ঢাকা বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা

‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা

জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের এক বছরের মাথায় ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ দিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। জুলাই ঘোষণাপত্রের আনুষ্ঠানিকতার জন্য রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউ দিনব্যাপী আয়োজন হয়েছে। অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের বর্ষপূর্তির দিনে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ উপস্থাপন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার দিনব্যাপী ‘৩৬ জুলাই’ উদযাপনের অংশ হিসেবে বিকাল ৫টায় এই ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করা হবে বলে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।

গতকাল রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “ছত্রিশ জুলাই- গত বছর এই দিনে পৃথিবী দেখেছিল এক অভাবনীয় গণঅভ্যুত্থান। যার ফলে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছিল ফ্যাসিস্ট। বহু শহিদের রক্ত এবং যোদ্ধাদের ত্যাগের পথ ধরে পুরো বাংলাদেশ এক হয়েছিল। পথে পথে ছিলো উল্লাসমুখর জনতার জোয়ার। বাংলাদেশের বহু রাস্তায় আবেগাপ্লুত মানুষ সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছিলেন। ‘এক বছর পর আবার ফিরে এসেছে ছত্রিশ জুলাই। এই দিনে ঘোষিত হতে যাচ্ছে জাতির আকাঙ্ক্ষিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’।

এ উপলক্ষে মানিক মিয়া এভিনিউজুড়ে থাকছে দিনভর আয়োজন। বেলা ১১টা থেকে বিভিন্ন শিল্পী গোষ্ঠীর গান; ২টা ২৫ মিনিটে ‘ফ্যাসিস্ট এর পলায়ন উদযাপন’; এরপর ফের গান; ৫টায় ঘোষণাপত্র উপস্থাপন; ৭টা ৩০ মিনিট থেকে ‘স্পেশাল ড্রোন ড্রামা’ এবং ৮টায় কনসার্ট। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, শিল্পকলা একাডেমি ও সংসদ সচিবালয় মিলে যৌথভাবে এসব আয়োজন করবে।

২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্রদের আন্দোলন শেষমেশ সরকার উৎখাতের ইতিহাস পড়ে। ৩৬ দিনের সেই আন্দোলনে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালাতে বাধ্য হন সাড়ে ১৫ বছর দোর্দণ্ড প্রতাপে দেশ চালিয়ে আসা শেখ হাসিনা। শুরুতে এই আন্দোলনের কেন্দ্র ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পরে তা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

সরকারের তরফে জবাব ছিল- গুলি, টিয়ারশেল আর লাঠি; এককথায় শুধুই বলপ্রয়োগ। প্রথমে ফেইসবুক, পরে ইন্টারনেট বন্ধ করে পরিস্থিতি সামাল দিতে চায় সরকার। তাতে হিতে বিপরীত হয়। আন্দোলনে রক্তপাত শুরু হওয়ার ২০ দিনের মধ্যেই লাশ আর রক্তের বোঝা মাথায় নিয়ে পতন হয় দেড় দশকের আওয়ামী লীগ সরকারের। পালাতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা, আর তার অমাত্যরা।

৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোর দাবি মেনে শুরু হয় রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ। এদিকে অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। গতবছর ২৯ ডিসেম্বর ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে সামনে আনে তারা। বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর ওই ঘোষণাপত্র প্রকাশের কর্মসূচি দেওয়া হয়।

প্রথমে সরকার এর সঙ্গে যুক্ত না হলেও পরে সরকারের তরফ থেকেই ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগের কথা বলা হয়। সংস্কার কমিশনগুলোর প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার পাশাপাশি জুলাই ঘোষণাপত্র এবং জুলাই জাতীয় সনদ তৈরির কাজ চলে। চলতি মাসের প্রথমার্ধে জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রাথমিক খসড়া তৈরি করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপির মতামত নেওয়া হয়। এরপর চূড়ান্ত খসড়ার ওপর মতামত নিতে দলগুলোকে সেই খসড়া পাঠানো হয়। ২৬ দফার ওই খসড়ায় বলা হয়, “বাংলাদেশের জনগণ নতুন সাংবিধানিক ব্যবস্থার যুক্তিসঙ্গত সময়ে আয়োজিতব্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের মানুষের প্রত্যাশা, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি ও শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় বাক্ত করছে। ‘এবং বাংলাদেশের জনগণ এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে যে, ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে। বিশেষত, সংবিধানের প্রস্তাবনায় এর উল্লেখ থাকবে এবং তফসিলে-এর ঘোষণাপত্র সংযুক্ত থাকবে।’ ওই খসড়া এরইমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে শনিবার প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জানানো হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত