ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সামাজিক বন্ধন তৈরির কারিগর

আবু তাকরিম
সামাজিক বন্ধন তৈরির কারিগর

রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় হিজরত করার পর সর্বপ্রথম কাজ হিসেবে মসজিদে নববি নির্মাণ করেন। এ পদক্ষেপ থেকেই বোঝা যায়, একটি ইসলামি সমাজ গঠনের জন্য মসজিদ কতটা অপরিহার্য। এটি শুধু নামাজ আদায়ের জায়গা নয়, বরং একটি সমাজের আত্মা ও চেতনার উৎস।

সহযোগিতা ও সংহতির কেন্দ্র : মুসলমানরা পাঁচবার একত্র হয়ে নামাজ পড়েন। যার মাধ্যমে তাদের মধ্যে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কেউ যদি দুঃখে বা সমস্যায় পড়ে, তার পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রথমেই এগিয়ে আসে মসজিদের ভাইয়েরা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মোমিনরা পারস্পরিক দয়া, মমতা ও সহানুভূতির দিক থেকে একটি দেহের মতো; যদি এর কোনো অঙ্গ ব্যথিত হয়, তাহলে সমস্ত দেহ নিদ্রাহীন ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।’ (মুসলিম : ২৫৮৬)।

বন্ধন ও ভ্রাতৃত্বের মাধ্যম : প্রতিদিন মসজিদে একত্র হওয়ার ফলে এলাকার বাসিন্দারা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হন। এ পরিচয় ধীরে ধীরে বন্ধনে রূপ নেয়। সেই বন্ধন পরিণত হয় ভ্রাতৃত্বে। এ সম্পর্ক শুধুই দুনিয়াবি নয়, বরং তা ঈমানভিত্তিক, আল্লাহর জন্য ভালোবাসা। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় মোমিনরা পরস্পরের ভাই।’ (সুরা হুজুরাত : ১০)। এ ভ্রাতৃত্বের ফলে সমাজে সহনশীলতা, সহানুভূতি ও একতা গড়ে ওঠে।

বিভেদ ভুলে একত্র হওয়ার সুযোগ : মসজিদ ইসলামি সমাজের এমন এক প্রতিষ্ঠান, যেখানে ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, বয়স্ক-তরুণ- সবাই সমানভাবে অংশ নেয়। এখানে কোনো বর্ণ, জাতি, অর্থ বা সামাজিক অবস্থানের পার্থক্য নেই।

কাতারে দাঁড়ানোর মুহূর্তেই বিলুপ্ত হয় অহংকার, শ্রেণিবৈষম্য ও সামাজিক ভেদাভেদ। এভাবেই একটি সাম্যভিত্তিক সমাজ গঠনের তাগিদ অনুভূত হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘একজন আরবের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই অনারবের ওপর, আরব না হওয়ার কারণে কারো কোনো তুচ্ছতা নেই, না সাদার ওপর কালোর, না কালোর ওপর সাদার, শ্রেষ্ঠতা কেবল তাকওয়ার ভিত্তিতে।’ (শোআবুল ঈমান : ৫১৩৭)।

বিপদে সহানুভূতির ছায়া : কোনো ব্যক্তি যখন বিপদে পড়ে, অসুস্থ হয়, মৃত্যুশোক, আর্থিক ক্ষতি বা একাকিত্বে ভোগে, মসজিদের মুসল্লিরা তখন তার পাশে এসে দাঁড়ায়। কেউ অসুস্থ হলে খোঁজখবর নেওয়া, কেউ বিদেশে থাকলে তার পরিবারের খোঁজ রাখা- এ সবকিছুই একটি সুসংগঠিত মসজিদভিত্তিক সমাজে ঘটে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মোমিনদের দৃষ্টান্ত তাদের পারস্পরিক সম্প্রীতি, দয়ার্দ্রতা ও সহমর্মিতার দিক দিয়ে একটি মানবদেহের মতো। যখন তার একটি অঙ্গ অসুস্থ হয়, তখন তার সমগ্র দেহ তাপ ও অনিদ্রা ডেকে আনে।’ (মুসলিম : ২৫৮৬)।

একাকিত্ব দূরীকরণের অনুভব : কোনো ব্যক্তি যদি একা হয়, পরিবার না থাকে, তাহলে মসজিদ তাকে সামাজিক নিরাপত্তা দেয়। অন্য মুসল্লিরা তার খোঁজ নেয়, তার সঙ্গে কথা বলে, তাকে ভালোবাসে। মসজিদ তাকে একটি বৃহৎ পরিবারের সদস্যরূপে গ্রহণ করে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, একজন কালো অথবা একজন যুবক মসজিদ ঝাড়ু দিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে কয়েক দিন না পেয়ে তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন।

লোকেরা তাকে জানাল, সে মারা গেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তোমরা আমাকে জানাওনি কেন?’ বর্ণনাকারী বলেন, তারা যেন তার ব্যাপারটি তুচ্ছ মনে করেছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তোমরা আমাকে তার কবর দেখিয়ে দাও।’ তারা (কবরটি) দেখিয়ে দিলেন। তিনি ওই কবরটি সামনে রেখে জানাজার নামাজ আদায় করলেন। তারপর বললেন, ‘এ কবরগুলো তাদের জন্য অত্যন্ত অন্ধকার। আল্লাহ আমার নামাজের কারণে তাদের জন্য কবরকে আলোকোজ্জ্বল করে দেবেন।’ (মুসলিম : ৯৫৬)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত