ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মসজিদভিত্তিক সমাজব্যবস্থা

হুমাইদুল্লাহ তাকরিম
মসজিদভিত্তিক সমাজব্যবস্থা

মসজিদ মোমিনের ঠিকানা। ইসলামের সূচনালগ্ন থেকেই মসজিদ সমাজ গঠনের মূলভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় মসজিদে নববি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি আদর্শ সমাজের ভিত্তি স্থাপন করেন। যেখানে ইবাদত, শিক্ষা, সমাজকল্যাণ ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড একত্রিত হয়। তার দেখানো পথ অনুসরণে যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর নানা প্রান্তে মসজিদভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে। গবেষণায় দেখা যায়, মসজিদভিত্তিক সমাজের দিকে মানুষ যত বেশি ঝুঁকেছে, সামাজিক শৃঙ্খলা, শান্তি, পারস্পরিক সৌহার্দ ও সম্প্রীতি ততই সুসংহত হয়েছে। এ কথা জোর দিয়ে বলা যায়, আজকের বাংলাদেশেও মসজিদকেন্দ্রিক সমাজ বিনির্মাণের দিকে আমরা যতটা এগিয়ে যাব, সামাজিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক মুক্তি, সাম্য ও মানবিক মর্যাদা ততই মজবুত হবে।

মসজিদকেন্দ্রিক নিয়মিত সদকা সংগ্রহ ও বণ্টন : বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ নিম্ন আয়ের। দরিদ্র জনগণের অর্থনৈতিক জীবনের মুক্তির লক্ষ্যে মসজিদকেন্দ্রিক ইসলামের আর্থিক ব্যবস্থাকে কাজে লাগানো প্রয়োজন। অধিকাংশ জনগণকে দরিদ্র রেখে ও আয়-বৈষম্য বজায় রেখে কোনো দেশই বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারে না। আল্লাহ জাকাতের প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘আমি যদি তাদেরকে (মোমিনদের) পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করি, তাহলে তারা নামাজ কায়েম করবে, জাকাত আদায় করবে, সৎকাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে, আর সব কাজের চূড়ান্ত পরিণতি একান্তই আল্লাহর ইচ্ছাধীন।’ (সুরা হজ : ৪১)। তাই সাধারণ জনগণের মাঝে এ ধারণার ব্যাপক বিস্তার ঘটানো জরুরি, ইসলামে দারিদ্র্য বিমোচনের সুনিশ্চিত সামাধান রয়েছে। সেজন্য দরিদ্র জনগণ, মিসকিন ও মুসাফিরের মাঝে মসজিদকেন্দ্রিক নিয়মিত সদকা সংগ্রহ ও বণ্টন করতে হবে। এজন্য মসজিদ কর্তৃপক্ষ দান-সদকা গ্রহণকারীদের তথ্য বা ডাটা সংগ্রহ করে রাখতে পারেন। পুরো সপ্তাহে আমরা বিচ্ছিন্নভাবে কত টাকাই তো দান করি! কিন্তু প্রত্যেকের টাকা একত্রিত করলে সপ্তাহে না হোক, মাসে অন্তত একজন অভাবীকে স্থায়ীভাবে সামর্থ্যবান করে তোলা সম্ভব।

মসজিদভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবার কার্যক্রম : মসজিদকেন্দ্রিক ইসলামের আর্থিক ব্যবস্থাকে মজবুত করতে লোকজন থেকে বার্ষিক জাকাত সংগ্রহ করা যেতে পারে। ব্যক্তিগতভাবে যারা জাকাত দেয়, তাদের বিষয়টি বোঝাতে হবে- তাদের থেকে যে অংশটি সংগ্রহ করা হবে, তা দিয়ে সামষ্টিক কাজে লাগানো হবে। জাকাতের অর্থে বেকার-অসহায় লোকজনকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে পারলে সেটা টেকসই দারিদ্র্য বিমোচনের কাজ হয়। আজকের বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্যের অবস্থা হুমকির সম্মুখীন। দেশের দরিদ্র জনসংখ্যার একটি বড় অংশ অর্থের অভাবে চিকিৎসাসেবা নিতে পারে না ও ওষুধ কিনতে পারে না। চাহিদার তুলনায় সরকারি চিকিৎসাব্যবস্থাও অপ্রতুল। দেশ ও দেশের বাইরের সামর্থ্যবান ব্যক্তি, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে মসজিদের মাধ্যমে জনগণের জন্য এ সেবা-কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব।

সমাজে দু’চারজন মহৎ চিকিৎসক নিশ্চয় আছেন, যারা মাসে একটি দিন বিনামূল্যে রোগী দেখে চিকিৎসাপত্র বা প্রেসক্রিপশন দেবেন। চারজন চিকিৎসক যদি পাওয়া যায়, তাহলে প্রতি মাসে চার সপ্তাহে একটি নির্দিষ্ট দিন এ সেবার ব্যবস্থা করা যেতে পরে। সেই সঙ্গে দাতব্য প্রতিষ্ঠান, আগ্রহী ওষুধ কোম্পানি ও ব্যক্তি থেকে ওষুধ সংগ্রহ করে বণ্টন করা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক অনুশীলন ও জীবনযাপন পদ্ধতির প্রতি বিশেষ পরামর্শ দেওয়া যায়। হাদিসে কুদসিতে বলা হয়েছে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, ‘হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে দেখতে যাওনি।’ বান্দা বলবে, ‘আপনি তো বিশ্বজাহানের প্রতিপালক। আমি আপনাকে কীভাবে দেখতে যেতে পারি?’ আল্লাহ বলবেন, ‘আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল। তুমি তাকে দেখতে গেলে সেখানে আমাকে পেতে।’ (মুসলিম : ২১৬২)।

লেখক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত