ঢাকা সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

রামুতে বনবিভাগের নির্মাণাধীন স্থাপনা উচ্ছেদ নিয়ে প্রশাসন-বনকর্মী বাগ্বিতণ্ডা

ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে বেশ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে
রামুতে বনবিভাগের নির্মাণাধীন স্থাপনা উচ্ছেদ নিয়ে প্রশাসন-বনকর্মী বাগ্বিতণ্ডা

কক্সবাজারের রামুতে বনবিভাগের নির্মাণাধীন স্থাপনা উচ্ছেদ নিয়ে প্রকাশ্যে উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিকমাধ্যমে বেশ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রতিবেদকের হাতে আসা ৪৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, রামু উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাজ্জাদ জাহিদ রাতুল এবং কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. নূরুল ইসলাম ও কক্সবাজার সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. হাবিবুল হকসহ অন্য বনকর্মীরা স্থানীয় বাসিন্দা, পর্যটক ও গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে বাগবিতণ্ডায় লিপ্ত হন। পরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বাকবিতণ্ডা থামে। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার বিকালে কক্সবাজারের পর্যটন স্পষ্ট হিমছড়ি এলাকায়।

সূত্র বলছে, মেরিন ড্রাইভে হিমছড়ি ঝর্ণাকে কেন্দ্র করে বনবিভাগের অধীনে হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান, বনবিভাগের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নিসর্গ এবং রামু উপজেলা প্রশাসনের অধীনে হিমছড়ি বাজার, পার্কিং, পাবলিক টয়লেট ঘিরে আশপাশের জায়গা নিয়ে এমন বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। যা প্রকাশ্যে এসেছে বৃহস্পতিবার।

স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম সোহেল জানিয়েছেন, হিমছড়ি ঝর্ণাটি বনবিভাগের পক্ষে ইজারা প্রদান করা হয়। আর এই ঝর্ণার সামনের বাজার, পাকিং ইজারা প্রদান করে রামু উপজেলা প্রশাসন। হিমছড়ি বাজারের পূর্বে গত ৪ বছর আগে এনজিওর অর্থায়নে তৈরি একটি পাবলিক টয়লেট রয়েছে। যা প্রতি বছর ইজারা দেয় উপজেলা প্রশাসন। সম্প্রতি পর্যটন স্পট ঝর্ণার কিছু সংস্কার কাজ শুরু করে বনবিভাগ। এ সংস্কারের অংশ হিসেবে নতুন গেট নির্মাণের জন্য পাবলিক টয়লেটের কিছু অংশ বৃহস্পতিবার সকালে ভেঙে দেয় বনবিভাগ। বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর রামু উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি ঘটনাস্থলে এসে টয়লেট ভেঙে দেওয়ার কারণ জানতে চান বনবিভাগের কর্মকর্তার কাছে। বনবিভাগ গেট নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা এবং টয়লেটটি বনবিভাগের জমিতে রয়েছে বলে দাবি করে। এরপর সহকারী কমিশনার ভূমি হিমছড়ি ঝর্ণার উত্তর পাশে বনবিভাগের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নিসর্গর পাশে অবস্থিত কিছু স্থাপনা ১ নম্বর খাস খতিয়ানের দাবি করেন, যেগুলো ভাংচুর করা হয়। বিষয়টি জানাজানির পর বনবিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গেলে তর্কের সৃষ্টি হয়।

কক্সবাজার রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. হাবিবুল হক বলেন, ‘নিসর্গ পুরোটাই বনবিভাগের ২ নম্বর খতিয়ানের অধীনে। যেখানে থাকা বন পাহারার গোল ঘর, ঘেরা-বেড়া, হিমছড়ি জাতীয় উদ্যানের সাইনবোর্ডটি ভেঙে দিয়েছেন সহকারী কমিশনার ভূমি। অথচ দীর্ঘদিন ধরে বনবিভাগের জমিতে পাবলিক টয়লেটটি পরিচালিত হলেও কোনো হস্তক্ষেপ করা হয়নি। ঝর্ণার প্রবেশ গেট নির্মাণের কারণে তার কিছু অংশ ভাঙতে হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গেজেট নোটিফিকেশন মূলে এটি রিজার্ভ ফরেস্ট এবং প্রটেক্টেড এরিয়া হিসাবে ঘোষিত।’

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলাম বলেছেন, ‘বিষয়টি এরইমধ্যে উর্ধ্বতন মহলকে অবহিত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। কী করে দেখা হচ্ছে। না হয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন মহল নির্দেশ প্রদান করেছেন।’

এ প্রসঙ্গে রামু উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি মো. সাজ্জাদ জাহিদ রাতুলের মুঠোফোনে একাধিক ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। প্রতিবেদকের পরিচয় নিশ্চিত করে হোয়াটসঅ্যাপ এসএমএস দেওয়া হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম বলেছেন, ‘এখানে বনবিভাগ এবং প্রশাসন- উভয় পক্ষের জায়গা রয়েছে। আমরা উভয় পক্ষ সরকারের স্বার্থে কাজ করছি। বিষয়টি নিয়ে সহকারী কমিশনার ভূমির সঙ্গে বনভিাগের ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল। আমি জানার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে এর নিরসন করেছি।’ তিনি বলেন, ‘এখানে বিরোধের কিছু নেই। উভয় পক্ষ তো সরকারের জন্য কাজ করছে।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও আসাটা ‘একটু বিব্রতকর’ বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত