প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ১৪ নভেম্বর, ২০২৫
আমরা ভালো-মন্দ যা-ই বলি, আল্লাহর কাছে আমাদের মুখ নিঃসৃত প্রতিটি কথার জবাবদিহি করতে হবে। প্রত্যেকটি কথা রেকর্ড হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ফেরেশতা লিখছেন নিয়মিত। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তার জন্য একজন প্রহরী নিযুক্ত আছে। যে (লেখার জন্য) সদা প্রস্তুত।’ (সুরা কাফ : ১৮)। রাসুল (সা.)-এর অসংখ্য হাদিসেও কথা বলার ক্ষেত্রে সংযমী ও সতর্ক হওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই বান্দা কখনও আল্লাহর সন্তুষ্টির কোনো কথা বলে, অথচ সে কথা সম্পর্কে তার চেতনা নেই। কিন্তু এ কথার দ্বারা আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। আবার বান্দা কখনও আল্লাহর অসন্তুষ্টির কথা বলে ফেলে, যার পরিণতি সম্পর্কে তার ধারণা নেই। অথচ সে কথার কারণে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।’ (বোখারি : ৬৪৭৮)।
কথা বলার ইসলামি নির্দেশনা : দুনিয়া ও আখেরাতের সার্বিক কল্যাণের কথা বিবেচনা করে স্বভাব ধর্ম ইসলামে স্বল্পভাষিতার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। তাই তো প্রাণের ধর্ম ইসলামের নির্দেশনা হচ্ছে, মোমিন ভালো কথা বলবে, অন্যথায় চুপ থাকবে। প্রিয়নবী (সা.) আমাদের এ নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালা ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন উত্তম কথা বলে অথবা চুপ থাকে।’ (বোখারি : ৬৪৭৫)। জবানকে নিয়ন্ত্রণ করলে অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক বিপদ থেকে নাজাত পাওয়া যায়। মুক্তি লাভ করা যায় অনভিপ্রেত নানা দুর্ঘটনা থেকে। ওকবা ইবনে হামের (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, একদিন আমি রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। আরজ করলাম, ‘মুক্তির উপায় কি?’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘তুমি নিজের জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণে রাখো, নিজের ঘরে পড়ে থাকো এবং পাপের জন্য ক্রন্দন করো।’ (তিরমিজি : ২৪০৬)।
সংযত ব্যবহার ইসলামের সৌন্দর্য : চারদিকে অযথা ও অনর্থক বিষয়াদির ছড়াছড়ি। এসব বাজে কাজে সময় নষ্ট না করে জিকির-আজকার, কোরআন তেলাওয়াত, মানবসেবার মতো আমল করার আরও কত সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আমরা কী করি? সুযোগ পেলেই অনর্থ আলাপচারিতায় মেতে উঠি! অথচ অযথা কথা মানুষকে আল্লাহতায়ালার জিকির থেকে বিরত রাখে। বেহুদা গল্পগুজবে মেতে ওঠা ও অনর্থক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়া মোমিনের জন্য বেমানান। রাসুল (সা.) বলেন, ‘ব্যক্তির ইসলামের সৌন্দর্য হচ্ছে, অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকা।’ (বোখারি : ৪৫৬৬)।
অহেতুক কথাবার্তা শাস্তির কারণ : অনর্থক কথাবার্তা ও অযথা গল্পগুজবে লিপ্ত হওয়া এমন জঘন্য অপরাধ, যা মানুষকে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেয়। পাপিষ্ঠদের জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করার বড় একটি কারণ। জাহান্নামিরা নিজেদের মুখেই তাদের এ অপরাধ স্বীকার করবে। জাহান্নামিদের জিজ্ঞেস করা হবে, ‘কোন জিনিস তোমাদের জাহান্নামে দাখিল করেছে?’ তারা বলবে, ‘আমরা নামাজিদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না। আমরা মিসকিনদের খাবার দিতাম না। আর যারা অহেতুক আলাপ-আলোচনায় মগ্ন হতো, আমরাও তাদের সঙ্গে তাতে মগ্ন হতাম। আমরা কর্মফল দিবসকে মিথ্যা সাব্যস্ত করতাম।’ (সুরা মুদ্দাসসির : ৪২-৪৬)।
সুন্দর কথায় শয়তানের কারসাজি থেকে পরিত্রাণ : সুন্দর ও মার্জিত ব্যবহারের জন্য আল্লাহতায়ালা আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। এর দ্বারা আল্লাহর হুকুম পালন হয় এবং শয়তানের কুক্রিয়া থেকেও রক্ষা হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমার বান্দাদের বলে দাও, তারা যেন এমন কথাই বলে, যা উত্তম। নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ৫৩)।