ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

চট্টগ্রামের পর্যটনশিল্পে অপার সম্ভাবনা

চট্টগ্রামের পর্যটনশিল্পে অপার সম্ভাবনা

পাহাড়, সমুদ্র ও দৃষ্টিনন্দন পর্বতে ঘেরা অপরূপ নৈসর্গিক স্থান বন্দর নগরী চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম যেমন বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত, তেমনি এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য এ স্থান সার্বজনীন সুপরিচিত। অবকাশ পেলে দেশ-বিদেশ হতে মানুষ ছুটে আসে বন্দর নগরীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে। ঘন সবুজ সুউচ্চ পাহাড়ে ঘেরা, নদনদী বেষ্টিত চট্টগ্রাম প্রাচ্যের রানি হিসেবেই সুপরিচিত। পাহাড়, টিলা, লেক, সমুদ্র আর বৈচিত্র্যপূর্ণ গাছগাছালি সমৃদ্ধ এ অঞ্চল পর্যটকদের বরাবরই হাতছানি দেয়। চট্টগ্রাম পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের জায়গা পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, সুউচ্চ পাহাড় ঘেরা সাজেক, বান্দরবানের নীলগিরি, নীলাচল, খাগড়াছড়ি এবং রাঙামাটির দৃষ্টি নন্দন পর্যটনকেন্দ্রগুলো পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে। আরও আছে সোনাদিয়া দ্বীপ, সেন্টমার্টিন, ছেড়া দ্বীপ, হিমছড়ি, ইনানী, ডিসি ফ্লাওয়ার পার্ক, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। প্রাকৃতিক অপার সৌন্দর্যে ঘেরা এই পর্যন্ত কেন্দ্রগুলো চট্টগ্রামের অমূল্য সম্পদ। স্পটগুলো প্রায় সব ছুটির দিনে লোকে লোকারণ্য থাকে। কিন্তু সঠিক উদ্যোগ আর নানান প্রতিবন্ধকতায় চট্টগ্রামের অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পের তেমন বিকাশ ঘটেনি। চট্টগ্রামে বড় প্রতিবন্ধকতা থাকা খাওয়ার অসুবিধা ও নিরাপত্তাব্যবস্থা।

সীতাকুন্ড গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত : পর্যটনের অপার সম্ভাবনার দুয়ার নিয়ে বসে আছে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড। সাগর, নদী, পাহাড়, লেক, ঝর্ণা, বন, মন্দির, উপজাতি কি নেই এখানে। রয়েছে ভিন্ন ধরনের গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত, বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত, সদ্বীপ ঘাট, কুমিরা ঘাট, চন্দ্রনাথ মন্দির, মীরসরাইয়ে মহামায়া লেক, সুপ্তধারা ঝর্ণা, কমলদাহ ঝর্ণা, ইকো পার্কসহ আরও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের উপকরণ। মেঠো পথ পেরিয়ে যতদূর চোখ যায়, চারদিকে সবুজ আর সবুজ, মাথার উপর বিশাল আকাশ, তার নিচে কেওড়ার বন, খানিক দূরেই সমুদ্রের বিশাল জলরাশি। হৃদয় হরণ করা এমন রূপে বারবার হাতছানি দিয়ে পর্যটকদের ডাকছে সীতাকুন্ড অনিন্দ্যসুন্দর গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত। এটি অন্যান্য সৈকতের চেয়ে একেবারেই ভিন্ন ধরনের। সৈকতের অদূরে বেড়িবাঁধের ওপর দাঁড়াতেই চোখ পড়বে কেওড়া বনের ওপরে মায়াবী আকাশ। সৈকতে যাওয়ার আগে কেওড়া বনে ঘাসের বিছানা আর ঝিরঝিরি বাতাস। কেওড়া বন আর সবুজের মাঝে ছোট ছোট খাদ। সাগরের জলে পা ভেজাতে সৈকতের দিকে এগোতেই দর্শনার্থীদের কোলাহল। নৌকা নিয়ে গোধূলি বেলায় ভাটার অপেক্ষায় মাঝি। সমুদ্রের জলে সূর্যের রক্তিম আভা। জল আর আকাশ মিলেছে সোনালি রঙের ক্যানভাসে পরিণত হয়। মাঝ সাগরে দেখা মিলবে নানা ধরনের বড় বড় জাহাজের। আরেকটু সামনে এগুলোই দেখা যাবে জাহাজ ভাঙাশিল্প। পুরোনো জাহাজ ভেঙে বিভিন্ন ধরনের প্লেট তৈরি করা হচ্ছে।

সীতাকুন্ড বাজার পেরুলেই চন্দ্রনাথ মন্দির। উঁচু পাহাড় বেয়ে মন্দিরে উঠতে হয়। মন্দির থেকে সাগর ও আশপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ দৃশ্য দেখার সুযোগ রয়েছে। মন্দিরে উঠার পথে ছোট দুটি ঝর্ণাও দেখা যাবে। সুপ্তধারা ঝর্ণা শুধু বর্ষাকালে জেগে উঠে।

সীতাকুন্ড উপজেলার গুলিয়াখালীকে সরকার এখনও সৈকত হিসেবে ঘোষণা দেয়নি। যার কারণে এখানে যাওয়ার জন্য কোনো ধরনের অবকাঠামো তৈরি হয়নি। সরকার যদি সৈকত হিসেবে ঘোষণা করত তাহলে রাস্তাঘাট, আবাসিক ব্যবস্থা ও নিরাপত্তারব্যবস্থা করত পর্যটন কর্পোরেশন। পাশাপাশি এ সৈকতকে পর্যটনকেন্দ্র ঘোষণা করা হলে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত।

পরিবেশগত ঝুঁকি : অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা পর্যটনকেন্দ্র, হোটেল ও রিসোর্ট নির্মাণের ফলে বনভূমি উজাড় হচ্ছে, যা ভূমিধস এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির কারণ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এবং বৃক্ষনিধনের কারণে পাহাড়ি ঝর্ণাগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে, যা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকায় মারাত্মক পানি সংকট সৃষ্টি করছে। পর্যটন থেকে অর্জিত বিপুল আয়ের সুফল স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছাচ্ছে না। টেকসই পর্যটনের জন্য প্রয়োজনীয় সমন্বিত নীতিমালা ও দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতির অভাব রয়েছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি টেকসই পর্যটন মডেল প্রতিষ্ঠা করতে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

চট্টগ্রামের পর্যটনকেন্দ্রের প্রতিবন্ধকতা : যোগাযোগব্যবস্থার প্রতিবন্ধতা ও ভালোমানের খাবারের হোটেলেরসহ পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকলে বিনোদনকেন্দ্রগুলো পর্যটকবান্ধব হয়ে উঠত। শুধুমাত্র কক্সবাজারে পর্যাপ্ত হোটেল-মোটেল রিসোর্ট গড়ে উঠলেও দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্রসৈকতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থার অভাব রয়েছে। অপরদিকে রাঙামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি সদর ছাড়া আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটগুলোতে নেই, ভালো মানের খাবার এবং থাকার ব্যবস্থা। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা বিচ, পারকি বিচ, সীতাকুণ্ড এবং মীরসরাইয়ের পর্যটন স্পটগুলোতে খাবারের কোনো ব্যবস্থা নেই, নেই পর্যটকদের নিরাপত্তাব্যবস্থাও। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঘুরতে আসা পর্যটকরা এসব পর্যটন স্পটে এসে স্থানীয়দের দ্বারা নানা ধরনের হয়রানির শিকার হন। এসব হয়রানি বন্ধে টুরিস্ট পুলিশ নিয়োজিত থাকলেও বেশিরভাগ সময় তারা তা প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়। মূলত প্রশাসনের সঠিক নজরদারি ও জবাবদিহিতার অভাবে এমন ঘটনা হরহামেশাই ঘটতে থাকে। এতে করে পর্যটনশিল্পে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত