
দেশের বরেণ্য ভাস্কর ও চিত্রশিল্পী অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খান আর নেই। গতকাল রোববার সকাল ১০টা ১০ মিনিটে রাজধানীর বেসরকারি একটি হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
হামিদুজ্জামান খান ডেঙ্গু ও নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। তিনি স্ত্রী ভাস্কর আইভি জামান, দুই পুত্র ও দেশ-বিদেশে অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। হামিদুজ্জামান খানের পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ শিল্পী মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে জানান, ডেঙ্গু ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় তাকে গত ১৫ জুলাই ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। অবস্থার অবনতি হলে গত তিন দিন থেকে তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। সকালে চিকিৎসকরা তার লাইফ সাপোর্ট খুলে দেন। বেলা আড়াইটায় শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার লাশ দীর্ঘদিনের কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে আনা হয়। সেখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এবং আর্ট গ্যালারি ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রয়াত এ শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পরে বাদ আসর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তার জানাজা হয়। শিল্পী জুবায়ের জামান জানান, আগামীকাল বাদ জোহর কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে তার বাবাকে দাফন করা হবে।
হামিদুজ্জামান খান ১৯৪৬ সালের ১৬ মার্চ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলার সহশ্রাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৭ সালে বাংলাদেশ কলেজ অব আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফটস ( ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান চারুকলা অনুষদ) থেকে চারুকলায় স্নাতক ডিগ্রি নেন।
ভাস্কর্য হামিদুজ্জামান খানের প্রধান শিল্পমাধ্যম হলেও তিনি জলরঙের ছবিতেও বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন ও জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন
পাঠ পর্ব শেষে তিনি ১৯৭০ সালে ঢাকা চারুকলার ভাস্কর্য বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। অধ্যাপক হিসেবে ২০১২ সালে অবসর গ্রহণের পর থেকে স্বাধীনভাবে শিল্পচর্চা করে গেছেন।
ভাস্কর্য হামিদুজ্জামান খানের প্রধান শিল্পমাধ্যম হলেও তিনি জলরঙের ছবিতেও বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন ও জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক অধিকাংশ ভাস্কর্যই তার হাতে করা। নভেরা আহমেদের পরে যাদের হাতে দেশের আধুনিক ভাস্কর্য চর্চা বিকাশ লাভ করেছে তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম প্রধান। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে ভাস্কর আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে তিনি জয়দেবপুর চৌরাস্তায় ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’ ভাস্কর্য নির্মাণে কাজ করেন। এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রথম ভাস্কর্য।
এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে সার কারখানায় ‘জাগ্রত বাংলা’, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সংশপ্তক’, ঢাকা সেনানিবাসে ‘বিজয় কেতন’, মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন প্রাঙ্গণে ‘ইউনিটি’, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে ‘ফ্রিডম’, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্বাধীনতা চিরন্তন’, আগারগাঁওয়ে সরকারি কর্মকমিশন প্রাঙ্গণে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী’, মাদারীপুরে ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’ হামিদুজ্জামান খানের অন্যতম উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য।