ঢাকা মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

খাগড়াছড়ির পাহাড়ে মরুভূমির খেজুর চাষে অভাবনীয় সাফল্য

খাগড়াছড়ির পাহাড়ে মরুভূমির খেজুর চাষে অভাবনীয় সাফল্য

পাহাড়ের মাঝারি টিলাভূমিতে সারি সারি খেজুর গাছ। আরব দেশের চেনা এই দৃশ্য দেখা মিলছে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায়। উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরের রসুলপুরে আরবের খেজুর চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন নুর আলম নামে এক কৃষি উদ্যোক্তা।

সরেজমিন দেখা যায়, প্রতি গাছের গড় উচ্চতা ১২ ফুট। প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে সবুজ আর হলুদ রঙের খেজুর। গাছের আকার ভেদে প্রতিটি গাছে ফলন হয়েছে। মাত্র ৩ বছরের ব্যবধানে গাছে ফলন আসতে শুরু করেছে। ফল পরিচর্যায় ব্যস্ত শ্রমিকরা। বারহি গাছের শাখায় শাখায় ঝুলছে খেজুর। ফলের সুরক্ষায় সাদা পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’

জানা যায়, কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে খেজুরের চাষ শুরু করেন নুর আলম। পাহাড়ি টিলা ভূমিতে খেজুরের চাষের শুরুর কথা জানান এ কৃষি উদ্যোক্তা। তিনি বলেন , ‘২০১৯ সালের দিকে ১৩ একর টিলা ভূমি ক্রয় করি। এরপর মাটির পরীক্ষা করা হয়। বিশেষেজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে বারহি জাতের খেজুর চাষ শুরু করি। ২০১৯ সালে ইংল্যান্ড থেকে ১০২টি টিস্যু কালচার চারা সংগ্রহ করি। কারণ টিস্যু কালচার করা গাছের ফলন বেশি। এরপর খেজুরের বাণিজ্যিক চাষ শুরু করেন। তিন বছর পর থেকে ফলন আসা শুরু হয়। সেবছর ২৪টি গাছে ফলন আসে। তবে চলতি মৌসুমে প্রায় প্রতিটি গাছেই ফলন আসে। বাগানের ১০টি পুরুষ খেজুর রয়েছে। যেগুলো খেজুরের পরাগায়নে সহযোগিতা করে। চলতি বছরের সব গাছে ফলন এসেছে। বারহির পাশাপাশি পরীক্ষামূলকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান আম্বার জাতের খেজুরের চারা রোপণ করেছি। সেগুলোতে এবার ফলন এসেছে।’ নুর আলম আরও জানান, তার বাগানে খেজুরের পাশাপাশি ড্রাগন, কমলা, লটকন রাম্বুটান, আলুবখরাসহ বিভিন্ন ফলের চাষ হয়েছে। স্থানীয় বাজারে খেজুরের ভালো চাহিদা আছে। তবে পুরোটায় আমদানি নির্ভর। পার্বত্য এলাকায় কেবল আমিই খেজুরের চাষ করছি। পাহাড়ের মাটি ও আবহাওয়া যেহেতু খেজুর চাষের উপযোগী সেক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যাপক হারে খেজুর চাষ হলে স্থানীয়ভাবে চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো গেলে আমদানি নির্ভরতা কমে আসবে। কর্মসংস্থানও হবে। আমরা খেজুর বাগানে সারা বছরই স্থানীয় শ্রমিকেরা কাজ করে।’

খেজুর দীর্ঘদিন রেখে সহজে বাজারজাত করা যায়। গাছের তেমন একটা পরিচর্যাও লাগে না। বছরে একবার জৈব এবং একবার রাসায়নিক সার দিলেই যথেষ্ট। উৎপাদিত খেজুর বেশ সুস্বাদু এবং সুমিষ্ট। কাঁচা খাওয়ার জন্য এটি বেশ বিখ্যাত। খেজুর বিপণনে ঝামেলাও কম। স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়ে যায়। চলতি মৌসুমে অন্তত সাত লক্ষ টাকার খেজুর বিক্রির আশা করছেন কৃষি উদ্যোক্তা নুর আলম।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ বাছিরুল আলম বলেন, নুর আলম খেজুর চাষ করে সফল হয়েছেন। তিনি খেজুরের চারাও বিক্রি করে। আমাদের পাহাড়ের মাটি ও আবহাওয়া খেজুর চাষের জন্য উপযোগী। তবে এটির চাষ পদ্ধতি বেশ জটিল। যেহেতু এটি অপ্রচলিত ফল সেক্ষেত্রে আগ্রহী কৃষকরা সফল কৃষি উদ্যোক্ততা নুর আলমের পরামর্শ নিতে পারেন। আমি তার বাগান পরিদর্শন করেছি। খেজুর বেশ লাভজনক ফল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত