহারের জন্য নতুন ডিজাইনের পোশাকের চাহিদা বাড়ছে, যেখানে দুই দেশের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করলে নতুন বাজার সৃষ্টি হবে। তিনি আরও বলেন, পূর্ব আফ্রিকা ও মধ্য এশিয়ার বাজারে রপ্তানি বাড়াতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের একযোগে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
সিমেন্ট, চিনি, পাদুকা ও চামড়া খাতে পাকিস্তান ভালো করছে উল্লেখ করে জাম কামাল খান জানান, এসব খাতে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানি করতে পারে। অন্যদিকে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প পাকিস্তানের জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
কৃষি খাতে নতুন প্রযুক্তি ও মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে বৈশ্বিক বাজারে দুই দেশের রপ্তানি সম্ভাবনা বাড়ানো সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন জাম কামাল খান। তিনি জানান, শিগগির বাংলাদেশে পাকিস্তানের একক প্রদর্শনী (সিঙ্গেল কান্ট্রি এক্সিবিশন) আয়োজন করা হবে, যা দুই দেশের বেসরকারি খাতের সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে। সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশের জন্য নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার, ডিসিসিআইর ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান, ডিসিসিআই পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এবং পাকিস্তান হাইকমিশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের সঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের সফরকারী বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। মতিঝিলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে শিল্প উন্নয়নের ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি ও পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে শিল্প উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করতে পারে। তিনি এই সময় বাংলাদেশে চিনিশিল্প, চামড়াশিল্প, সিমেন্ট, জাহাজ নির্মাণ ও কৃষির উন্নয়নে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। বৈঠকে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) ও পাকিস্তানের হালাল অথরিটির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের বিষয়ে আলোচনা হয়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের চিনিশিল্পের উন্নয়নে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা বৈঠকে জানানো হয়।
বৈঠকে পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী দুই দেশের শিল্পের উন্নয়ন, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা, বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ সহযোগীতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাকিস্তানের আগ্রহ আছে বলে জানান।
পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন ঢাকায় পাকিস্তানের নবনিযুক্ত হাইকমিশনার ইমরান হায়দার। বৈঠকে শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমান ও বিএসটিআই’র মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের অফিস কক্ষে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে সৌজন্য সাক্ষাতে উপদেষ্টা পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রীকে বাংলাদেশে স্বাগত জানান। এ সময় দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি ভ্রাতৃপ্রতিম উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়। খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে সরাসরি পণ্যবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসছে। এর মাধ্যমে দুই দেশের বাণিজ্য কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে। পূর্বে পাকিস্তানি পণ্য তৃতীয় দেশের মাধ্যমে বাংলাদেশে আমদানি হতো। এতে সময় এবং খরচ বৃদ্ধি পেত। পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী খাদ্য উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান এবং ভ্রাতৃপ্রতিম দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধিসহ উভয় দেশের জনগণের কল্যাণে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার, খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসানসহ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান চার দিনের সরকারি সফরে গত বুধবার বাংলাদেশে আসেন। পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী ঢাকায় পৌঁছানোর পর বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও জোরদার করার লক্ষ্যে পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী এই সফর করছেন বলে ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশন জানিয়েছে। সফরকালে পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা, জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা এবং শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এসব বৈঠকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে নতুন সহযোগিতার ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা হবে।
কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের পাকিস্তান সফরে লাগবে না ভিসা : বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীরা বিনা ভিসায় পাকিস্তান সফর করতে পারবেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি আরও জানান, পাকিস্তানের সঙ্গে এ বিষয়ে পাঁচ বছরের জন্য চুক্তি হবে। বাংলাদেশের মতো পাকিস্তানের কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীরাও বিনা ভিসায় বাংলাদেশ সফর করতে পারবেন।
প্রেস সচিব বলেন, পাকিস্তানের মতো এরকম চুক্তি আমরা আরও ৩১টি দেশের সঙ্গে করেছি। এই চুক্তি হবে পাঁচ বছরের জন্য। এর ফলে যারা অফিশিয়াল পাসপোর্ট এবং কূটনীতিক পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন, তারা এখন বিনা ভিসায় পাকিস্তান সফর করতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, একইভাবে পাকিস্তানের যারা অফিশিয়াল এবং কূটনীতিক পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন— তারাও বাংলাদেশে সফর করতে পারবেন কোন ভিসা ছাড়াই। এটা একটা স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাকটিস।