তাইওয়ানে ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে গুপ্তচর। অভিযোগ আছে, সেখানকার সশস্ত্র বাহিনীতে অনুপ্রবেশ ঘটেছে চীনের। তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ড দাবি করে চীন। তারা একে নিজেদের দখলে নেয়ার জন্য একাধিকবার শক্তি প্রয়োগের হুমকি দিয়েছে। তবে তাদের সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তো তাইওয়ান আক্রান্ত হলে তাদের পক্ষ নেয়ার ঘোষণাই দিয়েছিলেন। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের একরকম উত্তেজনা আছে। ২০২১ সালে তাইওয়ানের একজন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল কাও আন-কুও সেনাবাহিনীর পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেশটির সরকারকে উৎখাতের আহ্বান জানান সেনাবাহিনীকে। তিনি আরো বলেন, ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টি (ডিপিপি) ‘জাতিগত বিশ্বাসঘাতকে’ পূর্ণ। তারা তাইওয়ানকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিক্রি করে দেবে। তারা চীনা জাতির বৃহত্তর পুনরুত্থানে বাধা সৃষ্টি করছে। ওই সময়ে তার এ বক্তব্য তেমন মনোযোগ কাড়েনি।
উল্লেখ্য, তাইওয়ানের সমাজব্যবস্থায় বেশ সমর্থন আছে প্রবীণ নেতা কাও আন-কুও’র। তিনি চীনা নেতাদের সমর্থন করে চীন ও তাইওয়ানকে একত্রীকরণপন্থি। তার বয়স এখন ৮০ বছর। কিন্তু এ বছর জানুয়ারিতে সামরিক গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন তিনি। প্রসিকিউটরদের অভিযোগ- তিনি এবং অন্য ৫ জন একটি সশস্ত্র গ্রুপ সৃষ্টি করেছেন। তারা তাইওয়ানে চীনা সেনাদের আগ্রাসনের জন্য কাজ করছেন। সামরিক মহড়াকে শনাক্ত করতে তারা ড্রোন ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ আছে। ড্রোন ব্যবহার করে যেসব ডাটা পেতেন তা তারা চীনের কাছে পাঠিয়ে দিতেন এবং তাদের আরো সহযোগী সংগ্রহের চেষ্টা করছিলেন।
চীনের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত তাইওয়ানের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ পদধারী কাও আন-কুও। তবে তিনিই যে প্রথম এ কাজ করছেন এমন না। রাজধানী তাইপে’তে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস এবং তাইওয়ানের সামরিক ঘাঁটির ছবি ও মানচিত্র চীনা এজেন্টদের কাছে পাঠিয়েছেন বলে জানুয়ারিতে বর্ষীয়ান আরেকটি গ্রুপকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। চীনের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গত বছর ৬৪ জনের বিচার করেছে তাইওয়ানের আদালত। তার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ বর্তমান ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তা। তাইওয়ানের ন্যাশনাল সিকিউরিটি ব্যুরোর মতে, গত চার বছরে এমন বিচার চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবু চীনের অনুপ্রবেশ সুযোগ এবং কৌশলের সঙ্গে বিকশিত হচ্ছে।
সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে তাইওয়ানের কর্মকর্তা ও সেনাদের দলে ভেড়ানোর জন্য অনলাইনে ১৭০৬ বার চেষ্টা করেছে চীনা গোয়েন্দারা। এর ফলে তাইওয়ানের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য সৃষ্টি হয়েছে এক অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জ। অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফরম এবং আন্ডারগ্রাউন্ড গ্যাংদের মতো চ্যানেলের মাধ্যমে তাইওয়ানের পদস্থ সেনা কর্মকর্তা ও উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের দলে ভেড়ানোর টার্গেট করছে চীন। চীনের লক্ষ্যও পরিবর্তিত হচ্ছে। তারা গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা কৌশল চুরি থেকে শুরু করে সেনাদের ভাগিয়ে নেয়ার মতো মনস্তাত্ত্বিক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।