
জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দেওয়ার জোর দাবি জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, যারা সংস্কারে ‘বাধা’ দিচ্ছে তারাই ‘নির্বাচনবিরোধী’। জুলাই আন্দোলনের যে সব ‘বিশ্বাসঘাতক’ সরকারের মধ্যে ঢুকে আছে তাদের চিহ্নিত করে বের করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
গতকাল রোববার ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, ‘যারা সংস্কারে বাধা দিচ্ছে, সংস্কারকে গ্রহণ করতে চায় না, যারা সংস্কারের আইনিভিত্তি অনুভব করে না, তারাই নির্বাচনবিরোধী। তারাই নির্বাচনকে বানচাল করতে চায়। ‘তারা যেনতেন নির্বাচন করে বাংলাদেশকে আবার পিছিয়ে পনেরো বছরের জঞ্জালের আবর্জনায় দেশকে নিয়ে যেতে চায়।’
রাষ্ট্র সংস্কারে যেসব প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলো মতৈক্যে এসেছে সেগুলো নিয়ে জুলাই সনদ বা জাতীয় সনদ চূড়ান্ত হবে। এই সনদের আইনিভিত্তি চায় জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। তা না করলে সরকারের বিরুদ্ধ মামলা করারও হুমকি দিয়েছে জামায়াত।
দলের নায়েবে আমির তাহের বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার বলে দিতে চাই-যারা রক্ত দিয়েছে, জীবন দিয়েছে, এক দলের জায়গায় আরেক দল, এক ব্যক্তির জায়গায় আরেক ব্যক্তির জন্য আমরা লড়াই করি নাই। এই কথাটি ধ্রুব সত্য। ‘সরকারকে বলব, যেখানে যেখানে সংস্কারের প্রয়োজন সেটা নির্দ্বিধায় করতে হবে, কোন দল মানে... কোন দল মানে না বাংলার জনগণ এটা শুনতে চায় না।’
দুর্নীতিমুক্ত, গণতান্ত্রিক ও স্বাধীনতা-সার্বভৌম দেশের জন্য এবং একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য যা কিছু প্রয়োজন সরকারকে তাই করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘না হলে জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে, শহীদের সাথে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে ইতিহাস আপনাদের চিহ্নিত করবে।’
রাতে ভোট করে ক্ষমতায় যাওয়ার আবারও পরিকল্পনা সামনে আসলে সেটা করতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে তাহের বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম, জুলাই বিপ্লব যে সুযোগ এনে দিয়েছে পরিবর্তনের জন্য, সেখানে সংস্কারের কথা বলেছিলাম। আমরা খুনিদের বিচারের কথা বলেছিলাম। এই দুটো শেষ হওয়ার পর নির্বাচনের কথা বলেছিলাম। আমরা নির্বাচন চাই, কিন্তু যেনতেন নির্বাচন চাই না। আমরা হাসিনা মার্কা লুটপাটের নির্বাচন চাই না। দিনের নির্বাচন রাতে হয়ে যাবে, সে রকম নির্বাচন চাই না।’
জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশে যে নতুন স্বাধীনতা পেয়েছে, এর ফসল যারা ভোগ করছেন, তাদের ভিতরে বিশ্বাসঘাতকতার গন্ধ খুঁজে পাই। এই বিশ্বাসঘাতকদের আমাদের চিনতে হবে, এই বিশ্বাসঘাতকদের প্রতিরোধ করতে হবে, প্রতিহত করতে হবে এবং ক্ষমতার মসনদ থেকে তাদের চিহ্নিত করে বের করে দিতে হবে।’ জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের ‘মধ্যমণি’ ছিল দাবি করে রাষ্ট্র পরিচালনায় সংগঠনটির নেতাদের পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তাহের। তিনি বলেন, ‘এই বিপ্লবের রূপকার, মধ্যমণি, কেন্দ্র ছিল ইসলামী ছাত্রশিবির। আজকে সেই ছাত্রশিবিরকেই সরকারের পক্ষ থেকে যথাথভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। আমি এই জন্য নিন্দা জানাই। তারা যেন সঠিক হিস্যা পায়, সেটা ক্ষমতার হিস্যা নয়, তারা যেন মূল্যায়ন সঠিক পায়। রাষ্ট্র পরিচালনার সুষ্ঠুতার জন্য তাদের সাথে পরামর্শ করতে হবে’
সাইমুম শিল্পী গোষ্ঠী আয়োজিত ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-২০২৪ শীর্ষক’ স্মৃতি লিখন প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন জামায়াত নেতা তাহের। জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সোহরাওয়াদী উদ্যানে ১ আগস্ট থেকে চার দিনব্যাপী সাইমুম শিল্পী গোষ্ঠী কালচারাল ফেস্ট ‘জুলাই জাগরণ’ চলবে ৪ আগস্ট পর্যন্ত। অনুষ্ঠানে সারাদেশ থেকে জমা পড়া ৩ হাজারের বেশি স্মৃতিলেখন থেকে বাছাইকৃত ৫০টি লেখাকে পুরস্কৃত করা হয়। পুরস্কার হিসেবে প্রদান করা হয় নগদ শিক্ষাবৃত্তি, সনদপত্র, বই ও ক্রেস্ট।
ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম, বুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক ফখরুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান আখন্দ, ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম, জুলাই শহীদ নাহিদ হাসান রিয়ানের বাবা আব্দুর রাজ্জাক, আহত তাহমিদ হুজায়ফা ও আহমেদ জুবায়ের।