
‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না’ এহেন বক্তব্য ‘স্বৈরাচারের পদধবনি’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। গতকাল বুধবার সকালে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর দেওয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি এ মন্তব্য করেন। ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাব এর নবনির্বাচিত সভাপতি অধ্যাপক হারুন আল রশিদ এবং মহাসচিব ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিলসহ চিকিৎসকদের নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন সকাল ১১টায় শেরে বাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে যান এবং শহিদ নেতার মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। এ সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, অধ্যাপক একেএম আজিজুল হক, বিজন কান্তি সরকার, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলামসহ প্রবীণ-নবীন চিকিৎসকরা ছিলেন। গত ৯ আগস্ট ড্যাবের নির্বাচনে ‘হারুন-শাকিল’ পরিষদ বিজয়ী হন। ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, আজকে আমরা অনেক কথা শুনতে পাই কেউ কেউ বলেন, হুমকি দেন যে, আগামী দিন (ফেব্রুয়ারি) হতে দেবেন না। মনে হচ্ছে, সেই স্বৈরাচারের যে আচরণ ছিল, স্বৈরাচারের যে কথা ছিল সেই ধরনের কথার পদধ্বনি আমরা শুনতে পাই। আমি আহ্বান জানাব, আপনাদের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকেন, ধমক দিয়ে দাবিয়ে রাখা যাবে না নির্বাচনি অভিযাত্রাকে। তিনি বলেন, সেজন্য আজকে আমরা আতঙ্কিত হই অনেক সময় যে, নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেন প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় তো প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশনকে বলে দিয়েছেন ফেব্রুয়ারির মধ্যভাগের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে। যখন আমরা শুনতে পাই সরকারের একটি অংশ এখনও যারা সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন সেই অংশের পক্ষ থেকে কেউ কেউ যখন বলেন, নির্বাচন এটা না করলে হতে দেবো না, ওটা না করলে হতে দেবো না, আবার গণতন্ত্রের কথা বলবেন।
‘পিআর সিস্টেম মানুষ বুঝে না বলে মন্তব্য করে ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, এদেশের মানুষ গণতন্ত্রকামী মানুষ। এদেশের মানুষ জানতে চায় তার প্রতিনিধি কে? তাদেরকে সরাসরি দেখতে চায়। এদেশের মানুষ পিআর (সংখ্যানুপাতিক ভোট ব্যবস্থা) সিস্টেম কি? এটা এদেশের মানুষ কোনোদিন প্রাকটিস করেও নাই, জানেও না। পৃথিবীর অনেক দেশের পিআর আছে, নন-পিআর আছে। কিন্তু বড় গণতান্ত্রিক দেশ বলেন, ভারত, তারপরে ইউকে, ইউএসএ। ওসব দেশে কি পিআর পদ্ধতি অনুসরিত হচ্ছে? কোথাও না। কাজেই মনে রাখতে হবে, জনগণ তার প্রতিনিধিকে সরাসরি দেখতে চায় নির্বাচনের মাধ্যমে। তিনি বলেন, পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণ করার জন্য চিন্তাভাবনা করছেন তারাই হয়ত পিআর পদ্ধতির কথা বলে থাকেন। আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, জনগণের মনের ভাষা বুঝার চেষ্টা করুন। এই জনগণ বিগত ২০০৮ সাল থেকে’ ২৪ সাল পর্যন্ত তাদের যে মালিকানা সেটা ফেরত পায় নাই। বিভিন্ন ধরনের নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু মানুষের আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে, আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেবো, নির্বিঘ্নে দেব, নিঃসংকোচে দেবো।
‘যারা হুমকি দিচ্ছে তারা কী ভেবেছে জনগণ কী চায় এমন প্রশ্ন করে ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, যারা আজকে ধমক দেন নির্বাচন হতে দেবেন না। তারা কি ভেবেছেন জনগণ কী এটা চায়, জনসমর্থন কী এটাতে আছে? আপনারা মবকালচার সৃষ্টি করেছেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছেন? দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা গত এক বছর যাবত কী ধরনের পড়াশুনা হচ্ছে সেটি কী আপনারা লক্ষ্য করেছেন? আপনারা বলেন, নতুন প্রজন্ম। আমরা কী পুরনো প্রজন্ম? আপনারা কী নতুন প্রজন্ম? কখনই না। তিনি বলেন, ২৪ এর আন্দোলন একটি ঐক্যবদ্ধ ছাত্র-জনতার আন্দোলন। কোনো একক গোষ্ঠির আন্দোলন নয়। কাজেই কোনো অবস্থাতের ধমক দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে দাবিয়ে রাখবেন এটা হবে না। ইতিহাস শিক্ষা দেয় যারা ’৭৩ এ ছিলেন তারাও যেমন দাবিয়ে রাখতে পারেন নাই আর বিগত স্বৈরাচার অনেক ধমক, অনেক প্রশাসন, অনেক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেক গুম, অনেক শহিদ, অনেক পঙ্গুত্ব বরণ করিয়েছেন। তারপরও মানুষকে দাবিয়ে রাখা যায়নি, উনাদের শেষ রক্ষা হয় নাই। ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, আমরা বলব, আসুন আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে ’২৪ এর জুলাই আন্দোলনে আমরা সবাই একসঙ্গে ছিলাম, এক সঙ্গে থাকি এবং দেশের মানুষের ওপর দায়িত্ব দেই তারা তাদের নেতৃত্ব নির্বাচিত করুক এবং সেই নেতৃত্বের মাধ্যমে আগামীর বাংলাদেশ হবে। তাহলেই শহিদদের আত্মা শান্তি পাবে, পঙ্গুত্ববরণকারী মানুষগুলো তাদের যে কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে। আমাদের এখন দায়িত্ব হচ্ছে, সবাই সঙ্গে নিয়ে আগামীতে এমন একটি জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা যেখানে মানুষ নির্বিঘ্নে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। জনগণ বেঁছে নেবে তার প্রতিনিধি কে হবে?