ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বান্দরবানের পর্যটনে নানা বাধা

বান্দরবানের পর্যটনে নানা বাধা

মেঘের রাজ্য ও পাহাড়ের রানী খ্যাত পার্বত্য জেলা বান্দরবান দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য। নীলগিরি, নীলাচল, নাফাখুম, দেবতাখুম, রুমা ও বগালেকের মতো মনোরম স্থানের অবস্থান এই জেলায়। তবু নানা অবকাঠামোগত দুর্বলতা, নিরাপত্তা আশঙ্কা ও পরিকল্পনাহীন উন্নয়নের কারণে বান্দরবানের পর্যটন শিল্প আশানুরূপ এগোতে পারছে না। জেলার পর্যটননির্ভর উপজেলা রুমা, থানচি ও আলীকদম দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত। সংযোগ সড়কগুলোর বেহাল অবস্থার কারণে পর্যটকদের যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। স্থানীয়রা জানান, এসব রাস্তায় নিয়মিত সংস্কার না হওয়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ছে। এই বিষয়ে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, ‘বান্দরবানের পর্যটন আমাদের অর্থনীতি ও সংস্কৃতির সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। কিছু নিরাপত্তাজনিত কারণে সাময়িক স্থবিরতা দেখা দিয়েছিল, তবে এখন পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যোগাযোগ, আবাসন ও প্রচারণা জোরদারে কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ ও স্থানীয় অংশগ্রহণ বাড়ানোই এখন মূল লক্ষ্য।’ পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মতে, জেলার অনেক জায়গায় এখনও মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন। রুমার বগালেক ও কেওক্রাডং এলাকায় মানসম্পন্ন রিসোর্ট না থাকায় পর্যটকদের রাতযাপনেও সমস্যা হয়।

টুরিস্ট পুলিশ বান্দরবান রিজিয়নের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার হাসান ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে ট্যুরিস্ট পুলিশ সব সময় সরব রয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বান্দরবান জেলা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে দুর্গম এলাকায় অবস্থিত পর্যটন কেন্দ্রগুলিতেও আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছি। নিরাপত্তা সুবিধার কারণে গত দুর্গা পূজার ছুটিতে বান্দরবানে পর্যটকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুর্গম এলাকার পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করা প্রয়োজন। পর্যটকরা রাতে পাহাড়ি এলাকায় ঘুরাফেরা বা রাত্রিযাপনকে অনিরাপদ মনে করেন। তাই আমরা কাজ করছি যাতে পর্যটকরা দিনের মতো রাতেও নির্ভয়ে ঘুরতে পারেন। এরজন্য আমাদের অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন জরুরি।’

হোটেল রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বেশিরভাগ পর্যটনকেন্দ্র প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়ায় সেখানে পর্যাপ্ত পরিবহন নেই। নিরাপত্তা অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগকারীরাও আগ্রহ হারাচ্ছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বান্দরবানের হোটেল, রিসোর্ট ও পরিবহন ভাড়া অত্যন্ত বেশি। প্রশাসনের উচিত এসব খাতে নীতিমালা প্রণয়ন করে মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা। রুমার কেওক্রাডং যেভাবে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে, ঠিক তেমনভাবে থানচির নাফাকুম, তিন্দুসহ অন্যান্য নতুন পর্যটনকেন্দ্রও পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করলে বান্দরবানের পর্যটন খাত আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।’

ঢাকার মিরপুর থেকে বেড়াতে আসা কনটেন্ট ক্রিয়েটর লাবিব হোসেন জয় বলেন, ‘বান্দরবান সদর থেকে কেওক্রাডং যেতে ভাড়া এত বেশি যে অনেকের পক্ষে সম্ভব হয় না। পরিবহন ভাড়া নিয়ন্ত্রণে আনলে আরও বেশি পর্যটক এখানে আসবেন।’ স্থানীয় সমাজসেবক আশরাফুর রহমান মনে করেন, সমন্বয়ের অভাবে বান্দরবানে এখনও পর্যটনবান্ধব শহর গড়ে ওঠেনি। তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিলে পর্যটন খাত ঘুরে দাঁড়াবে।’ অন্যদিকে, ভ্রমণপিপাসু নিত্যানন্দ সাহা বলেন, ‘রুমা থেকে কেওক্রাডং যাওয়ার একটিই নির্দিষ্ট পথ রয়েছে, তাই গাইড বাধ্যতামূলক করা অযৌক্তিক। বরং সড়ক ও পরিবহন উন্নয়নে নজর দেওয়া উচিত।’ পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মতে, টেকসই অবকাঠামো, নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ও পরিকল্পিত বিনিয়োগ নিশ্চিত করা গেলে বান্দরবান হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের ‘ইকোট্যুরিজম রাজধানী’।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত