
আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান (কার্জন), সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমসহ ১৬ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত। তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল শুক্রবার তাদের সিএমএম আদালতে আনা হয়। ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। অন্যদিকে লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষে লড়তে স্বাক্ষরের জন্য আইনজীবী সাইফুল ইসলাম যান। এ সময় লতিফ সিদ্দিকী ওই আইনজীবীকে বলেন, আদালতের জামিন দেওয়ার ক্ষমতা নেই, এ জন্য ওকালতনামায় স্বাক্ষর করবেন না।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম বলেন, লতিফ সিদ্দিকীসহ ১৬ জনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে ১৬ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়। রাজধানীর শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিরুল ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলা করেন। গ্রেপ্তার অন্য ব্যক্তিরা হলেন আবদুল্লাহ আল আমিন, কাজী এ টি এম আনিসুর রহমান, গোলাম মোস্তফা, মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম, মো. জাকির হোসেন, তৌসিফুল বারী খান, আমির হোসেন ওরফে সুমন, নাজমুল আহসান, মো. আল-আমিন, সৈয়দ শাহেদ হাসান, শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার, দেওয়ান মো. আলী ও আবদুল্লাহিল কাইয়ুম। গত বৃহস্পতিবার সকালে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, শেখ হাফিজুর রহমানসহ অন্যরা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিতে যান। ‘আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের সংবিধান’শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজক ছিল ‘মঞ্চ ৭১’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি থাকার কথা ছিল বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেনের। তবে তিনি সেখানে ছিলেন না। সকাল ১০টায় গোলটেবিল আলোচনা শুরুর কথা থাকলেও বেলা ১১টায় আলোচনা সভাটি শুরু হয়। আলোচনা সভায় প্রথমে বক্তব্য দেন শেখ হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, দেশের সংবিধানকে ছুড়ে ফেলার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে জামায়াত-শিবির ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের জুতার মালা পরাচ্ছে।’
শেখ হাফিজুর রহমানের বক্তব্য শেষ হওয়ার পরই মিছিল নিয়ে একদল ব্যক্তি ডিআরইউ মিলনায়তনে ঢোকেন। এ সময় তাঁরা ‘জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘লীগ ধর, জেলে ভর’, ‘জুলাইয়ের যোদ্ধারা, এক হও লড়াই করো’ প্রভৃতি স্লোগান দেন। একপর্যায়ে তাঁরা গোলটেবিল আলোচনার ব্যানার ছিঁড়ে আলোচনায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পুলিশের (ডিএমপি) একটি দল এলে তাঁরা পুলিশের কাছে লতিফ সিদ্দিকী, শেখ হাফিজুর রহমান, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমসহ অন্তত ১৬ জনকে তুলে দেন। পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আসাদুজ্জামান সেখানে উপস্থিত ছিলেন। দুপুর সোয়া ১২টার পর কয়েকজন পুলিশ সদস্য এসে লতিফ সিদ্দিকীসহ বেশ কয়েকজনকে পুলিশের ভ্যানে নিয়ে যান।
গোলটেবিল আলোচনায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের অবরুদ্ধ করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে আল আমিন রাসেল নামের একজন বলেন, ‘আমরা জুলাই যোদ্ধা। এখানে পতিত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়ে ষড়যন্ত্র করছে। জুলাই যোদ্ধারা বেঁচে থাকতে এমন কিছু আমরা মেনে নেব না।’ আলোচনা সভা ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ডিআরইউ।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় আনা অভিযোগের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ যে যুক্তি তুলে ধরেছে, তা ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করেছেন এ মামলায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েল এই শিক্ষক বলেন, “আমরা ভিকটিম। এর প্রতিকার চাই। আমাদের এখনই রিলিজ দিবেন। আমাদের যেভাবে হেনস্তা করা হয়েছে ৫ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ চাই। আর এখনই জামিন দিবেন। আমরা কারো কোনো দলীয় লোক নই।” এসময় রাষ্ট্রপক্ষের আরেক আইনজীবী কাইয়ুম হোসেন নয়ন বলেন, “১৭ বছর ফ্যাসিস্টের সুবিধাভোগী। এখন আদালতে এসে আঙুল উঠিয়ে কথা বলে। এরা চোর, বাটপাট।”