ঢাকা মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ডিপোতে রপ্তানি পণ্যের চাপ

পড়ে আছে কনটেইনার
ডিপোতে রপ্তানি পণ্যের চাপ

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক এড়াতে আগেভাগেই রপ্তানি পণ্য কারখানা থেকে ডিপোতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন রপ্তানিকারকেরা। তাতে চট্টগ্রামের ২২টি ডিপোতে রপ্তানি পণ্যের জট তৈরি হয়েছে। চাপ সামলাতে ডিপো থেকে রেকর্ডসংখ্যক কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে জাহাজে তুলে দেওয়ার পরও জট কমছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রমুখী এই রপ্তানি পণ্যের চাপ তৈরি হয় জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে। গত ৮ জুলাই ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ নির্ধারণ করার পরই দেশটির ক্রেতারা পণ্য নিতে তৎপর হয়ে পড়েন। যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের ১ আগস্টের আগেই পণ্য জাহাজীকরণের জন্য চাপ দেন। এ কারণে নির্ধারিত সময়ের এক–দুই সপ্তাহ আগেই ডিপোতে পণ্য পাঠাতে শুরু করেন রপ্তানিকারকেরা। তাতে ডিপোতে যুক্তরাষ্ট্রমুখী পণ্য রপ্তানির চাপ বাড়তে থাকে।

যদিও সর্বশেষ গত ৩১ জুলাই ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। এ সংক্রান্ত হোয়াইট হাউসের আদেশে বলা হয়, আগামী ৭ আগস্টের পর যেসব পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে জাহাজে তোলা হবে, সেগুলোর ক্ষেত্রে এই শুল্ক প্রযোজ্য হবে; অর্থাৎ ৭ আগস্টের আগে যেসব পণ্য রপ্তানি হবে, সেগুলোর ক্ষেত্রে পাল্টা শুল্ক প্রযোজ্য হবে না।

সমুদ্রপথে রপ্তানি পণ্যের ৯৯ শতাংশই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে নেওয়া হয়। এ জন্য রপ্তানি পণ্য কারখানা থেকে কাভার্ড ভ্যানে করে প্রথমে সরাসরি চট্টগ্রামের কনটেইনার ডিপোগুলোতে নেওয়া হয়। এরপর ডিপোতে কনটেইনারে বোঝাই করে বন্দরে নিয়ে জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। বন্দর দিয়ে মোট রপ্তানির প্রায় ৯০ শতাংশই এভাবে রপ্তানি হয়।

কনটেইনার ডিপোর হিসাবে, সাধারণত প্রতি মাসে গড়ে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার কনটেইনার রপ্তানি হয় ডিপোগুলো থেকে। তবে গত জুলাই মাসে চট্টগ্রামের বেসরকারি ডিপোগুলোতে ৯৯ হাজার কনটেইনার রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল। রপ্তানি হয়েছে ৮১ হাজার কনটেইনার। বাকি ১৮ হাজার কনটেইনার রপ্তানি করা যায়নি। যেগুলো এখন প্রতিদিন বন্দরে পাঠিয়ে জাহাজে তুলে দেওয়া হচ্ছে।

জানতে চাইলে কনটেইনার ডিপো সমিতির মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, হঠাৎ করে বাড়তি চাপ তৈরি হলেও ডিপোগুলো রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার ব্যবস্থাপনা করতে পারছে। প্রতিদিন গড়ে আড়াই হাজার কনটেইনারের বেশি চট্টগ্রাম বন্দরে অপেক্ষমাণ জাহাজে তুলে দেওয়া হচ্ছে।

শিপিং এজেন্টরা জানান, বন্দরে জাহাজজটের কারণে বাড়তি কনটেইনারের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আবার জেটিতে অবস্থানরত বেশির ভাগ জাহাজ কনটেইনার ওঠানো–নামানোর কাজে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগছে। তাতে সক্ষমতার বেশি কনটেইনার রপ্তানি করা যাচ্ছে না।

গত সোমবারের বন্দরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেনারেল কার্গো বার্থ ও চিটাগং কনটেইনার টার্মিনালে অবস্থানরত ছয়টি জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কাজে সময় লাগছে তিন থেকে চার দিন। শুধু নিউমুরিং টার্মিনালে অবস্থানরত জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কাজে সময় কম লাগছে, গড়ে দুই দিন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের হিসাবে দেখা গেছে, গত জুলাই মাসে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৩৯৬ কোটি মার্কিন ডলারের। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রগামী পোশাকের রপ্তানি মূল্য ছিল প্রায় ৮০ কোটি ডলার। স্বাভাবিক সময়ে প্রতি মাসে গড়ে যুক্তরাষ্ট্রে ৬৩ কোটি ডলারে পোশাক রপ্তানি হতো। জুলাইয়ে সেটি বেশ বেড়েছিল।

এনবিআরের তথ্যে দেখা যায়, গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে সোয়া ২ কোটি ডলারের ৭১ লাখ পিস তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে চট্টগ্রামের এশিয়ান-ডাফ গ্রুপ। জুলাই মাসে প্রায় প্রতিদিনই গ্রুপটির তৈরি পোশাক জাহাজীকরণ হয়েছে।

জানতে চাইলে এশিয়ান-ডাফ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সালাম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে অক্টোবর থেকে অনেক রাজ্যে শীত শুরু হবে। শীতের পোশাক রপ্তানি করতে হলে আগস্টের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে পাঠাতে হবে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের শঙ্কা। সব মিলিয়ে তাই যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা ১ আগস্টের আগে পণ্য রপ্তানির চাপ দিয়েছিলেন। মার্কিন ক্রেতাদের যাতে এসব চালানে পাল্টা শুল্ক দিতে না হয়, সে জন্য রপ্তানিকারকেরাও নির্ধারিত সময়ের আগে পণ্য ডিপোতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।

এদিকে পণ্য রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, নানা উপলক্ষকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য রপ্তানির বাড়তি চাপ তৈরি হতে পারে। এ সময় যাতে পণ্য রপ্তানি দ্রুত করা যায়, সে জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এতে যেমন সঠিক সময়ে ক্রেতার হাতে পণ্য পৌঁছানো যাবে, তেমনি বন্দরের সক্ষমতা নিয়ে সঠিক বার্তা পাবেন বিদেশি ক্রেতারা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত