প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ২৯ আগস্ট, ২০২৫
নামাজ ইসলামের মূল স্তম্ভ। ঈমানের পর নামাজের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ। আল্লাহ বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা মোমিনের অবশ্য কর্তব্য।’ (সুরা নিসা : ১০৩)।
মুসলমানদের জন্য কয়েকটি জায়গা ছাড়া জগতের সব জায়গায় নামাজ পড়ার অনুমতি আছে। মসজিদ, ঘর, অফিসে যেমন নামাজ পড়া যায়, তেমনি নামাজ পড়া যায় খোলা মাঠে বা যানবাহনেও। তবে কয়েকটি জায়গায় নামাজ পড়া যায় না। ইবনে উমর (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) সাতটি স্থানে নামাজ পড়তে নিষেধ করেছেন। এক. ময়লা ফেলার স্থান। দুই. কসাইখানা। তিন. কবরস্থান। চার. চলাচলের রাস্তায়। পাঁচ. গোসলের জায়গা। ছয়. উটের আস্তাবল এবং সাত. বায়তুল্লাহর ছাদের ওপর।’ (সুনানে তিরমিজি : ৩৪৬)।
এই হাদিসের ব্যাপারে ইমাম তিরমিজি (রহ.) বলেছেন, ‘ইবনে উমরের হাদিসটির সনদ শক্তিশালী নয়।’ আবু হাতেম আর-রাজি হাদিসটিকে দুর্বল বলেছেন। (আল-ইলাল : ১/১৪৮)। তবে এই জায়গাগুলোর কয়েকটিতে নামাজ নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারটি অন্যান্য সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
আবু সাইদ খুদরি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কবরস্থান ও গোসলখানা ছাড়া সমগ্র জমিনই মসজিদ বা সেজদার স্থান।’ (আবু দাউদ : ৪৯২)।
উল্লিখিত জায়গাগুলোর কয়েকটি নিয়ে এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
ময়লা ফেলার স্থান : ময়লা ফেলার স্থানে নাপাকি থাকতে পারে। তাই নাপাকির কারণে এখানে নামাজ পড়া নিষিদ্ধ। আর যদি পবিত্র ধরেও নেওয়া হয় তবু স্থানটি নোংরা। তাই একজন মুসলিমের জন্য এই স্থানে এসে আল্লাহর সামনে দাঁড়ানো উচিত নয়।
কসাইখানা : কারণ স্থানটি নাপাকি বা রক্ত ও নানা নোংরা জিনিসে দূষিত হয়ে যায়। তবে যদি কসাইখানায় পবিত্র ও পরিষ্কার জায়গা থাকে, তাহলে সেখানে নামাজ পড়া সঠিক হবে।
কবরস্থান : কবরস্থানে নামাজ পড়তে নিষেধ করা হয়েছে; যাতে করে এর মাধ্যমে মানুষ কবর পূজার দিকে ধাবিত না হয় অথবা যারা কবর পূজা করে তাদের সঙ্গে সাদৃশ্য না হয়ে যায়। এর ব্যতিক্রম হলো জানাজার নামাজ। এটি কবরস্থানেও সঠিক হবে। হাদিসে আছে, ‘যে নারী মসজিদ পরিষ্কার করত, তাকে কবরে দাফন করার পর নবী (সা.) তার জানাজা পড়েছেন।’ (বোখারি : ৪৬০)।
চলাচলের রাস্তায় : এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, এমন রাস্তা যেখানে মানুষ যাতায়াত করে। অন্যদিকে যে রাস্তা পরিত্যক্ত কিংবা রাস্তার যে পাশে মানুষ চলাচল করে না, সেখানে নামাজ পড়তে নিষেধ নেই। কারণ এটি মানুষের যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটায়। এছাড়া নামাজির মনকে অন্যদিকে নিয়ে যায়। এতে করে তার মনোযোগ নষ্ট হয়। ফলে সে নামাজকে পরিপূর্ণভাবে আদায় করতে পারে না। তবে জরুরি অবস্থায় নামাজ পড়া যাবে না।
গোসলখানা : গোসলখানায় নামাজ পড়া যাবে না। কারণ এখানে শয়তান আশ্রয় নেয় এবং মানুষের লজ্জাস্থান উন্মুক্ত হয়। গোসলখানায় যেহেতু নামাজ পড়া নিষিদ্ধ হয়, তাহলে টয়লেটে (পায়খানা করার স্থানে) নামাজ পড়া অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষিদ্ধ।
উটের আস্তাবল : যে স্থানে উট বাস করে, সেখানে নামাজ পড়া যাবে না। কারণ, উটের আস্তাবলে শয়তান থাকে। আস্তাবলে উট থাকলে উট নামাজি ব্যক্তির নামাজে ব্যাঘাত ঘটায়।
কাবা ঘরের ছাদের ওপর : এর কারণ হলো নামাজি ব্যক্তি কিবলামুখী থাকে না। বরং কিবলার কিছু অংশের দিকে সে মুখ করে থাকে। বাকি অংশ তার পেছনে থাকে। কিছু আলেমের মতে, কাবার ওপরে নামাজ পড়া সঠিক। এছাড়া জবরদখলকৃত জমিতে নামাজ পড়া জায়েজ নয়।
লেখক : আলেম ও মাদ্রাসা শিক্ষক