
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের আয়কর নথি জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত। এছাড়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক উপ-প্রেসসচিব মুহাম্মদ আশরাফুল আলম খোকন এবং তার স্ত্রী রেজওয়ানা নূরের আয়কর নথি জব্দের আদেশ দেওয়া হয়েছে। তিনজনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ সাব্বির ফয়েজ এই আদেশ দেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা উপ-পরিচালক আকতারুল ইসলাম এ তথ্য দিয়েছেন। এদিন তিনজনের আয়কর নথি জব্দ চেয়ে আবেদন করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ। শুরু হতে ২০২৪-২৫ করবর্ষ পর্যন্ত তাদের আয়কর নথি জব্দের কথা বলা হয়েছে সে আবেদনে।
মোজাম্মেল হকের আয়কর নথি জব্দের আবেদনে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন এবং চারটি ব্যাংক হিসাবে সন্দেহজনক অর্থ লেনদেন হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তর করার’ অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে মোজাম্মেল হকের আয়কর নথির স্থায়ী অংশসহ যাবতীয় নথি ও তথ্য এবং অফিস আদেশ পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন। খোকন ও নূর দম্পতির নথি জব্দের আবেদনে বলা হয়, তাদের বিরুদ্ধে ‘সরকারি ক্ষমতা অপব্যবহার করে নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং তিনটি ব্যাংক হিসাবে সন্দেহজন অর্থ লেনদেন, হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের’ অভিযোগের তদন্ত চলছে। এই কারণে তাদের আয়কর নথির স্থায়ী অংশসহ যাবতীয় নথি ও তথ্য এবং অফিস আদেশ পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজান। আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে গেল ২৯ সেপ্টেম্বর মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মোজাম্মেল হক ১০ কোটি ৩৪ লাখ ৫৭ হাজার ৪২৭ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মালিক হয়েছেন, যা তার ঘোষিত আয়ের উৎসের সঙ্গে ‘সঙ্গতিপূর্ণ নয়’।
এছাড়া, তার নামে থাকা তিনটি ব্যাংক হিসাবে মোট ৮ কোটি ৩২ লাখ ৭৪ হাজার ১১৪ টাকার ‘সন্দেহজনক’ লেনদেনের তথ্যও পাওয়ার কথা বলেছে দুদক। তার আগে গেল ২৭ মার্চ আশরাফুল আলম খোকন এবং তার স্ত্রী রেজওয়ানা নূরের বিরুদ্ধে আলাদা দুটি মামলা করে দুদক। মামলায় অভিযোগ করা হয়, খোকন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিবের দায়িত্বে থাকাকালে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ’ ১৩ কোটি ৩৩ লাখ ৯৮ হাজার ৮২৭ টাকার ‘অবৈধ’ সম্পদ অর্জন করেছেন। তার নামের তিনটি ব্যাংক হিসাবে ১ কোটি ৩৪ লাখ ৩৯ হাজার ৫৭২ টাকার ‘সন্দেহজনক লেনদেনেরও’ প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া ‘দুর্নীতির মাধ্যমে’ যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি কিনেছেন খোকন। স্বামীর ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে’ রেজওয়ানা নূর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৩ কোটি ৮ লাখ ৮১ হাজার ৫৬৬ টাকার সম্পদ করেন। তার তিনটি ব্যাংক হিসাবে ৬ কোটি ১২ লাখ ৪৯ হাজার ৮৩৭ টাকা হস্তান্তর, রূপান্তর, স্থানান্তরের মাধ্যমে ‘সন্দেহজনক অসংখ্য লেনদেনের’ তথ্য পাওয়া গেছে।