ঢাকা সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

সরিষাবাড়ীতে ইনকিউবেটরে হাঁস-মুরগির বাচ্চা ফুটিয়ে উদ্যোক্তারা স্বাবলম্বী

সরিষাবাড়ীতে ইনকিউবেটরে হাঁস-মুরগির বাচ্চা ফুটিয়ে উদ্যোক্তারা স্বাবলম্বী

প্রাকৃতিক উপায়ে হাঁস, দেশি মুরগি, রাঁজহাস, টাইগার মুরগি, তিতির, কোয়েল পাখি, টার্কি, মিশরী ফাউমি, সোনালি মুরগির ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা বিক্রি করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন জামালপুরের সরিষাবাড়ীর রাশেদুল ইসলাম রঞ্জু। তার হাত ধরে বহু বেকার নারী-পুরুষ এখন হাঁস-মুরগির খামার গড়ে তুলেছেন। রাশেদুল ইসলাম রঞ্জু উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের বয়ড়া বাজারের মৃত গিয়াস উদ্দিন মন্ডলের ছেলে। এগুলো মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনেও সহায়ক বলে মনে করছেন সচেতন মহল। সরেজমিন দেখা যায়, নিজ বাড়িতে টিনের ঘরেই বসিয়েছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ডিম ফোটানোর যন্ত্র ইনকিউবেটর। প্রতিদিনই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নারী-পুরুষরা ডিম নিয়ে আসে হ্যাচরিতে বাচ্চা ফুটানোর জন্য। প্রতি সপ্তাহের সোমবার ও শুক্রবার ক্রেতারা ভিড় জমান হ্যাচারি পল্লিতে বাচ্চা সংগ্রহের জন্য। প্রতিটি ডিম থেকে বাচ্চা ফুটাতে নেওয়া হয় মাত্র ৫ টাকা। আবার ফোনের মাধ্যমে অর্ডার করলেই নির্ধারিত ঠিকানায় পৌঁছে যায় হাঁস বা মুরগির বাচ্চা। প্রাকৃতিক উপায়ে ডিমে তাপ দিয়ে বাচ্চা ফোটানো হয়। ব্যবসার জন্য একসঙ্গে অধিক পরিমাণে ডিম ফোটানোর ক্ষেত্রে ইনকিউবেটরের বিকল্প নেই। আবার যদি কেউ ডিম না দিয়ে বাচ্চা কিনতে চায়, সেটারও ব্যবস্থা আছে এই হ্যাচারিতে। প্রকারভেদ অনুযায়ী স্বল্পমূল্যে এক দিন বয়সের প্রতিটি হাঁস-মুরগির বাচ্চা ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়।

এছাড়া বিক্রি করা হয় হাঁস, দেশি মুরগি, রাঁজহাস, টাইগার মুরগি, তিতির মুরগি, কোয়েল পাখি, টার্কি, মিশরী ফাউমি, সোনালি মুরগির বাচ্চা। সে ক্ষেত্রে ভালো জাতের হাঁস-মুরগি, রাঁজহাস, কোয়েল পাখি, টার্কি, মিশরী ফাউমি, সোনালি মুরগির ডিম সংগ্রহ করেন হ্যাচারি মালিক ও কর্মচারীরা। সেগুলোকে পানিতে পরিষ্কার করে বাছাই করে কাঠ দিয়ে বিশেষভাবে বানানো ডিম রাখার পাত্রে সারিবদ্ধভাবে রেখে ফ্যানের বাতাসে রাখা হয়। ২৮ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে ডিম থেকে বাচ্চা বের হয়।

হ্যাচারি থেকে বাচ্চা নিয়ে খামার করা রনি আহমেদ বলেন, আমি রাশেদুল ইসলাম রঞ্জুর হ্যাচারির কথা জানতে পারি। সেখানে গিয়ে বিভিন্ন জাতের হাঁস-মুরগির বাচ্চা দেখি। সেখান থেকে প্রথমে ২০টি মিশরি ফাউমি মুরগির বাচ্চা কিনে এনে বাড়িতে পালন শুরু করি। কিছুদিন পর মুরগিগুলো ডিম দেওয়া শুরু করে। সেই ডিমগুলো জমিয়ে হ্যাচারিতে গিয়ে আবার বাচ্চা ফুটিয়ে আনি। বর্তমানে আমি বাণিজ্যিকভাবে মিশরি ফাউমি জাতের মুরগি পালন করছি। প্রতিদিন ডিম বিক্রি করে আমার বাড়তি টাকা আসছে।

বয়ড়া কুলঘাট এলাকার কবির মাহমুদ নামে খামার মালিক বলেন, আমি আগে টিনের দোকান করতাম। এই হ্যাচারি হওয়ার পর সাত মাস আগে আমি প্রথম আমার স্ত্রীকে ২০০ হাঁস ও মুরগির বাচ্চা কিনে দেই। সেগুলোকে বাড়িতে পালন করি। সেগুলো বড় হলে বাজারে বিক্রি করে ভালো টাকা লাভ হয়। সেখান থেকেই আমার হাঁস-মুরগি পালন শুরু। এখন আমি প্রতিমাসে হাঁস-মুরগি পালন করে বাড়তি টাকা ইনকাম করতে পারি। আমার ইচ্ছে আছে বড় পরিসরে খামার করব।

ডিম নিয়ে বাচ্চা ফুটাতে আসা আব্দুল মান্নান, রহিমা বেগম, মারিয়া আক্তার বলেন, আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাঁস-মুরগির ডিম সংগ্রহ করে মন্ডল হ্যাচারিতে নিয়ে আসছি ফুটানোর জন্য। আমাদের বাড়িতে ডিম ফুটানোর জন্য কোনো মুরগি নেই। তাছাড়া হাঁস কখনও বাচ্চা ফুটায় না। আগে মুরগি দিয়ে হাঁসের বাচ্চা ফুটানো হতো। এখন আর সেই ঝামেলা নেই। বাড়ির কাছে হ্যাচারি আর এখানে কম খরচে ঝামেলাবিহীনভাবে ডিম ফুটানো যায়। আগে মুরগি দিয়ে বসিয়ে দিলে অনেক ডিম নষ্ট হতো এখন আর ডিম নষ্ট হয় না। এখান থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে বাড়িতে নিয়ে লালন-পালন করে নিজেরাও খাবো আর বাজারে বিক্রি করে বাড়তি টাকা আয় করব। এ বিষয়ে মন্ডল হ্যাচারির মালিক রাশেদুল ইসলাম রঞ্জু বলেন, আমি এলাকার বেকার নারী ও পুরুষের স্বাবলম্বী করা জন্য ব্যতিক্রমধর্মী একটি হ্যাচারি আমি তৈরি করেছি। ডিম থেকে কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়া স্বল্প খরচে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে লালন পালন করে ভালো লাভবান হতে পারবে। আমি এটাতে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।

এছাড়াও বাচ্চা ফুটিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে তা বিক্রি করি। লাভজনক হওয়ায় উৎপাদন দিন দিন বাড়াতে থাকে। পরে পাইকারি ও খুচরা ক্রেতারা এসে আমার কাছ থেকে এক দিন বয়সের হাঁসের বাচ্চা কিনে তা দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করেন। এছাড়া যদি কেউ মোবাইলের মাধ্যমে অর্ডার করে যে কোন বাচ্চা নিতে চায় সেক্ষেত্রে আমি দেশের বিভিন্ন স্থানে কুরিয়ারের মাধ্যমে যত্ন সহকারে বাচ্চা পাঠিয়ে দেই।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, বয়ড়া বাজারের রঞ্জু মিয়া একটি ভালো উদ্যোগ নিয়েছে। তার এমন উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। তার এই উদ্যোগের কারণে সরিষাবাড়ীর খামারিরা উপকৃত হবে, এছাড়া এলাকার বেকার যুবক ও নারীরা স্বাবলম্বী হবে। বাচ্চা ফুটানো, মুরগি লালনপালন করার ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন, চিকিৎসাসহ সরকারি যত সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন, সবই উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে প্রদান করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত