আগে ৫০ কোটি টাকার দুর্নীতি হতো, এখন ৫ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হচ্ছে। এসব মামলায় সাজা কিন্তু একই রয়েছে। আমি মনে করি দুর্নীতির মামলায় সাজা আরও বাড়ানো দরকার।
গতকাল বুধবার অর্থনীতিবিদ ও জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল বারকাতের বিরুদ্ধে এননটেক্স গ্রুপের নামে ২৯৭ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগে করা মামলায় রিমান্ড শুনানিতে ঢাকা মহানগর জজ আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন গালিব এ কথা বলেন। এর আগে, মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ গত ১১ জুলাই আসামির তিন দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। ওইদিন তাকে কারাগারে পাঠিয়ে রিমান্ড শুনানির জন্য গতকাল বুধবার দিন ধার্য করেন আদালত। শুনানিকালে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী মধ্যে দিয়ে সকাল ১১টা ৫ মিনিটের দিকে তাকে এজলাসে ওঠানো হয়। মিনিট দশেক পর এই মামলার শুনানি হয়। রাষ্ট্রপক্ষে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। তিনি বলেন, আসামি আবুল বারকাত জনতা ব্যাংকের অভিভাবক হিসাবে তার দায়িত্ব ছিল। আসামির দায়িত্ব থাকা অবস্থায় সব কিছুই তার অনুমতি লাগতো। এত বড় দায়িত্বে থেকে তিনি এসব কিছু করেছেন। এ ঘটনার সাথে আরও কারা জড়িত রয়েছে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। আসামির জামিনের ঘোর বিরোধিতা জানাচ্ছি। এরপর আসামি আবুল বারকাতের আইনজীবী মো. শাহীনুর ইসলাম তার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, গত ৪২ বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। চার বার অর্থনীতি সমিতির সেক্রেটারি ছিলেন। তিনি একজন অর্থনীতিবিদ। তার লেখা বইগুলো শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করেন ও গবেষণা কাজেও ব্যবহৃত হয়। তিনি একটি কোম্পানির চেয়ারম্যান। তখন এই আইনজীবীকে থামিয়ে মামলার বিষয়ে শুনানি করতে বলেন। এরপর এ আইনজীবী বলেন, আসামির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সঠিক নয়। আসামি কোনো দুর্নীতি করেননি। আসামি একজন বয়স্ক ব্যক্তি, দুইবার হার্টের রিং পরানো হয়েছে। উচ্চরক্তচাপসহ একাধিক সমস্যা রয়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনা করে রিমান্ড বাতিলপূর্বক জামিনের প্রার্থনা করছি।
এরপর বিচারক বলেন, আপনার সময়ে জনতা ব্যাংক সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে ছিল। সোনালী ব্যাংকের অবস্থাও ভালো ছিল না। বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে লোন পাস করিয়ে ব্যাংকের খারাপ পরিণত করা হয়েছে। শুনানিতে নাসা গ্রুপের কর্ণধার ও এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের প্রসঙ্গে তুলে ধরে এই বিচারক বলেন, নজরুল সাহেব জামিন পেলে নাকি সব টাকাই শোধ করে দিবেন। আগে কেন টাকা পরিশোধ করেননি। আগে কেন মনে হয়নি টাকা পরিশোধের কথা। আগে কী করেছিলেন। কারাগার থেকেই টাকা পরিশোধ করা যায়। ওয়ান ইলেভেনের সময় ট্রুথ কমিশন হয়েছিল, সেখানে কিছু লোক অপরাধ স্বীকার করেছিল। দুর্নীতি এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে। আগে দুর্নীতি হতো ৫০ কোটি টাকার, এখন সেখানে দুর্নীতি হচ্ছে ৫ হাজার কোটি টাকার। সাজা একই আছে। তাই আমি মনে করি দুর্নীতির মামলার সাজা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। তা না হলে দুর্নীতির লাগাম টানা সম্ভব হবে না। এরপর তিনি এই মামলার রিমান্ড বিষয়ে শুনানি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হবে বলে শুনানি শেষ করেন। গত ১০ জুলাই রাত সাড়ে ১১টার দিকে ধানমন্ডির ৩ নম্বর সড়ক এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। পরদিন তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।