ঢাকা সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

দেশের তিন সীমান্ত দিয়ে ৩৮ জনকে পুশইন

দেশের তিন সীমান্ত দিয়ে ৩৮ জনকে পুশইন

বাংলাদেশের তিন সীমান্ত দিয়ে মোট ৩৮ জনকে পুশইন করেছে ভারতীয় বিএসএফ। গতকাল বৃহস্পতিবার লালমনিরহাট আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ বাংলাদেশে ৪ শিশু, ৩ নারী ও ৩ পুরুষসহ মোট ১০ জনকে পুশইন করেছে। খবর পেয়ে তাদের আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি।

ভোরে লালমনিরহাট আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর সীমান্তের ৯২৫ নম্বর পিলার সংলগ্ন এলাকায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চওরাটারি নামক স্থানে তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী ৭৮ পদ্মা বিএসএফ।

জানা গেছে, ভোর ৪টায় সীমান্ত অতিক্রম গিরিধারী নদীর পাড় হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। সকালে স্থানীয়রা তাদের দেখে সন্দেহ হলে বিজিবিকে খবর দেয়। পরে আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর সীমান্তে টহলরত দুর্গাপুর বিওপি ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে।

পুশইনের শিকার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন, একই পরিবারের শ্রী মন্টু রায়, ছেলে শ্রী পলাশ রায়, স্ত্রী শ্রী আর্চনা রানী, মেয়ে শ্রীমতী মিশুরানী। একই এলাকার মহেন্দ্র চন্দ্র রায়ের মেয়ে ফুলরানী বর্মণ, ছেলে শ্রী হরি কান্ত রায়, অনন্ত চন্দ্র বর্মনের ছেলে কৃষ্ণ চন্দ্র বর্মন, হরিকান্ত বর্মনের শিশু পুত্র সুরভী (৫), হরিকা কান্তের শিশু কন্যা স্বপ্না বর্মন (২), শ্রী পলাশের শিশুকন্যা পল্লবী রায় (১০ মাস)। আটকদের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন দুর্গাপূর ক্যাম কমান্ডার সাইদুর রহমান। বিজিবির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যক্তিরা নিজেদের কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার বাসিন্দা বলে পরিচয় দিয়েছেন। তারা জানান, প্রায় ১০ বছর আগে কাজের সন্ধানে ভারতে যান এবং সেখান থেকে সম্প্রতি হরিয়ানা রাজ্য থেকে বিএসএফ তাদের ধরে এনে সীমান্ত পথে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। আটক ব্যক্তিদের সবাই সনাতন ধর্মাবলম্বী। তাদের মধ্যে চার শিশু, তিন নারী ও তিন পুরুষ রয়েছেন। ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম বলেন, পুশইন হয়ে আসা ব্যক্তিদের আটক করা হয়েছে। তারা নিজেদের বাংলাদেশি দাবি করেছেন। এ বিষয়ে বিএসএফের কাছে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

এদিকে নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সীমান্ত দিয়ে ২১ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমন্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ। এদের মধ্যে ১৯ জন তৃতীয় লিঙ্গ ও ২ জন পুরুষ রয়েছেন। বিজয়পুর বিওপির ১১৪৮/৪ এস থেকে প্রায় ১০০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আড়াপাড়া এলাকায় পুশইন করানো হলে তাদের আটক করে বিজিবি।

আটকদের বাড়ি- ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ি, পটুয়াখালি, মৌলভীবাজার, জামালপুর, টাঙ্গাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকায়।

বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে জেলার দুর্গাপুরের বিজয়পুর সীমান্ত দিয়ে তাদের পুশইন করা হয় বলে জানিয়েছেন নেত্রকোনা ৩১ বিজিবির বিজয়পুর ক্যাম্প কমান্ডার শহীদুল ইসলাম। কমান্ডার শহীদুল ইসলাম জানান, সীমান্তে হাবিলদার আব্দুল করিমের নেতৃত্বে একটি দল টহল দেওয়ার সময় বিএসএফের পুশইন করা ২১ জনকে আড়াপাড়া এলাকা থেকে আটক করা হয়।

আটকদের জিজ্ঞাসাবাদে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে। আটকরা গত এক সপ্তাহ থেকে ৭ বছরের মধ্যে দিল্লিতে কাজের জন্য যায়। তাদের দিল্লির বিভিন্ন এলাকা থেকে একত্রিত করে গত বুধবার দিল্লির নাজিরাবাদ বিমানবন্দর দিয়ে বিমানে করে আসাম নেওয়া হয়। পরে তাদের ভোরে বিএসএফ বিজয়পুর সীমান্ত এলাকা দিয়ে ঠেলে দেয় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে।

অন্যদিকে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া কামালপুর সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে ৭ জন বাংলাদেশি নাগরিককে ‘পুশ ইন’ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোররাতে এ ঘটনা ঘটে। পুশইন হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন নারী এবং তিনজন পুরুষ রয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়নের ১০৮৩ নম্বর সীমান্ত পিলার সংলগ্ন এলাকায় বৃহস্পতিবার ভোররাতে কয়েকজন অপরিচিত ব্যক্তিকে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখেন এলাকাবাসী। এরপর স্থানীয়রা তাদের আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।

আটককৃত ব্যক্তিরা হলেন- বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ উপজেলার পাটমারা গ্রামের মোহাম্মদ বেলায়েত খান (৫৫) ও তার ছেলে মোহাম্মদ ইসলাম (২২)। ফরিদপুর জেলার মোকসেদপুর উপজেলার বগাইল গ্রামের তাসলিমা (৫০) ও তার ছেলে কুরবান আলী (২৫)। খুলনা জেলার খালিশপুর উপজেলার নূর নগর বিশ্বাসপাড়ার সুমি আক্তার (৩০) ও তার বোন রুমি আক্তার সোহাগী (২০)। বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার ঘুটাবাছা গ্রামের মায়া (৩২)।

ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোতালেব মিয়া বলেন, ভোর ৪টার দিকে আমার ভাতিজা ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে সীমান্ত এলাকায় কিছু লোককে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখে। পরে আমাকে জানালে আমি গ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের আটক করি। বকশীগঞ্জ থানার ওসি খন্দকার শকের আহাম্মেদ জানান, আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে তাদের নামণ্ডঠিকানা পাওয়া গেছে। তারা বিভিন্ন সময় দালালের মাধ্যমে কাজের সন্ধানে ভারতের বিভিন্ন শহরে পাড়ি জমিয়েছিলেন। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের ধরপাকড়ের মুখে পড়ে তারা দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। পরিচয় যাচাই করে তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত