ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সামনে ‘অ্যানার্কিক সিচুয়েশন’

‘বিএনপি সংস্কার ভেস্তে দিচ্ছে, জামায়াত ভোট পেছানোর চেষ্টায়’

সামনে ‘অ্যানার্কিক সিচুয়েশন’ বা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মুক্তিযুদ্ধ ইস্যুতে জামায়াতের সমালোচনায় সরব বিএনপি মহাসচিব গতকাল বলেছেন, ‘বাংলাদেশের শত্রুরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে। একটা পুরোপুরি নৈরাজ্য সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চলছে।’ এদিকে, বিএনপির সঙ্গে সরকারের কোনো উপদেষ্টার যোগসাজশের অভিযোগ তুলেছে জামায়াত। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘নির্বাচনের মাত্র চার মাস আগে সরকার যদি কোনো দলের সঙ্গে গোপন সমঝোতা করে আরপিওর সর্বশেষ সংশোধনী বাতিল করে, তবে ন্যক্কারজনকভাবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ভঙ্গ হতে পারে।’ অন্যদিকে, বিএনপি ও জামায়াত- দুই দলের বিরুদ্ধেই অভিযোগ তুলেছে এনসিপি। দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘ বিএনপি সংস্কার ভেস্তে দিচ্ছে, আর জামায়াত আছে নির্বাচন পেছানোর চেষ্টায়।’ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে এক কাতারে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর মুখোমুখি অবস্থানে দেশ অনাকাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক উত্তাপে পুড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা
‘বিএনপি সংস্কার ভেস্তে দিচ্ছে, জামায়াত ভোট পেছানোর চেষ্টায়’

জুলাই সনদ, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া সংস্কার বাস্তবায়নের সুপারিশ ইস্যুতে বিএনপি ও জামায়াতের পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়ে কথা বলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এক দল সংস্কারকে ভেস্তে দিচ্ছে, আরেক দল নির্বাচনকে পেছানোর চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেন নাহিদ। গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নাহিদ। সংবাদ সম্মেলনে কোনো লিখিত বক্তব্য ছিল না। সরাসরি প্রশ্নোত্তর পর্ব দিয়েই শুরু হয় সংবাদ সম্মেলন।

নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘বিএনপি ঐকমত্য কমিশনের শুরু থেকেই মৌলিক বিষয়গুলোয় নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে বিরোধিতা করার চেষ্টা করেছে। ফলে সংস্কারের পক্ষে তারা কতটুকু আছে, এ বিষয়ে জনগণের ভেতর প্রশ্ন আছে, আমাদের কাছেও প্রশ্ন আছে। অন্যদিকে জামায়াতের কার্যক্রমে মনে হচ্ছে, নির্বাচনকে পেছানোর কোনো দুরভিসন্ধি তাদের আছে কি না। ফলে এক দল সংস্কারকে ভেস্তে দিচ্ছে, আরেক দল নির্বাচনকে পেছানোর চেষ্টা করছে।’ গণভোট আগে হবে, না নির্বাচনের দিন হবে- এটায় বিএনপি-জামায়াত আবার একটা দ্বন্দ্বে চলে গিয়েছে বলে মন্তব্য করেন নাহিদ ইসলাম। এ দ্বন্দ্ব অযথা ও অপ্রয়োজনীয় বলে জানান তিনি।

উচ্চকক্ষে পিআর, দুই কক্ষে পিআরের দাবি এনে এ ইস্যুকে ঘুরিয়ে দেওয়ার একটা চেষ্টা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সনদে কী কী সংস্কার হবে, কী কী প্রস্তাব থাকবে এবং সেটার আইনি ভিত্তিটা কীভাবে হবে, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আদেশ জারি করবেন কি না- এগুলো প্রধান ইস্যু ও প্রধান তর্কের জায়গা। এ জায়গাগুলোয় একমত হলে গণভোট আমরা নির্বাচনের দিনও করতে পারি, আগেও করতে পারি। সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করতে পারি।’

এনসিপি ফেব্রুয়ারিতে যথাসময়ে নির্বাচন এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন চায় বলে উল্লেখ করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, চলতি মাসের মধ্যেই আদেশ জারি হয়ে যাওয়া উচিত। মৌলিক সংস্কারে যে জায়গাগুলোয় ঐকমত্য হয়েছে, আমরা মনে করি, সেসব বিষয়ে গণভোটে যাওয়া উচিত। গণভোট নির্বাচনের দিন হতে পারে, আগেও হতে পারে। এটা সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত।’

জুলাই সনদ অবশ্যই এবং অবশ্যই অধ্যাপক ইউনূসকে জারি করতে হবে বলে মন্তব্য করেন নাহিদ। তিনি বলেন, জুলাই সনদ যদি তথাকথিত রাষ্ট্রপতির থেকে জারি হয়, রাষ্ট্রপতি কার্যালয় থেকে থেকে জারি হয়, তাহলে এই সনদের কোনো আইনি ও রাজনৈতিক ভিত্তি তৈরি হবে না।

এক প্রশ্নের উত্তরে নাহিদ বলেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, রাজনৈতিক অনৈক্য তত তৈরি হবে, দ্বন্দ্ব-প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। তবে আওয়ামী লীগ প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে বলে জানান তিনি। নির্বাচনকে ভন্ডুল করার সব ধরনের ষড়যন্ত্র আওয়ামী লীগের জায়গা থেকে করা হবে বলে জানান নাহিদ। আওয়ামী লীগ বিভিন্ন দলে অনুপ্রবেশ করে নির্বাচন ভন্ডুলের ষড়যন্ত্র যাতে করতে না পারে, সে জন্য সব দলকে সতর্ক থাকতে আহ্বান জানান নাহিদ।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়ে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা মনে করি, এই যে গণহত্যা, এটা আসলে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ অপরাধ করেছে; শুধু ব্যক্তি হিসেবে শেখ হাসিনা নয়।’

ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও কথা বলেন নাহিদ। তিনি বলেন, ‘ভারত যদি বাংলাদেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চায়, তাহলে অবশ্যই ভারতকে আওয়ামী লীগের চোখে বাংলাদেশকে দেখার নীতি থেকে সরে আসতে হবে। তাদের বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে।’

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, তাঁর দল আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে। কোন আসন থেকে নির্বাচন করতে চান, জানতে চাইলে নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি যেহেতু ঢাকার সন্তান, আমাকে তো ঢাকা থেকেই হয়তো... আর আমরা এখন পর্যন্ত ৩০০ আসন ধরেই এগোচ্ছি। আমরা হয়তো এই মাসেই আমাদের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করব। তখনই আসলে দেখা যাবে যে আমাদের কে কোথা থেকে দাঁড়াচ্ছেন।’

এনসিপি কোনো জোটে যাচ্ছে কি না- এ প্রশ্নে নাহিদ বলেন, যদি সংস্কারের পক্ষে কেউ না থাকে, তাহলে তাদের সঙ্গে আমাদের জোটে যাওয়া সম্ভব নয়। আমাদের মৌলিক দাবিগুলোর সঙ্গে যারা কাছাকাছি আছে, এ রকম দলের সঙ্গে আমাদের যদি ঐক্যবদ্ধ হতে হয় বা কোনো ধরনের সমঝোতায় যেতে হয়, তাহলে সেটা আমরা বিবেচনায় রাখব।’ এনসিপির দলীয় প্রতীক নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সে প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনি কার্যক্রম থেকে দূরে রাখতেই বা বাধাগ্রস্ত করতেই নির্বাচন কমিশন এ কাজ করেছে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত