ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

১২৫ আসনে প্রার্থী ঘোষণা এনসিপির

* আসন কয়টি পাবে, সে হিসাব করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না এনসিপি * বিএনপি-জামায়াতের বিদ্রোহী প্রার্থীদের জন্য এনসিপির দরজা খোলা : নাসীরুদ্দীন * কথা রাখেনি এনসিপি, খালেদা জিয়ার আসনে দিল প্রার্থী
১২৫ আসনে প্রার্থী ঘোষণা এনসিপির

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রথম ধাপে ১২৫ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া আন্দোলনকারীদের এই দলটি প্রাথমিকভাবে যাচাই-বাছাই শেষে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। গতকাল বুধবার সকাল এগারোটায় ঢাকার বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন মনোনয়ন ঘোষণা করেন।

দলটির শীর্ষ দুইজন নেতার মধ্যে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঢাকা-১১ আসনে এবং সদস্য সচিব আখতার হোসেন রংপুর-৪ আসন থেকে আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন। মনোনয়ন ঘোষণার পরে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা ক্ষমতার জন্য, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এই নির্বাচন করছি না। সিট কয়টা পাবো বা পাবো না এটা বিবেচনা করেও নির্বাচন করছি না।’ ঢাকা-১৮ আসনে মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারিকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ নোয়াখালি-৬ আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব ঢাকা-১৬ আসন থেকে প্রথম জাতীয় নির্বাচনটি করতে যাচ্ছেন। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ কুমিল্লা-৪ আসনে এবং দলটির উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম পঞ্চগড়-১ আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন। এছাড়া ঢাকা- ৯ আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা। নরসিংদী-২ আসন থেকে নির্বাচন করবেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার। ঢাকা-১৭ আসনে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির আরেক নেত্রী তাসনুভা জাবীন। টাঙ্গাইল-১ আসনে অভ্যুত্থানের সময় নিহত সাজিদের পরিবারের সদস্য সাইদুল ইসলামকে মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। দিনাজপুর-৩ আসনে শাপলা কলির প্রার্থী আ হ ম শামসুল মুকতাদিরের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি এনসিপির দিনাজপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক। এই আসনে বিএনপির ধানের শীষ নিয়ে লড়ার কথা খালেদা জিয়ার। বিএনপি ঘোষিত প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী, ফেনী-১, দিনাজপুর-৩ ও বগুড়া-৭ আসন থেকে ভোট করবেন তিনি। পটুয়াখালী-১ আসনে আইনজীবী জহিরুল ইসলাম মুসা, পটুয়াখালী-২ আসনে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহিনকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ঝালকাঠি-১ আসন থেকে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এনসিপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন মাহমুদা আলম মিতু। গতবছরের জুলাইয়ে গনঅভ্যুত্থানে আহত খোকন চন্দ্র বর্মণ শেরপুর- ২ আসনে এনসিপির হয়ে নির্বাচন করবেন।

মনোনয়ন ঘোষণার আগে সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘যাদের তালিকা প্রকাশ করবো তাদের বিরুদ্ধে যদি জনগণের পক্ষ থেকে যদি কোনো ধরনের অভিযোগ উত্থাপিত হয়, কোনো ধরনের দুর্নীতির, রাষ্ট্রবিরোধী, ঋণখেলাপী, সংস্কারবিরোধী অভিযোগ আসে তাহলে নাগরিক পার্টি যাচাই বাছাই শেষে মনোনয়ন বাতিল করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে।’ প্রার্থীদের নাম ঘোষণার আগে এনসিপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এবার ব্যালট রেভল্যুশনে যাচ্ছেন বলে জানান। নির্বাচনের দিন অনুষ্ঠেয় গণভোটে ‘হ্যাঁ’ এর পক্ষে ভোট দিতে ভোটারদের অনুরোধ জানান পাটওয়ারী। একইসাথে দলীয় প্রতীক শাপলা কলিতে ভোট চাওয়া এবং গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাওয়ার প্রচারণা চালাতে প্রার্থীদের নির্দেশনা দেন তিনি।

নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানান, ‘আমাদের নির্বাচনের লক্ষ্য ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে চাচ্ছি, যারা জনগণের কাছে যাবে, ‘হ্যাঁ’ এর পক্ষে প্রচারণা করবে।’ তিনি জানান, এই হ্যাঁ অর্থ সংস্কার।

প্রাথমিক তালিকায় যারা মনোনীত হননি, তাদের অবশ্যই বিবেচনা করার আশ্বাস দেন নাহিদ ইসলাম।

আসন কয়টি পাবে, সে হিসাব করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না এনসিপি- নাহিদ : নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে প্রার্থী ঘোষণা শুরু করলেও ভোটে জেতাই নির্বাচনের মূল লক্ষ্য নয় বলে জানান এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। গতকাল সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেন, নির্বাচনে আসন জেতাই যদি তাঁদের লক্ষ্য হতো, তাহলে তাঁরা কোনো না কোনো জোটে ভিড়তেন। নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে এখনো পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন জায়গায় দেখছি যে আমাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে এবং নির্বাচনী বিধিবিধান লঙ্ঘন করেই নির্বাচনী প্রচারণার কাজ পোস্টারিং বা টাকা খরচের যে বিষয়গুলো, এগুলো কিন্তু আসতেছে। আমরা নির্বাচন কমিশনে বলে আসছি যে প্রার্থীদের যেই খরচের হিসাব, সেটা যাতে যথাযথভাবে নির্বাচন কমিশন যাচাই–বাছাই করে আদায় করে নেয়। আমরা দেখছি বিভিন্ন জায়গায় অস্ত্রের মহড়া হচ্ছে। বিএনপি–জামায়াত উভয় দল থেকে আমরা এই ধরনের সংস্কৃতি দেখছি।’

বিভিন্ন দলের মনোনয়নপ্রক্রিয়ার সমালোচনা করে নাহিদ বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় মাফিয়াদের নমিনেশন দেওয়া হয়েছে। ঋণখেলাপিকে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে কি না, এর ওপর নির্ভর করবে কমিশন কতটা সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় কাজ করছে।’

বিপরীতে নিজেদের প্রার্থী তালিকা নিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম যে আমাদের এই যে মনোনয়ন তালিকাটা হবে অন্তর্ভুক্তিমূলকৃসেখানে নারী-পুরুষ, সংখ্যালঘু, সংখ্যাগুরু, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সবকিছুর সমন্বয় আমরা করব।’ আগামী নির্বাচনের তাৎপর্য তুলে ধরে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এবারের নির্বাচনটা গণভোট, এটা যাতে আমরা কেউ ভুলে না যাই। বলা হচ্ছে, প্রার্থী দেখে ভোট দেবেন, নাকি মার্কা দেখে ভোট দেবেন। কিন্তু ভোটটা যে গণভোট, ভোটের অন্যতম প্রধান প্রশ্ন হচ্ছে হ্যাঁ অথবা না, এই কথাটাই বলার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতেছি। আপনারা অনেকে জিজ্ঞেস করেন যে আমরা কয়টা সিট পাব বা আমরা কয়টা সিট প্রত্যাশা করি। আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতেছি না, এটা খুবই পরিষ্কার। সিট কয়টা পাব কি পাব না, সেটা বিবেচনায় রেখেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতেছি না। সিট নিশ্চিত করতে হলে আমরা কোনো না কোনো জোটের সঙ্গে চলে যাইতাম।’ রাজনৈতিক দল হিসেবে এনসিপি গঠনের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে অভ্যুত্থানের এই ছাত্রনেতা বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি, যদি গণঅভ্যুত্থানের পরে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী, সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী, তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী রাজনীতি পুনর্গঠিত করত, নিজেদের দলের ভেতরে সংস্কার আনত, নিজেদের নীতি–আদর্শকে আরও ঠিক করত, তাহলে এনসিপির জন্মের প্রয়োজন ছিল না। এনসিপি সাত মাস অপেক্ষা করেছে, যাতে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো একটা সমঝোতায় এসে আমাদের তরুণ প্রজন্মের গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করে। যেহেতু তারা সেটা করে নাই। যেহেতু তারা নিজেদের দলাদলি–অন্তর্দ্বন্দ্বে ব্যস্ত ছিল, নিজেদের দলীয় এজেন্ডাকে প্রধান করে তুলেছে, তার ফলেই কিন্তু এনসিপির জন্ম হয়েছে।’

অন্য দলগুলোর সমালোচনা করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি যে সংস্কার ছিল গণ–অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান এজেন্ডা। দ্বিতীয় এজেন্ডা ছিল বিচার। এই যে সামনে একটা গণভোট হবে এবং গণভোটে যে সংস্কারপ্রক্রিয়া বাস্তবায়ন হবে, এই আলাপটাই কোনো রাজনৈতিক দল করছে না। সবাই তার নিজের দলের যার যার যে এজেন্ডা, সেই এজেন্ডাকে নিয়ে ক্যাম্পেইন করতেছে বা সেটাকে তুলে ধরতেছে।’

বিএনপি-জামায়াতের বিদ্রোহী প্রার্থীদের জন্য এনসিপির দরজা খোলা- নাসীরুদ্দীন : বুধবার রাজধানীর বাংলামোটরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, সোয়াশো আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ফাঁকা আসনগুলো দল, জোট, এবং বিএনপি-জামায়াতের আগ্রহী বিদ্রোহী প্রার্থীদের জন্য ফাঁকা রাখা হয়েছে। প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা ঘোষণার আগে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জানিয়েছে যে, তারা বিএনপি এবং জামায়াত ইসলামীর উভয় দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়ন দিতে প্রস্তুত। তবে যারা রাজনৈতিক সংস্কার সমর্থন করেন এবং তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী যোগাযোগ বজায় রাখেন তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে।

বিএনপি-জামায়াতের বিদ্রোহীদের বিষয়ে নাসীরুদ্দীন বলেন, ‘দ্বিতীয় ধাপে বিএনপির যারা বিদ্রোহী কিন্তু সংস্কারের পক্ষে তাদেরকে মনোনয়ন দেব। জামায়াতের যারা বিদ্রোহী তাদেরকেও মনোনয়ন দেব। তাছাড়া যারা টাকার কাছে হেরে গেছে কিন্তু জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ কানেকশন আছে, সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে চান তাদের জন্য এনসিপির দরজা খোলা আছে বলেও জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী।

অন্য দলের বিদ্রোহীরা কতজন যোগাযোগ করেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, ‘সংখ্যাটা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে অনেকেই যোগাযোগ করছেন। দেখেন না মাঠে আগুন জ্বলা বন্ধ হয়েছে মানে যোগাযোগ শুরু করেছে।

কথা রাখেনি এনসিপি, খালেদা জিয়ার আসনে দিল প্রার্থী : গত নভেম্বরের শুরুতেই এনসিপি ঘোষণা দিয়েছিল, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আসনে প্রার্থী দেবে তারা। কিন্তু সেই কথা রাখেনি দলটি। খালেদা জিয়ার একটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে এনসিপি। গত ৩ নভেম্বর বিএনপি প্রথম ধাপে ২৩৭টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে। এর একদিনের মাথায় ৪ নভেম্বর এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানিয়েছিলেন, তার দল প্রার্থী দেবে না খালেদা জিয়ার আসনগুলোতে। পরে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামও বলেছেন, খালেদা জিয়ার সম্মানে তার আসনে এনসিপি কোনো প্রার্থী দেবে না। তাতে দলটি বেশ প্রশংসাও কুড়িয়েছিল নেটিজেনদের কাছ থেকে। কিন্তু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগমুহূর্তে এসে সেই কথা রাখল না দলটি। গতকাল বুধবার এনসিপি যে ১২৫টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে, তাতে দিনাজপুর-৩ আসনও রয়েছে। সেখানে শাপলা কলির প্রার্থী আ হ ম শামসুল মুকতাদির। তিনি এনসিপির দিনাজপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক। আসনটিতে ধানের শীষ নিয়ে লড়ার কথা খালেদা জিয়ার। বিএনপি ঘোষিত প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী, ফেনী-১, দিনাজপুর-৩ ও বগুড়া-৭ আসন থেকে ভোট করবেন তিনি। এছাড়া দিনাজপুর-৩ আসনে জামায়াতের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মইনুল আলম।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত