ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

চট্টগ্রামে বিএনপির প্রার্থী গুলিবিদ্ধ, নিহত এক

চট্টগ্রামে বিএনপির প্রার্থী গুলিবিদ্ধ, নিহত এক

চট্টগ্রামের বায়েজিদে জনসংযোগের সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন চট্টগ্রাম-৮ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী দলটির চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির আহবায়ক এরশাদ উল্লাহ। গতকাল বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন চালিতাতলী পূর্ব মসজিদের কাছে এ ঘটনা ঘটে। এসময় গুলিতে সরোয়ার বাবলা নামের একজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আরও কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন। বিবৃতিতে ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান বলেন, এরশাদ উল্লাহকে অনন্যা আবাসিক এলাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আমীরুল ইসলাম বলেন, এরশাদ উল্লাহ সাহেব নির্বাচনী প্রচারে চালিতাতলী এলাকায় এসেছিলেন। সেখানে সন্ত্রাসীদের মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় এরশাদ উল্লাহসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে তা আমরা তদন্ত করে দেখছি।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত এক নেতা বলেন, আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-পাঁচলাইশ) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া এরশাদ উল্লাহ জনসংযোগের জন্য চালিতাতলী এলাকায় গিয়েছিলেন। চালিতাতলী পূর্ব মসজিদ থেকে মাগরিবের নামাজ পড়ে বের হয়ে জনসংযোগ করার সময় সরোয়ার বাবলাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। এসময় পাশে থাকা এরশাদ উল্লাহ ও শান্ত নামে অপরজন গুলিবিদ্ধ হন। সারোয়ার হোসেন শীর্ষ সন্ত্রাসী আর শান্ত স্থানীয় ৩ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক।

সরোয়ার হোসেন বাবলা পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী : চট্টগ্রামে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর সঙ্গে নির্বাচনী গণসংযোগে অংশ নেওয়া ‘সন্ত্রাসী’ সরোয়ার হোসেন ওরফে বাবলা (৪৩) গুলিতে নিহত হন। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে চট্টগ্রাম নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তবে বিএনপি বলছে, সরোয়ার তাদের কেউ নন। জনসংযোগে শত শত লোক অংশ নেন। পুলিশ সূত্র জানায়, সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তার প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেনকে গুলি করা হয়।

এর আগে গতকাল বিকেলে নগরের চালিতাতলী এলাকায় চট্টগ্রাম- ৮ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর সঙ্গে প্রচারণায় অংশ নেন সরোয়ার। এতে এরশাদ উল্লাহ, সরোয়ার ও শান্ত নামের তিনজন গুলিতে আহত হন। তাদের মধ্যে সরোয়ারের মৃত্যু হয়। পুলিশ জানায়, সরোয়ারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অস্ত্র, হত্যাসহ ১৫টি মামলা রয়েছে। জানতে চাইলে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল কবির বলেন, গুলিতে আহত সরোয়ার মারা গেছেন।

এর আগে গত ৩০ মার্চ নগরের বাকলিয়া অ্যাকসেস রোড এলাকায় একটি প্রাইভেট কারে গুলি চালিয়ে সরোয়ারকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ওই সময় প্রাইভেট কারে থাকা দুজন ঘটনাস্থলে মারা যান। সেদিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান সরোয়ার। পরে এই মামলায় গ্রেপ্তার আসামিরা জবানবন্দিতে ও পুলিশকে জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের নির্দেশে সরোয়ারকে গুলি করা হয়।

২০০০ সালের ১২ জুলাই বহদ্দারহাটে সন্ত্রাসী হামলায় ছয় ছাত্রলীগ কর্মীসহ আটজন নিহত হন। সে ঘটনায় করা মামলায় সাজ্জাদ আলী (বড় সাজ্জাদ) সাজাপ্রাপ্ত হলেও পরে উচ্চ আদালত থেকে খালাস পান। এরপর তিনি বিদেশে পালিয়ে যান। তবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থামাননি। বিদেশ থেকে তার বাহিনীর মাধ্যমে বায়েজিদ, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও ও হাটহাজারীতে অপরাধ পরিচালনা করে আসছেন। তার এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছেন সাজ্জাদ হোসেন (ছোট সাজ্জাদ)। সরোয়ার এক মাস আগে বিয়ে করেন। তার বিয়েতে বিএনপি নেতা এরশাদ উল্লাহসহ বেশ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে বিএনপির বিভিন্ন সমাবেশে যোগ দিতে দেখা যায় সরোয়ারকে।

এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। বিএনপির প্রার্থী জনসংযোগ করার সময় সেখানে শতশত লোক অংশ নেন। সরোয়ার সেখানে অংশ নিলে সন্ত্রাসী দুটি দলের মধ্যে পূর্ববিরোধের জেরে তাকে গুলি করা হয়।

এরশাদ উল্লাহ বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ বলেন, এরশাদ উল্লাহ আশঙ্কামুক্ত রয়েছেন বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। তার পেটে ছররা গুলি লাগে।

এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণ করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব। এর মধ্যে এ ধরনের ঘটনা নিন্দনীয় ও দুঃখজনক।’ তিনি বলেন, যারা রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে, নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে এ ঘটনায় তাদের হাত থাকতে পারে। হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানান বিএনপির এই নেতা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত