ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ড্যাফোডিল-সিটি শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র সাভার

* ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ-লুটে ২৫ কোটি টাকার ক্ষতি, দাবি সিটি ইউনিভার্সিটির * ক্ষতিপূরণ চায় সিটি, দুঃখ প্রকাশ ড্যাফোডিল কর্তৃপক্ষের
ড্যাফোডিল-সিটি শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র সাভার

ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় বেসরকারি দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। গত রোববার রাত নয়টার দিকে আশুলিয়ার খাগান এলাকায় বেসরকারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ সংঘর্ষ শুরু হয়।

শিক্ষার্থীরা জানান, রোববার সন্ধ্যার পর ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের ভাড়া বাসা ‘ব্যাচেলর প্যারাডাইস হোস্টেল’ এর পাশে বসে ছিলেন সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। তাদের মধ্য এক শিক্ষার্থী থুতু ফেললে অসতর্কতাবশত সেখান দিয়ে মোটরসাইকেলযোগে যাওয়া ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থীর শরীরে লাগে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। পরে রাত ৯টার দিকে সিটি ইউনিভার্সিটির প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী দেশি অস্ত্র ও ইটপাটকেল নিয়ে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীদের ওই বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন।এ ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হন। একপর্যায়ে তারা সিটি ইউনিভার্সিটির দিকে অগ্রসর হন। উভয় পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হন। তারা সিটি ইউনিভার্সিটির প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়ে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। এই উত্তেজনার মধ্যে সিটি ইউনিভার্সিটি- সংলগ্ন এলাকায় পৃথক একটি স্থানে সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ড্যাফোডিলের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেন। পরে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা সিটি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে ঢোকেন। তারা ক্যাম্পাসে দাঁড় করিয়ে রাখা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি বাস, একটি প্রাইভেট কারে আগুন দেন। এ ছাড়া একটি বাস, দুটি প্রাইভেট কার, একটি মোটরসাইকেল, প্রশাসনিক ভবনে ভাঙচুর করা হয়। দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে ড্যাফোডিলের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী সেখান থেকে চলে আসেন। তবে কিছু শিক্ষার্থী সেখানে আটকা পড়েন। পরে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কর্মকর্তারা আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, ‘অসতর্কতাবশতই সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের ফেলা থুতু ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীর শরীরে লাগে। সেখানে ‘সরি’ বলার পর বিষয়টি সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু রাতে এসে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীদের মেসে ভাঙচুরের ঘটনাটি কাম্য নয়। উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তান। আমরা চেষ্টা করছি বিষয়টি সমাধানের।’

গতকাল সোমবার ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির প্রক্টর শেখ মুহাম্মদ আলিয়ার বলেন, ‘এখনো আমাদের ৯ শিক্ষার্থীকে সিটি ইউনিভার্সিটিতে আটকে রাখা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি বিষয়টি সমাধানের। এ ঘটনায় ড্যাফোডিলের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।’ সিটি ইউনিভার্সিটির প্রক্টর অধ্যাপক আবু জায়েদ বলেন, ‘ঘটনার সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে, সেটি এখনো আমরা নিশ্চিত নই। ছাত্রদের মারামারি থেকে ক্যাম্পাস পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে না। এটি পরিকল্পিত। আমাদের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।’

ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ-লুটে অন্তত ২০-২৫ কোটি টাকার ক্ষতি- সিটি ইউনিভার্সিটির উপাচার্য : সোমবার সিটি ইউনিভার্সিটিতে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান বলেন, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটের ফলে সিটি ইউনিভার্সিটির অন্তত ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান বলেন, ‘গত রোববার রাতে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির অসংখ্য দুষ্কৃতিকারী শিক্ষার্থী আমাদের সিটি ইউনিভার্সিটিতে আক্রমণ করে। তারা আমাদের গেইট ভাঙচুর করে, ওয়াল ভাঙচুর করে এবং আমাদের সামনের ফটকে থাকা প্রায় ১৩টার মতো গাড়ি সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘শুধু তাই নয়, তারা পরিকল্পিতভাবে আমাদের অফিস রুমে প্রবেশ করে এবং ভিসি, প্রভিসি, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার প্রত্যেকের রুমে প্রবেশ করে কম্পিউটার লুট ও ভাঙচুর করেছে, নথি নিয়ে গেছে।’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘আগে আমরা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করতাম। কিন্তু ইদানীং ব্যাংকটি একটু দূরে যাওয়ায় আমরা ক্যাশ লেনদেন করে পরের দিন টাকাটা পাঠাই মধুমতী ব্যাংকে। গতকাল আমাদের অ্যাকাউন্টস সেকশনে যত আর্থিক লেনদেন হয়েছে, সেই টাকাগুলো আমাদের কাছেই ছিল। তারা সেগুলো ভেঙেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে নথি নিয়ে যাওয়ায়। এগুলো আমার চাইলেই তৈরি করে ফেলতে পারব না।’ ‘একটা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আরেকটি ইউনিভার্সিটিতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করতে পারে এটা আমার কল্পনার বাইরে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমি ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছি। স্যার আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে, ক্ষতিপূরণটা তারা দিয়ে দেবেন।’ ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির উপাচার্যকে প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের অনুরোধ জানিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ড্যাফোডিলের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক আছে। দেখা যাক তারা কী করে। তারা যদি তেমন কোনো উদ্যোগ না নেয়, আমরা অবশ্যই আইনের আশ্রয় নেবো।’

ক্ষতিপূরণ চায় সিটি ইউনিভার্সিটি, দুঃখ প্রকাশ ড্যাফোডিল কর্তৃপক্ষের : ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজিস ডিপার্টমেন্টের ডিন অধ্যাপক বিমল চন্দ্র দাস সিটি ইউনিভার্সিটি পরিদর্শন করেন এবং ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের চিত্র দেখে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, গতরাতে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি ও সিটি ইউনিভার্সিটির মধ্যে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, সেই ঘটনা ফিজিক্যালি দেখার জন্য এসেছি। আমার সঙ্গে আমাদের ইউনিভার্সিটির কর্মকর্তারা রয়েছেন এবং সিটি ইউনিভার্সিটির ভিসি স্যার রয়েছেন। ‘এখানে যে ভাঙচুর ও ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, সেজন্য আমি সত্যি সত্যি লজ্জিত এবং এর জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন ধ্বংসযজ্ঞ হতে পারে, এটা আমাদের ধারণার বাইরে। এটা যারাই ঘটিয়েছে, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।’ তিনি বলেন, আমাদের কয়েকজন শিক্ষার্থী এখানে আটক আছে। ভিসি স্যারের নির্দেশে তাদের ছাড়িয়ে নিতে এখানে এসেছি। এখানকার শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত