ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

স্ম র ণ

চলে গেলেন হাসানুল কাদির

মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ
চলে গেলেন হাসানুল কাদির

কওমি মাদ্রাসা অঙ্গনে লেখালেখির উল্লেখযোগ্য উদ্যমী সংগঠক ও তরুণদের পৃষ্ঠপোষক মুফতি আবদুল কাদির আল-হাসান ওরফে হাসানুল কাদির গত মঙ্গলবার হবিগঞ্জে নিজ বাসায় ইন্তেকাল করেছেন। গণমাধ্যমকে তার ছেলে জাকওয়ান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। হাসানুল কাদির দীর্ঘদিন ধরে মানসিক রোগে ভুগছিলেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রাত্যহিক ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়েন। রাত দশটার দিকে তার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পরিবার তার মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত হন। মৃত্যুকালে তিনি তিন ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীসহ স্বজনদের রেখে গেছেন।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে কাজ করা জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও বিভিন্ন প্রকাশনায় প্রধান সম্পাদক ছিলেন হাসানুল কাদির। মাদ্রাসায় পড়াশোনা করলেও পরবর্তী সময়ে তিনি মূলধারার গণমাধ্যমে সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত হন। সাপ্তাহিক মুসলিম জাহান ও মাসিক আদর্শ নারীতে প্রদায়ক হিসেবে কাজ করেন। দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদনা সহযোগী হিসেবেও কিছুদিন কাজ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি দৈনিক মানবজমিন, দৈনিক যায়যায়দিন, দৈনিক কালের কণ্ঠ, দৈনিক ডেসটিনিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সিনিয়র রিপোর্টার কাম সিনিয়র সাব-এডিটর পদে কাজ করেন। কিছু রিপোর্টের জন্য তিনি আলোচিত ও সমালোচিত হন।

মৃত্যুর আগে মাকতাবাতুত তাকওয়া, মাকতাবাতুল হেরা ও বার্ড কম্প্রিন্টসহ বেশ কিছু প্রকাশনাপ্রতিষ্ঠানেও বিভিন্ন ধর্মীয় বইয়ের সম্পাদনার কাজ করেছেন। বিভিন্ন সময় তিনি নিজেও গণমাধ্যম গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। আল-জাজিরার আদলে বাংলাভাষায় একমাত্র অনলাইন পোর্টাল গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। টোটালবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকম নামে কাজও শুরু করেছিলেন। কিন্তু অসুস্থতা তার সায় দেয়নি। ‘পরশ’ নামে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করলেও এর কার্যক্রম বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। তিনি মিরপুরের মুসলিম বাজার মাদ্রাসায় কিছুদিন শিক্ষকতাও করেছেন। একপর্যায়ে মানসিক রোগে আক্রান্ত হন। বিভিন্ন সময় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাও নিয়েছেন। শেষ জীবনে তিনি ঢাকায় এসে কিছু একটা করার চেষ্টা করলেও অসুস্থতার কারণে তা সম্ভব হয়নি।

হাসানুল কাদির ২০০০ সালে যাত্রাবাড়ি মাদ্রাসা থেকে দাওরা ও তাফসির সম্পন্ন করেন। বাংলার পাশাপাশি আরবি, উর্দু, ফার্সি ও ইংরেজি ভাষায় তার যথেষ্ট দখল ছিল। মাকতাবাতুল হেরা থেকে তার বেশ কিছু অনূদিত কাজ বাজারে এসেছে। আত্মার পরিচয়, হতাশ হবেন না, বুজুর্গ মনীষীদের নির্বাচিত বাণী, সুন্দর জীবন ও আল-কোরআনের পরশমণি তার উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত কাজ। কোরআনের পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ ও ১০ পারার তাফসিরের কাজ সম্পন্ন করেছিলেন। দৈনিক কালের কণ্ঠের ধর্ম পাতায় একসময় তা প্রকাশ পেত। মৃত্যুর আগে পূর্ণাঙ্গ তরজমাতুল কোরআন ও নবীজির পূর্ণাঙ্গ সিরাতগ্রন্থ প্রকাশ করার ইচ্ছে ছিল তার। কিন্তু তা আর হয়নি।

হাসানুল কাদিরের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে। তবে তিনি শেষ জীবনে হবিগঞ্জে শ্বশুরবাড়ির এলাকায় থাকতেন। সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার ইন্তেকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখক-সাংবাদিকদের অনেকেই শোক প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণও করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত