ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

লালমনিরহাটের ৪০ গ্রামে আগাম সবজি চাষ

লালমনিরহাটের ৪০ গ্রামে আগাম সবজি চাষ

লালমনিরহাটে কৃষকরা করছেন আগাম জাতের সবজি চাষ। যেন এক সবুজের সমারোহে ভরে উঠেছে জেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম। এ জেলার ৪০টি গ্রামে আগাম জাতের সবজি চাষ হচ্ছে। হাসি ফুটেছে প্রতিটি কৃষক-কৃষানিদের মুখে; ঘরে ঘরে এসেছে স্বচ্ছলতা। এসব গ্রামের চাষিরা সবজি চাষে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়েছেন।

প্রতিদিন ওই সব গ্রাম থেকে হাজার হাজার মণ সবজি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। অল্প সময়ে বেশি লাভের কারণে সবজি চাষ করেই স্বাবলম্বী হয়েছেন ৪০টি গ্রামের হাজার হাজার কৃষকের পরিবার। গ্রীষ্মকালীন সবজির পাশাপাশি আগাম সবজির ফসল পরিচর্যায় ব্যস্ত তারা।

জানা যায়, বছরজুড়েই এখানে রকমারি সবজির চাষ করেন কৃষকরা। এখন তারা বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এরইমধ্যে সবজি বিক্রিও শুরু করেছেন। ১২ মাসই তারা চাষ করেন নানা রকমারি সবজি। নিজের চাহিদা শেষে প্রতিদিন তা বাজারে বিক্রি সচ্ছলতা এনেছে সংসারে। তা দিয়ে ভালোভাবেই সংসার চলে তাদের। যা ধান চাষ করে সম্ভব নয়। সবজি চাষ করে জেলার সবজি-খ্যাত গ্রামগুলোর হাজার হাজার কৃষক পরিবারের মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক। আর এখান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মন রকমারি সবজি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে। প্রায় ২ যুগ (২৪ বছর) আগে থেকে আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী ইউনিয়নের বড় কমলাবাড়ী, কুমড়িরহাটসহ কয়েকটি গ্রামে সবজি চাষ শুরু হয়। আস্তে আস্তে তা বাড়তে থাকে।

সবজি চাষি আমিনুল, আব্দুর রহমান, হরিপদ রায় হরি, অর্জুনসহ কয়েকজন জানান, তারা বাপ-দাদার আমল থেকেই সবজি চাষ করে আসছেন। এ কমলাবাড়ী ইউনিয়নসহ হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ ও সদর উপজেলার প্রায় ৪০টি গ্রামের কৃষকের প্রধান ফসল নানা জাতের সবজি। সবজি খ্যাত গ্রাম এর মধ্যে রয়েছে- শিয়ালখাওয়া, চাঁপারহাট, ভোটমারী, দৈখাওয়া, সিঙ্গিমারী, কুমড়িরহাট, চন্দনপাট, বড়কমলাবাড়ী, হাজীগঞ্জ, চণ্ডীমারি, কর্ণপুর, দুড়াকুটি, ফুলগাছ, কোদালখাতা, ভাটিবাড়ী, কাকেয়া টেপা, বনগ্রাম, শিবেরকুটি অন্যতম।

সবজি চাষি সিরাজুল ইসলাম, মোক্তার হোসেন, লোকমান আলী আরও জানান, আগাম জাতের সবজি জমিতে আবাদ করে খরচ বাদে ৩০-৩৫ হাজার টাকা আয় করেছেন। বছরজুড়েই বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ হয়ে থাকে। খরচ একেবারে কম না হলেও সবজি চাষ করে তারা বেশ লাভবান হচ্ছেন। সরেজমিন দেখা গেছে, চলতি মৌসুমে এ জেলার জমিতে বিভিন্ন সবজি লাগানো হয়েছে। এরইমধ্যে সবজি দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি হচ্ছে। এমনকি এখনও লাগানো অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে শিম, মুলা, লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন অন্যতম। ওইসব গ্রামে কৃষি বিভাগ নিয়মিত পরিদর্শনে যান ও ফসলের রোগবালাই সম্পর্কে পরামর্শ দেন। এসব সবজি রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ফেনী, রাজশাহী, বগুড়া, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে।

স্থানীয়ভাবে প্রতিদিন সকালে বিশাল পাইকারি বাজার বসে। বাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, ভরা মৌসুমে এখান থেকে প্রতিদিন ৩০-৪০ ট্রাক সবজি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। সবজি চাষি সাইফুল ইসলাম, আব্দুর রহমান, মোস্তাফিজার রহমান, হযরত আলী জানান, গ্রামের বেশির ভাগ রাস্তাই কাঁচা। বর্ষাকালে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তা ছাড়া নিচু এলাকা হওয়ায় প্রায় প্রতি বছর অধিকাংশ গ্রামই বন্যায় আক্রান্ত হয়। এতে ফসলের ক্ষতি সাধিত হয়। লালমনিরহাটের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অপূর্ব বলেন, আমরা আমাদের অবস্থান থেকে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। যাতে তারা বেশি লাভবান হতে পারে কৃষকরা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত