প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ১৫ আগস্ট, ২০২৫
প্রতিবেশী বলতে মুসলমান, কাফের, নেক বান্দা, ফাসেক, বন্ধু, শত্রু, পরদেশী, স্বদেশী, উপকারী, ক্ষতি সাধনকারী, আত্মীয়, অনাত্মীয়, নিকটতম বা তুলনামূলক একটু দূরের প্রতিবেশী সবাই অন্তর্ভুক্ত। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, হক বা অধিকারের আলোকে প্রতিবেশী তিন শ্রেণির- ক. এমন প্রতিবেশী, যারা এক হকবিশিষ্ট। তারা প্রতিবেশী, কিন্তু আত্মীয় নয় এবং অমুসলিম। খ. এমন প্রতিবেশী, যারা দুই হকবিশিষ্ট। তারা প্রতিবেশী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুসলমান, কিন্তু আত্মীয় নয়। গ. এমন প্রতিবেশী, যারা তিন হকবিশিষ্ট। তারা প্রতিবেশী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুসলমান ও আত্মীয়ও বটে। সমাজবদ্ধ পৃথিবীতে মানুষের জীবনযাত্রায় প্রতিবেশীর গুরুত্ব অপরিসীম। দুঃখ-কষ্ট, আনন্দ-বেদনায় এ প্রতিবেশীই মানুষের নিত্যসঙ্গী।
প্রতিবেশীর প্রতি অনুগ্রহের নির্দেশ : আল্লাহতায়ালা বাবা-মায়ের সঙ্গে যেভাবে উত্তম আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন, তেমনি প্রতিবেশীর সঙ্গেও ভালো ব্যবহারের আদেশ করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক কোরো না। বাবা-মায়ের সঙ্গে সৎ ও সদয় ব্যবহার কর। নিকটাত্মীয়, এতিমণ্ডমিসকিন, প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাস-দাসীর প্রতিও (সদয় ব্যবহার কর)। নিশ্চয়ই আল্লাহ দাম্ভিকদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা নিসা : ৩৬)। এ আয়াত থেকে প্রতিবেশীর অধিকারের বিষয়টি সুস্পষ্ট। সুতরাং কোনো প্রতিবেশীর বিপদে সাহায্য-সহায়তা করতে না পারলেও তার প্রতি উত্তম আচরণ, সুন্দর ব্যবহার করা আল্লাহতায়ালা কর্তৃক নির্ধারিত অধিকার। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার করে।’ (আদাবুল মুফরাদ : ১০২)।
কষ্ট দেওয়া নিষেধ : রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর শপথ! সে ব্যক্তি মোমিন হতে পারে না; আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মোমিন হতে পারে না; আল্লাহর শপথ! সে ব্যক্তি মোমিন হতে পারে না।’ রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘হে আল্লাহর রাসুল! সে ব্যক্তি কে?’ তিনি বললেন, ‘যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়।’ (বোখারি : ৬০১৬)। তাই যে ব্যক্তি প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়।’ (মুসলিম : ৪৬)।
হাদিয়া আদান-প্রদান আবশ্যক : হাদিয়া আদান-প্রদানে পরস্পরের মাঝে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। তাই প্রতিবেশীদের মধ্যে হাদিয়া আদান-প্রদান করা আবশ্যক। রাসুল (সা.) বলেন, ‘পরস্পরকে উপহার দাও। এতে তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে।’ অন্য বর্ণনায় এসেছে, একবার রাসুল (সা.) আবু জর (রা.)-কে বললেন, ‘হে আবু জর! তুমি তরকারি রান্না করলে তার ঝোল বাড়িয়ে দিও। তোমার প্রতিবেশীকে তাতে শরিক করো।’ (মুসলিম : ২৬২৫)।
ঝগড়া-বিবাদ করা যাবে না : দিনের প্রথম সাক্ষাৎ হয় প্রতিবেশীর সঙ্গে। আবার কোনো সমস্যায় পড়লে সবার আগে প্রতিবেশী দৌড়ে আসে। তাই প্রতিবেশীর সঙ্গে কোনো বিষয় নিয়ে বাকবিতণ্ডা ও ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া অনুচিত। কেননা, এতে উভয়ের মাঝে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। তাছাড়া এরজন্য কেয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম ঝগড়াটে দুই প্রতিবেশীর মোকাদ্দমা পেশ করা হবে।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ : ৫০০০)।
প্রতিবেশীর দুঃখ-শোকে সান্ত¡না : নিকটতম আত্মীয় অপেক্ষাও কাছে বাস করে প্রতিবেশী। তাই প্রতিবেশীর যে কোনো দুঃখ-শোকে তার পাশে দাঁড়ানো, তার প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা এবং তাকে সান্ত¡না আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার মোমিন ভাইকে বিপদে সান্ত¡না দেবে, আল্লাহতায়ালা কেয়ামতের দিন তাকে সম্মানের পোশাক পরাবেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৬০২)।
বিবাদ মীমাংসায় সওয়াব : প্রতিবেশীদের মাঝে কোনো সমস্যা দেখা দিলে ন্যায়সঙ্গতভাবে তার সুষ্ঠু সমাধান করা ইসলামের নির্দেশ। বিবাদ মীমাংসার জন্য আল্লাহর নির্দেশ হলো, ‘নিশ্চয়ই মোমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং তোমাদের ভাইদের মাঝে মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আশা করা যায়, তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হবে।’ (সুরা হুজুরাত : ১০)। মুসলমান ভাইদের মাঝে বিবাদ মীমাংসা করে দিলে সদকার সওয়াব মেলে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমার দুই ব্যক্তির মধ্যে ন্যায়সঙ্গতভাবে বিচার-ফয়সালা করা একটি সদকা।’ (মুসলিম : ১০০৯)।
প্রতিবেশীর দাওয়াত গ্রহণ : সমাজের মানুষের মধ্যে সুসম্পর্ক ও আন্তরিকতা সামাজিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করে। আর পরস্পরকে দাওয়াত দিলে হৃদ্যতা বাড়ে। দাওয়াত কবুল করা রাসুল (সা.)-এর নির্দেশ। তিনি বলেন, ‘যখন তোমাদের কাউকে খাবারের জন্য দাওয়াত দেওয়া হয়, তখন সে যেন তাতে সাড়া দেয় বা দাওয়াত কবুল করে। অতঃপর ইচ্ছে হলে সে খাবে, নইলে ছেড়ে দেবে।’ (মুসলিম : ১৪৩০)। এছাড়া অন্য হাদিসে এসেছে, ‘মুসলমানের ছয়টি হকের অন্যতম হলো, দাওয়াত কবুল করা।’ (মুসলিম : ২১৬২)।