
চুয়াডাঙ্গা জেলায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে এক নীরব বিপ্লব ঘটিয়ে চলেছে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল। বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত এই জাতের ছাগল। এই ছাগলের মাংস ও চামড়া বিক্রি করে বছরে প্রায় হাজার কোটি টাকা আয় হচ্ছে। যা এই জেলার মানুষের জীবনযাত্রার মান বদলে দিচ্ছে। সহজ পদ্ধতি ও কম খরচের কারণে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালনে চুয়াডাঙ্গার মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয়। ছাগলটি দেশের বাইরে ব্ল্যাক বেঙ্গল (গট) বা বাংলার কালো ছাগল হিসাবে সমধিক পরিচিত। এ অঞ্চলের উষ্ণ আবহাওয়া ও অনুকূল পরিবেশ ছাগলটি পালনের জন্য আদর্শ। এই কারণে ব্ল্যাক বেঙ্গলকে চুয়াডাঙ্গার ব্রান্ড হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। বিশেষ করে গ্রামের এই ছাগল পালন করে নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলেছে।
ব্ল্যাক বেঙ্গল এর কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই ছাগলগুলো অধিক বাচ্চা দিয়ে থাকে। একটি মা ছাগল ১৪-১৫ মাসে দুই বারে ৪-৬ টি বাচ্চা দিতে পারে। এই জাতের ছাগলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হওয়ায় চিকিৎসার খরচ নেই বললেই চলে। খাবারের খরচও কম। মাঠে চড়িয়ে বা বাড়ির আশপাশে লতাপাতা খাইয়ে এদের সহজেই পালন করা যায়। তাই কম পুজিতে শুরু করে দ্রুত লাভ করা সম্ভব। আর এই বিশেষ গুণগুলোর জন্যই জেলার ৭০-৮০ ভাগ ছাগলই ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের।
এই জাতের ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন চুয়াডাঙ্গার অসংখ্য নারী-পুরুষ। তাদের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বিলকিস খাতুন মাত্র একটি ছাগল দিয়ে শুরু করেন। এখন তার খামারে ৩০টি ছাগল। ছাগল বিক্রি করে সংসারে হাল ধরেছেন তিনি। তার মতে ভূমিহীন সিরাজুল ইসলাম ও দুইটি ছাগল নিয়ে শুরু করেন। এখন তার ৫০ টির ও বেশি ছাগল। দামুড়দা উপজেলা দর্শনা থানার মনো বেগম বলেন, অভাবের সঙ্গে লড়াই করে কোনোরকম খেয়ে না খেয়ে সংসার চলতো তার। দুইটি ছাগল দিয়ে শুরু করে এখন ৪৫টি ছাগলের মালিক মনু বেগম। তিনি বাড়িতে বসেই বছরে লক্ষাধিক টাকা আয় করেন। জীবননগর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান বলেন, আমি তিনটি মা ছাগল দিয়ে শুরু করেছিলাম। এখন আমার খামারে ১২০টি ছাগল আছে। প্রতিমাসে ২ লক্ষাধিক টাকার ছাগল বিক্রি করে থাকি।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গায় ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের উন্নয়নে সরকারি খামারগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সরকারি খামার থেকে সুভল মূল্যে উন্নত জাতের ছাগল ও পাঠা পাওয়া যায়।। জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য মতে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলটি গরিবের গাভী হিসাবে পরিচিত। বর্তমানে চুয়াডাঙ্গায় নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলিয়ে ৬৫৯টি খামার রয়েছে। সেখানে ৫ লক্ষাধিক ছাগল পালন করা হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. শামিমুজ্জামান জানান, সরকার খামারিদের বিশেষ সহায়তা প্রদান করছে। তার মতে এই জেলায় ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের মাংস ও চামড়া বিক্রি করে বছরে প্রায় হাজার কোটি টাকা আয় হচ্ছে। এছাড়া এই ছাগলটি প্রান্তিক পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও পুষ্টির চাহিদা পূরণেও ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে বলেও জানান জেলা প্রাণিসম্পদের এই কর্মকর্তা।