ঢাকা সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবৈধ যানের বেপরোয়া গতি

* গতকাল ভোরে খরুলিয়া এলাকায় দুর্ঘটনা কবলিত ‘মারসা পরিবহনের’ ট্যাক্স টোকেন ও রোড পারমিটের মেয়াদ শেষ * কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ছয় লেন বাস্তবায়নের দাবি
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবৈধ যানের বেপরোয়া গতি

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ জেলার অভ্যন্তরীণ উপসড়কগুলোতে নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে চলছে অবৈধ যানবাহন। চলাচল করা এসব যানবাহনের অধিকাংশেরই ট্যাক্স টোকেন, পারমিট ও ফিটনেসের মেয়াদ না থাকার সত্যতা মিলেছে। এরইমধ্যে গতকাল শনিবার খরুলিয়া এলাকায় একটি যাত্রীবাহী মারসা পরিবহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে। এতে ব্যাংক কর্মকর্তাসহ ১৫ জন আহত হন। এই পরিবহনটিরও রোড পারমিট ছিল না।

মারসা পরিবহনের ব্যবহত নাম্বারের সূত্র ধরে বিআরটিএ-এর দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, দুর্ঘটনা কবলিত মারসা গাড়িটির ট্রাক্স টোকেনের মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি। আর রোড পারমিটের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২৮ ফেব্রুয়ারি। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মারসা পরিবহনের কক্সবাজারের দায়িত্বরত (জিএম) মো. নাজিম উদ্দীন দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘চালকের গাফেলতির বিষয়টি এমডিকে অবগত করা হয়েছে। ট্যাক্স টোকেন কিংবা রোড পারমিটের বিষয়টি এমডি মহোদয় দেখভাল করেন।, তার সঙ্গে কথা বলুন।’

তথ্য সূত্র বলছে, শুধু মারসা পরিবহন নয়, কক্সবাজার চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলরত অধিকাংশ ছোট-বড় পরিবহনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে রয়েছে ত্রুটি। এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাসটি ভোরে দ্রুতগতিতে চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিল। হঠাৎ চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে বাসটি সড়ক থেকে ছিটকে গভীর খাদে পড়ে যায়। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠান।

এ ঘটনার পর স্থানীয়দের প্রশ্ন, প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ছয় লেন কবে হবে? বছরের পর বছর ধরে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও এই মহাসড়কের ছয় লেনের কাজ শুরু না হওয়ায় জনমনে ক্ষোভ বাড়ছে। যোগাযোগ করা হলে রামু ক্রসিং হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসির উদ্দীন বলেন, দুর্ঘটনা কবলিত মারসা পরিবহনের গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে। গাড়ি বিরুদ্ধে নিয়মিত ফৌজদারি মামলা রুজু করা হবে। কাগজপত্রে ত্রুটি রয়েছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আদালতের মাধ্যমে গাড়ি জিম্মায় নেয়ার সময় কাগজপত্র আপডেট করলে তখন ছাড়া পাবে। ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দেয়া হচ্ছে।’ এদিকে বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত সড়ক দুর্ঘটনা ও ধারাবাহিক হতাহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে কক্সবাজার সোসাইটির সভাপতি কমরেড গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘সড়ক-মহাসড়কে অহরহ দুর্ঘটনা ও অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু হলেও দুর্ঘটনার ঝুঁকিমুক্ত সড়ক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মহলগুলোর জোর তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। ’ তিনি সড়ক দুর্ঘটনার জন্য ওভারটেকিং, ত্রুটিপূর্ণ ও অবৈধ যানবাহন এবং অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের দায়ী করেছেন।

কক্সবাজার বিআরটিএ কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক উথায়নু চৌধুরী বলেন, ফিটনেসবিহীন মোটরযান ও ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন মোটরসাইকেল সড়ক-মহাসড়কে চলাচল, মোটরযানের অতিরিক্ত গতি এবং মালবাহী গাড়িতে যাত্রী বহনের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান জোরদারের মাধ্যমে এসব অনিয়ম বন্ধ করে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি ও কক্সবাজার-চট্টগ্রাম ৬ লেন বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক সাংবাদিক এইচএম এরশাদ বলেন, ‘চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত সময়ে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ২৭টি দুর্ঘটনায় ৪২ জন নিহত ও আহত ৫৬ জন হয়েছেন। এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত দুর্ঘটনা ৫৪টি, নিহত ৪০ জন ও আহত ৭৩ জন। ঈদের সময় (প্রথম দু?তিন দিনে) পৃথক ঘটনায় ১৫-১৭ জন নিহত, ৩০-৫০ জন আহত হন।

তিনি দুর্ঘটনার প্রধান কারণসমূহ উল্লেখ করে বলেন, ‘লবণ ও মাছবাহী গাড়ির পানি পড়ে পথ পিচ্ছিল হওয়া, সরু ও আঁকানো সড়ক, বিপজ্জনক বাঁক, চালকদের অনভিজ্ঞতা, অতিরিক্ত গতি, ধারাবাহিক বিশ্রামহীন গাড়ি চলাচল, সাইনবোর্ড বা ট্রাফিক চিহ্নের অভাব, অবৈধ যানবাহনের চলাচল এবং সড়কের ওপর হাটবাজার ইত্যাদি। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমাতে হলে ৬ লেনের বিকল্প নেই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত