ঢাকা রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

রমজানের আগেই ভোট ৬০ দিন আগে তফসিল

রমজানের আগেই ভোট ৬০ দিন আগে তফসিল

রাজনৈতিক টানাপোড়নের মধ্যেই কয়েকদফা তারিখ পিছিয়ে অবশেষে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ রোডম্যাপে ২৪টি গুরুত্বপূর্ণ কাজকে প্রাধান্য দিয়ে ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এ রোডম্যাপ ঘোষণ করেন। এ রোডম্যাপ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো স্বাগত জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, ইসি তফসিল ও ভোটের তারিখ রোডম্যাপে না দিলেও। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল দিয়ে ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখ অথবা ৮ তারিখ সম্ভব্য ভোটগ্রহণের তারিখ ধরে ইসি কাজ করছে।

ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাইরে অন্য কিছু ভাবার সুযোগ নেই। রমজানের আগেই নির্বাচন হবে। তফসিল ও ভোট কবে হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ভোটগ্রহণের ৬০ দিন আগে তফসিল দেব। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর বলেছে, আগামী রমজানের আগে ভোট করার জন্য। আমার যদি ভুল না হয়ে থাকে তাহলে ১৭ বা ১৮ ফেব্রুয়ারি রমজান শুরু। আবার রমজান তো চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল। এভাবে আপনি নির্বাচনের তারিখ বের করতে পারেন।

গণপরিষদ ও গণভোটের দাবির বিষয়ে আখতার আহমেদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা শুধু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য। এর বাইরে আমাদের অন্য কোনো কিছু ভাবার সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, রোডম্যাপে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর মধ্যে আছে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ, ভোটার তালিকা চূড়ান্তকরণ, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন ও দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন চূড়ান্ত করা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেলিকপ্টারের প্রয়োজন হলে তা তফসিল ঘোষণার দুই মাস আগে জানাতে হবে।

ইসি আগেই জানিয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে। আর তফসিল ঘোষণা করা হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে।

কর্মপরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ যত বিষয় : অংশীজনের সংলাপ, ভোটার তালিকা প্রণয়ন, নির্বাচনি আইনবিধি সংস্কার, দল নিবন্ধন, নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, পোস্টাল ভোটিং, পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন, দেশি-বিদেশি সাংবাদিক অনুমোদন; নির্বাচনের জন্য জনবল ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা, নির্বাচনি দ্রব্যাদি সংগ্রহ, আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক কার্যক্রম, অন্যান্য আইনবিধি সংস্কার একীভূতকরণ; ম্যানুয়েল নির্দেশিকা পোস্টার পরিচয়পত্র মুদ্রণ; প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স উপযোগীকরণ, নির্বাচনি বাজেট বরাদ্দ, প্রচারণা ও উদ্বুদ্ধকরণ, টেলিযোগাযোগব্যবস্থা সুসংহতকরণ, ডিজিটাল মনিটর স্থাপন ও যন্ত্রপাতি সংযোজন, বেসরকারি প্রাথমিক ফলাফল প্রচার, ফলাফল প্রদর্শন, প্রকাশ ও প্রচার (বিভিন্ন মাধ্যমে); বিবিধ।

দল ও অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ : সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে শুরু। শেষ হতে সময় লাগবে দেড় মাস।

ভোটার তালিকা হালনাগাদ : এরই মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের সম্পূরক খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, যা চূড়ান্ত করা হবে ৩১ আগস্ট। আর ৩১ অক্টোবরের সম্পূরক তালিকা শেষে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ৩০ নভেম্বর।

নির্বাচনি আইনবিধি : গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), অন্যান্য আইনবিধি ৩১ আগস্টের মধ্যে সংশোধনের প্রস্তাব ও প্রণয়ন। এ ছাড়া সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ আইন সংশোধন, ভোটার তালিকা আইন সংশোধন, সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র নীতিমালা ও ব্যবস্থাপনা চূড়ান্ত, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক নীতিমালা চূড়ান্ত, নির্বাচন পরিচালনা (সংশোধন) ২০২৫ প্রতীকসহ, নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯১, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ২০০৯। এগুলো আইন মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন, যা ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করার আশা।

রাজনৈতিক দল নিবন্ধন : মধ্য সেপ্টেম্বর প্রাথমিক নিবন্ধন ও সেপ্টেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন।

সীমানা নির্ধারণ : সেপ্টেম্বরের শুরুতে চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ আর ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জিআইএস ম্যাপ প্রস্তুত ও প্রকাশ।

পোস্টাল ভোটিং ও ব্যালট : প্রকল্প অনুমোদন, সফটওয়্যার চূড়ান্ত, মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, নিবন্ধন ও ট্র্যাকিং মডিউল, প্রচারণা অক্টোবরে সম্পন্ন। প্রবাসে নভেম্বরে ব্যালট পেপার পাঠানো। কারাবন্দিদের ভোটের দুই সপ্তাহ আগে পাঠানোর পরিকল্পনা।

আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক কার্যক্রম : সেপ্টেম্বরে ও তফসিল ঘোষণার ১৫ দিন এবং তফসিল ঘোষণার পরও বৈঠক।

জানা যায়, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে রোজার আগে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এ সংক্রান্ত চিঠিও দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারও বলেছেন, ভোটের তারিখের প্রায় দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে। নির্বাচন কমিশন সভায় আলোচনা শেষে জানানো হয়, ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল দেবে ইসি।

এদিকে ইসি ঘোষিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের সমস্যা সমাধানে নির্বাচন ছাড়া কোনো উপায় নেই। যারা নির্বাচন বয়কট কিংবা বাধা দেয়ার চেষ্টা করবে তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তিনি বলেন, যারা হটকারী সিদ্ধান্ত নেবে, তারা নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, এবারের নির্বাচন হবে অবাধ ও সুষ্ঠু।

গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আগেও সহযোগিতা করেছে, সামনেও সব ধরনের সহায়তা করবে বলেও আশ্বস্ত করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত রোডম্যাপের বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন- এই মুহূর্তে আমাদের প্রধান জাতীয় স্বার্থ। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত রোডম্যাপ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্বাচন রোডম্যাপেরই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। আমরা এই রোডম্যাপ ঘোষণাকে স্বাগত জানাই।

সাকি বলেন, নির্বাচন বানচাল হওয়ার বা নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাকে গুরুত্ব না দিয়ে বরং এধরনের আশঙ্কার জায়গা তৈরির কোনো সুযোগ যাতে সৃষ্টি না হয়, সে ব্যাপারে নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত সব অংশীজনকে ভূমিকা নিতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার জন্য অনেক বড় দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর। তা না হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাজনৈতিক দলগুলোই।

জনোয়েদ সাকি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক রাখার দায়িত্ব মনিটরিং করার জন্য আন্দোলনকারী সব রাজনৈতিক দল থেকে প্রতিনিধি নিয়ে একটা কমিটি করা দরকার।

তিনি উল্লেখ করেন, একইসঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব সবার অংশগ্রহণে নির্বাচনের পরিবেশ সংক্রান্ত একটা আচরণবিধি তৈরি করা দরকার। দেশের যেকোনো স্থানে যেকোনো সমস্যা হলে বা নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গ হলে, তা মীমাংসা করার ক্ষেত্রে এই কমিটি ভূমিকা রাখবে।

সাকি বলেন, একইসঙ্গে আমরা আহ্বান জানাই, আন্দোলনকারী সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন পরিবেশ, ভোটার তালিকা প্রকাশ ও সংশোধনসহ নির্বাচন সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করুন। নির্বাচন সংক্রান্ত নীতিমালা ও অন্যান্য বিষয়ে সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আহ্বান জানাই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত