প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ১৩ জুলাই, ২০২৫
কোনো জাতির মাঝে আল্লাহর অবাধ্যতা বেড়ে গেলে, জুলুমণ্ডঅত্যাচার বেড়ে গেলে, শাসনের বদলে শোষণ হলে ও অবাধে সবাই পাপাচারে লিপ্ত হলে আল্লাহ? নানাভাবে তাদের শাস্তি দেন। ভূমিকম্প, ঝড় তুফান, জলোচ্ছ্বাস, দুর্ভিক্ষ ও মহামারি ইত্যাদি এসবেরই ফল। মানুষ মানুষের হক বা অধিকার নষ্ট করার অর্থই হলো তার জানমাল ও ইজ্জতের ওপর আক্রমণ করা। এরই নাম জুলুম। জুলুম যে কতো বড় অপরাধ, এ প্রসঙ্গে সুফিয়ান সাওরি (রা.) বলেন, এক সময় বনি ইসরাইলের মাঝে এমন দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল যে, তারা তখন নিরুপায় হয়ে পথের মৃত জানোয়ার খেতে শুরু করল। ক্রমে পরিস্থিতির এমন অবনতি ঘটল যে, মানুষ মানুষকে ধরে খাওয়ার উপক্রম হয়ে গেল। তখন সাধারণ মানুষেরা পেরেশান হয়ে মাঠে-ময়দানে, পাহাড়ের চূড়ায় আশ্রয় নিতে শুরু করল। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করার জন্য বাড়িঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল। তখন আল্লাহতায়ালা সে যুগের নবীকে অহির মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন, ‘আপনি তাদেরকে সতর্ক করিয়ে দিন যে, আমার কাছে দোয়া করতে করতে যদি তাদের মুখের ও চোখের পানি শুকিয়েও যায় এবং যদি তাদের প্রার্থনার হাত আকাশ পর্যন্ত উঠে যায়, তবুও কারও ক্রন্দনে আমি আমার করুণা বর্ষণ করব না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা একে অন্যের ওপর জুলুম করা থেকে বিরত না থাকবে।’ অতঃপর নবী তার জাতিকে এ কথা জানিয়ে দেন। তা ছাড়া দুর্ভিক্ষ হলো, কোনো এলাকার ব্যাপক খাদ্য ঘাটতি। সাধারণত ফসলহানি, যুদ্ধ, সরকারের নীতিগত ব্যর্থতা ইত্যাদি কারণে দুর্ভিক্ষ সংগঠিত হয়। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ, গবাদি পশুর ও পোকার আক্রমণ ইত্যাদি কারণেও দুর্ভিক্ষ সংগঠিত হয়। তবে চিরন্তন সত্য হচ্ছে, মজলুমের দোয়া আল্লাহর দরবারে সরাসরি কবুল হয়ে যায়। তাই মজলুমের দোয়াকে ভয় করতে বলা হয়েছে। সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সা.) মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.)-কে নসিহত করতে গিয়ে বলেন, ‘তুমি মজলুমের বদদোয়াকে ভয় করো। কেননা, তার (বদ দোয়া) ও আল্লাহর মাঝে কোনো পর্দা থাকে না।’ (বোখারি : ১৪৯৬)। আরেক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, তোমাদের শাসকবর্গ যখন আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা না করে এবং আল্লাহর নাজিলকৃত বিধানকে গ্রহণ না করে, তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে দেন। আর যুদ্ধ দুর্ভিক্ষ নিয়ে আসে। সুরা বাকারার ৫৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘জালেমদের যা কিছু বলা হয়েছিল, তা থেকে তারা কথা পাল্টে ফেলেছে। আমার নির্দেশ অমান্য করার কারণে আমি আসমান থেকে তাদের ওপর শাস্তি অবতীর্ণ করেছি।’ আজাব দ্বারা মহামারি হতে পারে, প্রাকৃতিক দুর্যোগও হতে পারে এবং দুর্ভিক্ষও হতে পারে। এতে স্পষ্ট বোঝা যায়, যখন জমিনে জুলুমণ্ডঅত্যাচার এবং শোষণ শুরু হয়, তখনই দুর্ভিক্ষের আবির্ভাব ঘটে।