
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্যানুসারে বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৭ কোটি ৭১ লাখ মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ খাবার থেকে বঞ্চিত এবং ২০২৩ সালে প্রায় ১ কোটি ১৯ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ছিল। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি সংগঠন, সুশীল সমাজ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। গত বৃহস্পতিবার বিশ্ব খাদ্য দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে বিসেফ ফাউন্ডেশন, ফুড সেফটি অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশ, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে সংস্থার কৈবর্ত সভাকক্ষে আয়োজিত ‘নিরাপদ খাদ্যের যোগান নিশ্চিতে সম্মিলিত প্রয়াস’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের কমিউনিকেশন অফিসার শানজিদা আক্তারের সঞ্চালনায় এবং সংস্থার পরিচালক গাউস পিয়ারী এর সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিসেফ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী রেজাউল করিম সিদ্দিক। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর ল’ এন্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্সের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, প্রশিকার ডেপুটি ডিরেক্টর (এগ্রিকালচার) সুমনা রানী দাস এবং ইউগ্লেনা গ্যাংকির ডেপুটি ম্যানেজার শাহীদ আলম চৌধুরী।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় রেজাউল করিম সিদ্দিক বলেন, উন্নত খাদ্য বলতে সেই খাদ্যকে বোঝায় যা পুষ্টিকর, নিরাপদ এবং মানুষের সাধ্যের মধ্যে। ব্যাপক খাদ্য অপচয় এমন একটি ভারসাম্যহীন ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছে, যার ফলে অনেক স্থানে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার তীব্রতা অপ্রতিরোধ্য। জলবায়ু পরিবর্তন, অসম উৎপাদন ও অসম বন্টন, দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং সঠিক মনিটরিংয়ের অভাবে বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৬৭৩ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুধার্ত জীবনযাপন করছে। এক্ষেত্রে সচেতনতামূলক প্রচারণা, গবেষণা ও প্রযুক্তি সহায়তা, কৃষকদের ভর্তুকি প্রদান এবং টেকসই নীতি ও পরিবেশ সংরক্ষণে সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, বাংলাদেশে খাদ্য সম্পর্কিত ২৫টি আইন থাকলেও কোন নীতিমালা বা বিধিমালা নেই। খাদ্যের বিভিন্ন অনিয়ম থাকার মূল কারণ মন্ত্রণালয়গুলোর মাঝে আন্তঃসম্পর্ক না থাকা। খাদ্যের উৎপাদন থেকে সংগ্রহ, পরিবহন, বিপণন প্রতিটি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি। পাশাপাশি নাগরিক হিসেবে আমাদেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। নিজেদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে দেশের খাদ্যসংকট মোকাবিলা করা সম্ভব। সুমনা রানী দাস বলেন, দেশের মানুষের খাদ্য চাহিদা মেটাতে অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ছাদ বাগান বা ছাদ কৃষি। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে ছাদে বা বারান্দায় খুব অল্প জায়গায় জনসাধারণ তার প্রয়োজনীয় নিরাপদ সবজি উৎপাদন করতে পারে। ঢাকার উত্তর-দক্ষিণ, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে মোট ৬৫০০টি ছাদ বাগান রয়েছে। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা নিজেরাই চাহিদা অনুযায়ী নিরাপদ সবজি উৎপাদন করতে পারছে। জনাব শাহীদ আলম চৌধুরী বলেন, শিশুদের খাদ্যনিরাপত্তা একটি বড় বিষয়। এক্ষেত্রে আমরা শিশুদের পুষ্টির চাহিদা পূরণে স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকি।