
দীর্ঘ ৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু), হল ও হোস্টেল সংসদ নির্বাচন-২০২৫ এর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টায় সমাজবিজ্ঞান অনুষদ অডিটোরিয়ামে এই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে চাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শপথবাক্য পাঠ করান চাকসুর সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। শপথ অনুষ্ঠান আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান এবং চাকসু, হল ও হোস্টেল সংসদ নির্বাচন-২০২৫ এর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন। চাকসুর নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি (ভিপি) ইব্রাহীম হোসেন রনি, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সাঈদ বিন হাবিব, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আইয়ুবুর রহমান তৌফিক, খেলাধুলা ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ শাওন, সহ-খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক তামান্না মাহবুব প্রীতি, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক হারেজুল ইসলাম, সহ-সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক জিহাদ হোসাইন, দপ্তর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান, সহ-দপ্তর সম্পাদক জান্নাতুল আদন নুসরাত, ছাত্রীকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক নাহিমা আক্তার দ্বীপা, সহ-ছাত্রী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদাউস রিতা, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান। এছাড়াও অনুষ্ঠানে ১৪টি হল ও একটি হোস্টেল সংসদে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শপথবাক্য পাঠ করান স্ব স্ব হলের প্রভোস্ট ও হোস্টেল ওয়ার্ডেন। তারা হলেন— আলাওল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ এনামুল হক, এ.এফ রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাছলিম উদ্দীন, শাহজালাল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ফুয়াদ হাসান, সোহ্রাওয়ার্দী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মান্নান, শাহ আমানত হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. চৌধুরী মোহাম্মদ মনিরুল হাসান, শামসুন নাহার হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. বেগম ইসমত আরা হক। শহীদ আবদুর রব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. আরিফুল হক সিদ্দিকী, প্রীতিলতা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ হাসমত আলী, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন মিঝি, মাস্টারদা সূর্যসেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. সৈয়দ মুহাম্মদ শামসুল হুদা, শহীদ মো. ফরহাদ হোসেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. অবদুল মান্নান, বিজয়-২৪ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. জান্নাত আরা পারভীন, নবাব ফয়জুন্নেছা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. এস.এম. রফিকুল ইসলাম, অতীশ দীপঙ্কর হলের প্রভোস্ট এ. জি. এম. নিয়াজ উদ্দিন এবং শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলের ওয়ার্ডেন সুব্রত দাশ। এসময় চাকসুর সাবেক নির্বাচিত ভিপি-জিএসদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দ্বিতীয় কেবিনেটের (১৯৭২ সাল) ভিপি আ ম শামসুজ্জামান (হিরা) ও জিএস আ ফ ম মাহমুদুর রহমান (মান্না), তৃতীয় কেবিনেটের (১৯৭৪ সাল) ভিপি এস এম ফজলুল হক, চতুর্থ কেবিনেটের (১৯৭৯ সাল) ভিপি মাজহারুল হক শাহ এবং পঞ্চম কেবিনেটের (১৯৮১ সাল) ভিপি মো. জসিম উদ্দিন সরকার। ১৯৭৪ সালে অনুষ্ঠিত চাকসুর তৃতীয় কেবিনেট নির্বাচনের ভিপি এস এম ফজলুল হক বলেন, ‘গত ৩০ বছর ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি। আমি সবসময় বলতাম, এ দেশ আগামী ৩০ বছর নেতৃত্বহীনতায় ও নেতৃত্বের দুর্বলতায় ভুগবে। আমি স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছি, বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট ছিলাম, রাজনৈতিকভাবেও নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছি। এসবের সূচনা হয়েছিল, আমি চাকসুর ভিপি হয়েছিলাম বলেই।’ ১৯৭২ সালে অনুষ্ঠিত চাকসুর দ্বিতীয় কেবিনেট নির্বাচনের জিএস আ ফ ম মাহমুদুর রহমান (মান্না) স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এত সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে নাই। রাত একটা-দেড়টার সময় নস্টালজিয়া থেকে বেরিয়েছিলাম ক্যাম্পাসে। সেই যে দেখেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটা, এখন কেমন আছে? আমি আর হিরা ভাই (চাকসুর সাবেক ভিপি) বেরিয়েছি। দেখি রাস্তার পাশ দিয়ে শূকর দৌড়াদৌড়ি করছে। মানে একটা অদ্ভুত দৃশ্য!, তিনি আরও বলেন, ‘আমি প্যারিসে গেছি। খুবই চমৎকার দৃশ্য। আমি মুগ্ধ হয়েছি। আর কালকে রাতের ওই অন্ধকারের মধ্যে চবি ক্যাম্পাসে যেই বনের মতো সৌন্দর্য দেখলাম, আমি আরেকবার মুগ্ধ হয়ে গেলাম। আমার মনে হলো, এই আমার বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে আমি পড়ালেখা করেছি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে গর্ব করার মতো কত কী আছে!, প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, ‘চাকসুতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শপথ গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের কমিশনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা প্রশাসনকে পথ দেখাবে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের সমস্যাগুলো প্রশাসনকে বলতে পারবে। এর মাধ্যমে প্রশাসনের জবাবদিহি গড়ে উঠবে। আমি চাই, চাকসুর মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার্ড গ্রাজুয়েট, সিনেট, সিন্ডিকেট প্রতিনিধিসহ সকল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের পর মাত্র এক বছরের মধ্যে আমরা শিক্ষার্থীদের বড় দুটি দাবি— সমাবর্তন আয়োজন ও চাকসু নির্বাচন বাস্তবায়ন করেছি। এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কল্যাণে আরও নানা কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় একটি একাডেমিক প্রতিষ্ঠান। একে একটি আদর্শ একাডেমিক পরিবেশে রূপ দিতে আমার প্রশাসন নিবিড়ভাবে কাজ করছে। চাকসু নির্বাচন ছিল শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকারভিত্তিক দাবি। নির্বাচনটি সবার সহযোগিতায় সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এখন শিক্ষার্থীদের উচিত তাদের একাডেমিক এক্সিলেন্সে মনোযোগ দেওয়া।’ সভাপতির বক্তব্যে চাকসু, হল ও হোস্টেল সংসদ নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধায়ক ও চবি প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, বলেছিলাম, আমরা জুলাই আন্দোলনে জড়িত ছিলাম। আমরা তোমাদেরকে চাকসু নির্বাচন উপহার দেব। তখন অনেকে বিশ্বাস করেনি, কিন্তু আজ তারা বিশ্বাস করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শপথ হোক ‘চাকসু টু বাংলাদেশ বিনির্মাণ’ এমন স্লোগানে। আজকের নেতৃত্ব আগামী দিনে বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে এমনটাই আমরা প্রত্যাশা রাখি। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা সমস্যাগুলো তুলে ধরুক যৌক্তিকভাবে। এরপর আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সেগুলো সমাধান করব।’ এসময় তিনি সকলকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান। এছাড়াও শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, প্রক্টর অধ্যাপক হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী, নির্বাচন কমিশনারবৃন্দ, রিটার্নিং কর্মকর্তাবৃন্দ (ডিনবৃন্দ), প্রভোস্টবৃন্দ ও শিক্ষার্থীবৃন্দ। অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করেন মার্কেটিং বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর ও রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাহমিদা খানম।